

অবশেষে দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২৫ ডিসেম্বর মাতৃভূমিতে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই ফিরে আসা শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নয়, বরং এটি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের এক নতুন ইতিহাস। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় করে রাখতে এবং তাকে রাজকীয় সংবর্ধনা দিতে রাজধানীর ৩০০ ফিট (পূর্বাচল) এলাকায় তৈরি করা হয়েছে এক সুবিশাল মঞ্চ।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট হাইওয়ে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুড়িল থেকে শুরু করে মঞ্চ এলাকা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি। কোথাও এলাকাভিত্তিকভাবে জটলা বেঁধে স্লোগান চলছে, আবার কোথাও দলবদ্ধ মিছিলের শব্দে মুখর চারপাশ। সব মিলিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। সবার কণ্ঠে ঘুরে ফিরে শোনা যাচ্ছে একটাই স্লোগান— ‘লিডার আসছে’।
স্লোগান, প্ল্যাকার্ড আর নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাসে পুরো এলাকা যেন পরিণত হয়েছে এক বিশাল উৎসবকেন্দ্রে। নেতাকর্মীদের খাবারের চাহিদা মেটাতে পথে পথে হকাররা বিক্রি করছেন নানা ধরনের খাবার ও পানি। কিছু দূর পরপর দেখা যাচ্ছে স্পিকারবাহী ট্রাক, যেখানে বাজছে দলীয় ও দেশাত্মবোধক গান, যা পুরো পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলছে।
এদিকে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ১২টার দিকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনের নিয়মিত ফ্লাইটটি ঢাকার পথে রওনা হয়েছে। সঙ্গে তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান রয়েছেন।
এর আগে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৫ মিনিটে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লন্ডনের নিজ বাসা ত্যাগ করেন তারেক রহমান। বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট বোয়িং ৭৮৭-৬ ড্রিমলাইনার এয়ারবাস পরিচালিত বিজি ২০২ বিজনেস ক্লাসে তারেক রহমানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরাও থাকবেন বলে জানা গেছে।
বুধবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের নেতা বাংলাদেশ বিমানের এক নিয়মিত ফ্লাইটে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে হিথরো বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে আগামীকাল সকালে সিলেটে যাত্রাবিরতি নেবেন। এরপর ঢাকায় অবতরণ করবেন ইনশাআল্লাহ।’
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অভ্যর্থনা জানাবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
এরপর সড়কপথে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তিনি। এই হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন এবং তারেক রহমানের মা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালে যাওয়ার পথে তিনি কুড়িল-পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে এলাকায় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘এটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হবে। সেখানে তিনি দেশবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করবেন।’
সংবর্ধনার পর এভারকেয়ার হাসপাতাল ঘুরে তারেক রহমান গুলশান এভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাসায় যাবেন। সেখানেই তারেক রহমান থাকবেন বলে জানা গেছে।
তারেক রহমানের জন্য সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিএনপির বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পূর্বাচলে ৩০০ ফিট সড়কে যে সংবর্ধনা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে তার চারপাশে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকবে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ কে এম শামছুল ইসলাম। গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দলের পক্ষে থেকে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে।
মন্তব্য করুন