ভুয়া পদ ব্যবহার করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদুল ইসলাম নোমানের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সদ্য বিদায়ী কমিটির সহসম্পাদক হলেও পরিচয় দেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি হিসেবে।
সম্প্রতি এই ভুয়া পদবি ব্যবহার করে তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলাবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ নিয়ে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের মধ্যে চলছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কমিটি বর্ধিত করে। এসময় ৬৮ জন সদস্যকে নতুন করে পদায়ন করা হয়। সেই কমিটিতে নোমান সহসম্পাদক পদ পান। এ ছাড়া ২০২২ সালের ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিত করে উপসম্পাদক, সহসম্পাদকসহ অসংখ্য কর্মীকে চিঠির মাধ্যমে পদায়ন করলেও মাত্র কয়েকজন ব্যক্তিকে সহসভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাবেক কমিটির শীর্ষ নেতারা।
ওই সময়েও নোমানকে সহসভাপতি পদ দেওয়া হয়নি। তবে, অনেক নেতাকর্মী ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর নকল করে প্যাড বানিয়ে বড় পদে নিজেদের নাম বসিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। এ ঘটনায় অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ওই সময়ে ব্যবস্থাও নিয়েছে জয়-লেখক। তবে সম্মেলনের আগের রাতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য কালবেলাকে বলেন, অব্যাহতি দেওয়ার সময় যে কয়টি সহসভাপতি পদ খালি হয়েছিল সেগুলো পূরণ করা হয়েছে। এ সময় দুই থেকে তিনজনকে সহসভাপতি পদ দেওয়া হয়। এসময় নোমানকে সহসম্পাদক পদ দেওয়া হয়। পরে তাকে আর কোনো পদ দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাহী সংসদের বাইরে সহসভাপতি পদ দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রথম কিছু পদ শূন্য হলে আমরা সেগুলো পূরণ করেছি। আবার শেষে যখন চিঠি দেওয়া হয়েছে তখন কিছু সহসভাপতি বিয়ে করার কারণে যে দুই তিনটি পদ শূন্য হয়েছে সেগুলো পূরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আর কাউকে সহসভাপতি দেওয়া হয়নি।
এদিকে ভুয়া পদ ব্যবহার করে নিজ এলাকায় ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন জাহিদুল ইসলাম নোমান। এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাইনুল ইসলাম রনো বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পদ পাওয়া প্রতিটি নেতাকর্মীরই স্বপ্ন। সাবেক হওয়ার পরও ছাত্রলীগের এই পরিচয় অনেক গর্বের। তবে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই পদের ভুয়া ব্যবহার নৈতিক স্খলন বলে মনে করি। যা খুবই গর্হিত কাজ।
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের ঔদ্ধত্য নিয়ন্ত্রণে তার বিরুদ্ধে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে তাকে দলের অন্য কোনো পদে পদায়নের ক্ষেত্রে হাইকমান্ডের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে মনে করি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম নোমান কালবেলাকে বলেন, আমি এলাকায় ব্যানার করেছি, পদ-পদবি না পেয়ে ব্যানার করেনি। আমাকে সম্মেলনের আগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বর্তমান কমিটিতেও পদ পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন অভিযুক্ত নোমান। তিনি বর্তমান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন কালবেলাকে বলেন, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যদি কেউ পদ ব্যবহার করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তাকে সাংগঠনিকভাবে বহিষ্কার করব।
মন্তব্য করুন