দেশে ঝরে পড়া গড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর হার ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। তার মধ্যে বাগেরহাটের মোংলায় এই হার ১৮ দশমিক চার শতাংশ। এই অবস্থায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উজ্জ্বল ও সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে মোংলায় ব্যতিক্রম শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে।
আরও পড়ুন : এইচএসসির আগেই ঝরে পড়েছে ৪ লাখ শিক্ষার্থী
উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার সেকেন্ড চান্স কর্মসূচির আওতায় এখানে ‘শিখন কেন্দ্র’ নামে ৩৫টি স্কুল খোলা হয়েছে। উপজেলার একটি পৌরসভায় ও ছয়টি ইউনিয়নে এই স্কুল প্রতিষ্ঠান করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নীড় সেবা সংস্থা। এসব স্কুলে মোট ১০৫০ জন কোমলমতি বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নিয়ে মনোযোগী হয়ে পড়াশোনা করছে। এসব শিক্ষার্থীদের এই স্কুলে দিতে হয় না কোনো বেতন-ফি।
এ সময় কথা হয় উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী রত্না মণ্ডলের সঙ্গে। ওই ছাত্রী জানায়, তার বাবা অপূর্ব মণ্ডল পেশায় একজন জেলে। অভাবের সংসারের কারণে তার বাবা ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়িয়েছে তাকে। এরপর থেকে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। পরে নীড় সেবা সংস্থার গড়া স্কুলে ভর্তি হই। সেখানে কোনো টাকা লাগেনি, বেতনও দিতে হয় না। চিলা ইউনিয়নের মো. আলম ঢালীর মেয়ে খাদিজা আক্তার, সেও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। অভাব আর সংসারের টানাপোড়েনে শিক্ষার আলো থেকে সেও ঝরে পড়েছে। পরে নীড় সেবা সংস্থা তাকে টেনে নিয়ে শিক্ষার জ্ঞান ঢুকিয়েছে। এখন নিয়মিত ক্লাস করে পড়াশোনা করছে খাদিজা।
আরও পড়ুন : ভর্তি জালিয়াতিতে কোটিপতি প্রকৌশলী সামসুল আলম
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সরকারের রুপকল্প ২০২১ ও জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ‘মান সম্মত সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা’ (এসডিজি-২০৩০) অর্জনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি শক্তিশালী করার মানসে একযোগে কাজ চলছে।
এদিকে এই কাজের অংশীদার হয়ে তা বাস্তবায়নে ‘শিশুর হাসি, শিশুর খুশি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শিক্ষার আলো থেকে ঝরে পড়া শিশুদের জন্য নতুন কার্যক্রম চালু করেছে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থা। উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার সেকেন্ড চান্স কর্মসূচির আওতায় নীড় সেবা সংস্থা নামে উন্নয়ন সংস্থাটি মোংলা উপজেলায় ৩৫টি স্কুলে খুলেছে। এর মধ্যে পৌরসভায় ১১, উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নে ১১, চিলা ইউনিয়নে ৭ ও সুন্দরবন ইউনিয়নে ৬টি স্কুল চালু রয়েছে।
নীড় সেবা সংস্থার মোংলা উপজেলার প্রোগ্রাম ম্যানেজার লিপি ধূনী সোমবার (২৪ জুলাই) বেলা ১১টায় মোংলা প্রেস ক্লাব হল রুমে আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগাম বাস্তবায়নের ইতিবৃত্ত ও বর্তমান অবস্থা উপস্থাপন বিষয়ক সভায় সাংবাদিকদের জানান, নানা কারণে মোংলা উপজেলায় শিক্ষার জ্ঞান থেকে অনেক শিশু শিক্ষার্থী ছিটকে পড়ে। এসব শিশুদের শিক্ষার মূল ধারায় নিয়ে আসতে ২০২২ সাল থেকে কাজ করছেন। ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে এসব শিশুদের জন্য ৩৫টি স্কুল খুলে তাদের জীবনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই স্কুলে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা এখন ১ হাজার ৫০ জন। তাদেরকে বিনামূল্যে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতা জ্ঞান প্রদান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরী ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত ও আত্ন কর্মসংস্থানের যোগ্যতা সৃষ্টিকরণই তাদের মূল লক্ষ্য।’
মোংলা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহীনুর রহমান বলেন, উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয় বহির্ভূত (ঝরে পড়া এবং ভর্তি না হওয়া) ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদেরকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মূলধরায় নিয়ে আসায় নীড় সেবা সংস্থা নিসন্দেহে একটি প্রশাংসামূলক কাজ করে চলছেন। তাদের এই ব্যতিক্রম কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা শতভাগ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন