জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্য উৎসব শেষ হয়েছে। শুক্রবার (৮ আগস্ট) জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে জমকালো সমাপনী আয়োজনের মাধ্যমে এ উৎসব সমাপ্ত হয়।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে মনসুন রেভ্যুলেশনের চেতনা ও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের অনুপ্রেরণায় সাজানো হয়েছিল ৯ দিনব্যাপী এ নাট্যোৎসব।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। সঞ্চালনা করেন নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির।
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান শুধু রাজনৈতিক দাবিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ছিল জাতির নৈতিক পুনর্জাগরণ ও মানবিক ভবিষ্যতের অঙ্গীকারের প্রতিধ্বনি। সেই সময়ের আত্মত্যাগ, প্রতিবাদ ও প্রতিজ্ঞা এবার নাট্যমঞ্চে ফিরে এসেছে নতুন ভাষায়— যেখানে সংলাপ উচ্চারণ করেছে প্রত্যয়ের কথা, দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছে ইতিহাসের অন্তর্জীবন, আর মঞ্চ হয়ে উঠেছে প্রতীকী রাজপথ।
৩১ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত এই উৎসবে দেশের ১১টি খ্যাতনামা নাট্যদল মঞ্চস্থ করেছে ১১টি ভিন্নধর্মী নাটক, যেগুলো নির্মিত হয়েছে ২০২৪ সালের আন্দোলন ও সমকালীন সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে। প্রায় ৩০০ জনের বেশি মঞ্চকর্মী এতে অংশ নিয়েছেন।
৩১ জুলাই: রি-রিভোল্ট – পরিকল্পনা ও নির্দেশনা: নায়লা আজাদ, পরিবেশনা: টিম কালারস।
১ আগস্ট: শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল – রচনা ও নির্দেশনা: দীপক সুমন, পরিবেশনা: তিরন্দাজ রেপার্টরি দেয়াল জানে সব – রচনা ও নির্দেশনা: শাকিল আহমেদ সনেট, পরিবেশনা: স্পন্দন থিয়েটার সার্কেল।
২ আগস্ট: দ্রোহের রক্ত কদম – রচনা ও নির্দেশনা: ইরা আহমেদ, পরিবেশনা: এথেরা। ৩ আগস্ট: 404: নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি – রচনা ও নির্দেশনা: মো. লাহল মিয়া, পরিবেশনা: ফোর্থ ওয়াল থিয়েটার।
৪ আগস্ট: এনিমেল ফার্ম – নাট্যরূপ: নজরুল সৈয়দ, নির্দেশনা: সাইদুর রহমান লিপন, পরিবেশনা: রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়।
৫ আগস্ট: আর কত দিন – নির্দেশনা: খন্দকার রাকিবুল হক, পরিবেশনা: অন্তর্যাত্রা। অগ্নি শ্রাবণ – রচনা ও নির্দেশনা: ইলিয়াস নবী ফয়সাল, পরিবেশনা: ভৈরবী।
৬ আগস্ট: মুখোমুখি – রচনা ও নির্দেশনা: ধীমান চন্দ্র বর্মণ, পরিবেশনা: থিয়েটার ওয়েব।
৭ আগস্ট: ব্যতিক্রম এবং নিয়ম (Exception and the Rule) – রচনা: বার্টোল্ট ব্রেখট, অনুবাদ: শহীদুল মামুন, নির্দেশনা: আজাদ আবুল কালাম, পরিবেশনা: প্রাচ্যনাট।
সমাপনী নাটক – আগুনি
উৎসবের পর্দা নামে কাজী নওশাবা আহমেদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ‘টুগেদার উই ক্যান’-এর প্রযোজনা আগুনি মঞ্চায়নের মাধ্যমে। নাটকে দেখা যায় রাজকন্যা নন্দিনীর কাহিনি—যে সত্য ও সুন্দরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তিরস্কৃত হলেও অবশেষে হয়ে ওঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের কণ্ঠস্বর। কৃষকের কান্না, শিশুর আর্তনাদ, প্রকৃতির মৃত্যু আর যুদ্ধের অন্ধতার বিরুদ্ধে সে খুঁজে ফেরে আলো, বিলায় ভালোবাসা এবং গেয়ে ওঠে মুক্তির জয়গান।
‘আগুনি’ এক রূপক যাত্রা—যেখানে রাজনীতি, প্রতিবাদ, স্বপ্ন ও কল্পনা একসাথে হাঁটে। নন্দিনীর সুরে সুর মিলিয়ে বিশু পাগলা, কিশোর, রঞ্জনসহ অনেকে গড়ে তোলে রূপক বিপ্লব, ঘটে অন্তর্জাগরণ, জেগে ওঠে নতুন পৃথিবীর বীজ।
নাটকে অভিনয় করেছেন কাজী নওশাবা আহমেদ, বর্ষা, অয়নিকা, মীম, তৌনিক, শুভ, আবদুল্লাহ, সৌরভ, জান্নাতি, ভূপেন, তাসনিয়া, জামিল, জেমস, রায়হান, জিহাদ, সিফাত, তাহমিদ, এনামুল, শাহরিয়ার, সৌমিত্র, হীরু, এস বি সুমন, শহিদুল, নাহাদ, রাসেল, আবীর, বাপন, বিথী, আফিয়া ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জুলাই যোদ্ধারা।
নেপথ্যে কলাকুশলীদের মধ্যে ছিলেন—রচনা: হাসান রুবায়েত ও এজাজ ফারাহ; সংগীত: গোপী দেবনাথ, নীল, এজাজ ফারাহ ও অভিষেক ভট্টাচার্য; নৃত্য: তন্ময়; শিল্পনির্দেশনা: জিহান করিম ও চয়ন দাস; পাপেট ডিজাইন: চয়ন দাস; পোশাক পরিকল্পনা: আফসানা শারমিন ঝুমপা ও ফারজানা আহমেদ উর্মি; পোস্টার ডিজাইন: মোর্শেদ মিশু; সহকারী পরিচালক: অনীক চৌধুরী, এস.বি. সুমন ও কাওসার রিফাত; এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর: ডা. অমিত সিনহা।
মন্তব্য করুন