

জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিনে শুয়ে আছেন ‘আপোষহীন নেত্রী’ খ্যাত বেগম খালেদা জিয়া। সামনে কফিনবাহী গাড়ি, আর ঠিক পেছনেই লাল-সবুজ রঙের একটি বাসে বসে মায়ের শেষ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমান এবং প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে গুলশানের বাসভবন থেকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মরদেহ জানাজার জন্য জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় নেওয়া হয়। এ সময় রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে হাজারো জনতা অশ্রুসজল চোখে তাদের প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানান।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।
মায়ের কফিনের পাশে শোকার্ত তারেক দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে মায়ের মৃত্যুশোক সইতে হচ্ছে তারেক রহমানকে। সংসদ ভবনের উদ্দেশ্যে যাওয়া গাড়িবহরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্বজনরাও উপস্থিত রয়েছেন। সেখানে জানাজা শেষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে বেগম জিয়াকে।
রাজনীতির মাঠের পাশাপাশি বেগম জিয়ার বিদায়ে শোকস্তব্ধ দেশের বিনোদন জগতও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তারকারা। নির্মাতা ও প্রযোজক এমডি ইকবাল ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “আপোষহীন নক্ষত্রের মহাপ্রয়াণ। শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।”
তিনি আরও লেখেন, “মহান আল্লাহতায়ালা যেন আপনাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করেন। আমিন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি রইল আমার গভীর সমবেদনা।”
অসুস্থতা ও শেষ দিনগুলো দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা ও ডায়াবেটিসসহ নানা বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডনে নেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। তবে গত ২৩ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে পুনরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক মাসের বেশি সময় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মঙ্গলবার ভোরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।
সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অটল ভূমিকার জন্য খালেদা জিয়া দেশের মানুষের কাছে ‘দেশনেত্রী’ ও ‘আপোষহীন’ উপাধিতে ভূষিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন