বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহিত এবং অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের আবাসিক হলে থাকার বিষয়ে বৈষম্যমূলক বিধান ও নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক সিভিল সোসাইটি ফোরাম (সিএসও ফোরাম)।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) এক সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে এ দাবি জানায় তারা।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের বিবাহিত এবং অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘আবাসিকতা লাভ ও বসবাসের শর্তাবলি এবং আচরণ ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা ২০২১' এর ১৭নং ধারা অনুযায়ী বিবাহিত এবং অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীরা আবাসিক সিট পাবে না'। সিএসও ফোরাম মনে করে এই বিধান ও নির্দেশনা নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক।
সিএসও ফোরামের বিবৃতিতে বলা হয়, যেখানে বাংলাদেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনসমূহে নারীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্য নিরসন সনদে (সিডও) শিক্ষাঙ্গনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে আবাসিক হলে ছাত্রীদের বসবাসের ক্ষেত্রে এরূপ বৈষম্যমূলক বিধান ও তার প্রয়োগ খুবই উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়। আমাদের মতে, এই বৈষম্য মূলক বিধিমালা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯ (৩)-(সুযোগের সমতা), অনুচ্ছেদ ২৭- (আইনের দৃষ্টিতে সমতা) এবং অনুচ্ছেদ ২৮- (লিঙ্গ বৈষম্য বিলোপ) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি বাংলাদেশের জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা এবং নিরাপদ মাতৃত্ব ঘোষণাপত্রসহ নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল অঙ্গীকারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
সিএসও ফোরাম মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার ক্ষেত্রে এ ধরনের লিঙ্গবৈষম্যমূলক নীতির চর্চা শুধু বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের হলে বসবাসের অধিকার থেকেই শুধু বঞ্চিত করবে না বরং তাদের শিক্ষালাভের মৌলিক অধিকারকে সংকুচিত করবে এবং তাদের জীবনের ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিবৃতিতে বিবাহিত বা অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীদের প্রতি সকল ধরনের বৈষম্যবিবর্জিত সংশোধিত বিধিমালা প্রণয়ন এবং আবাসিক হলে প্রসূতিকালীন প্রয়োজনীয় সকল সেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়।
সিএসও ফোরাম হলো, আইন ও সালিশকেন্দ্র, ব্লাস্ট, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইসিডিডিআরবিসহ ১৯টি সংস্থার একটি সম্মিলিত ফোরাম। বাংলাদেশে নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এই ফোরাম।
মন্তব্য করুন