এমপিওভুক্ত ইনডেক্সধারী (নিবন্ধিত) শিক্ষকরা শূন্যপদের বিপরীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের জন্য আলাদা একটি গণবিজ্ঞপ্তি চান। এই দাবিতে রোববার সকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা।
মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেন, আমরা স্বল্প বেতনে ৭০০-৮০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করছি। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে বাড়িতে যেতে পারি না। মৃত্যুর পর সময়মতো বাবা-মায়ের জানাযায় পর্যন্ত যেতে পারি না। বেতন পাই সাড়ে ১২ হাজার টাকা। এই বেতন দিয়ে পরিবার নিয়ে কর্মস্থলে থাকার সুযোগ নেই। ভাষাগত সমস্যার কারণে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হাসির খোরাক হতে হয়। বিশেষ করে নারী শিক্ষকদের স্বামী সংসার রেখে এভাবে দূরে থাকতে গিয়ে অনেকের সংসার ভাঙার উপক্রম হচ্ছে।
তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে পারস্পরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের একটি নীতিমালা করতে যাচ্ছে। তবে এ পদ্ধতিতে শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুফল পাবে না। কারণ, এক জেলার বা বিভাগের শিক্ষকের সঙ্গে আরেক জেলা বা বিভাগের শিক্ষকের মিউচুয়ালি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করা খুবই দুঃসাধ্য কাজ।
শিক্ষকদের দাবি, শূন্যপদের বিনিময়ে সরকার যদি একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেয় তাহলে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনে ইচ্ছুক শিক্ষকরা নিজ উপজেলা বা জেলায় চলে যেতে পারবে। আর শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের পর আরেকটি নতুন গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিবন্ধিত শিক্ষকদের সেসব পদে নিয়োগ দিলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এমন করা সম্ভব হলে তা বদলি পদ্ধতির চেয়ে অনেক সহজ হবে বলে মনে করেন শিক্ষকরা।
মানববন্ধনে মো. বেলাল হোসেন বলেন, আমার বাড়ি দিনাজপুর, তবে কর্মস্থল চাঁদপুরে হওয়ায় সেখানে একলা থাকি। আমি চাঁদপুরের আঞ্চলিক ভাষা বুঝি না। স্বজনদের মধ্যে কেউ মারা গেলে জানাজায় পর্যন্ত যেতে পারি না। না পারছি সন্তানের ভালো বাবা হতে, না পারছি স্ত্রীর ভালো স্বামী হতে, না পারছি বাবা-মায়ের ভালো সন্তান হতে। রংপুর বিভাগ থেকে দক্ষিণবঙ্গে এমন কোনো শিক্ষক খুঁজে পাব না যাকে আমি চাঁদপুরে আমার জায়গায় নিয়োজিত করে রংপুরে চলে যাব। পারস্পরিক বদলি হলে সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ শতাংশ মানুষ সুবিধাভোগী হবে। বাকিরা সুবিধাবঞ্চিতই থাকবে।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমার নিজ জেলা চাঁদপুর, তবে কর্মস্থল গাজীপুর। আমি যখন আবেদন করি, তখন সারাদেশে মাত্র ৬টি পদ ছিল। নিজ জেলায় কোনো পদ তখন ছিল না। সে কারণে বাধ্য হয়ে দূরের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হয়েছে। দূরে থাকতে থাকতে আমার মতো অনেক নারী শিক্ষক সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন। অনেকের বিয়ে হচ্ছে না আবার অনেকের সংসার ভেঙে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পারস্পরিক বদলি ফলপ্রসু হবে না, কারণ প্রার্থী পাওয়া যাবে না। সে কারণে আমরা শূন্যপদের বিপরীতে বদলি নীতিমালা চাচ্ছি।
মন্তব্য করুন