বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় এক নতুন আশার কথা জানালেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাইক রাউলি ও তার সহকর্মীরা। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, বিশেষ কিছু ডুমুরগাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে সেটিকে স্থায়ীভাবে পাথরে অর্থাৎ ক্যালসিয়াম কার্বোনেটে রূপান্তর করতে পারে।
গবেষকরা পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়ার সামবুরু কাউন্টিতে তিনটি ভিন্ন প্রজাতির ডুমুরগাছ নিয়ে এই গবেষণা চালান। এতে দেখা গেছে, গাছগুলো শুধু শিকড় বা পাতায় নয়; বরং কাঠের গভীর স্তর ও আশপাশের মাটিতেও ক্যালসিয়াম কার্বোনেট জমা রাখছে। এর ফলে কার্বন দীর্ঘদিন ধরে মাটিতে সংরক্ষিত থাকে এবং বাতাসে ফেরত যায় না।
প্রকৃতপক্ষে, গবেষকরা গাছের কাঠে হালকা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ছিটিয়ে বুদ্বুদের মাধ্যমে নিশ্চিত হন সেখানে কার্বনেট রয়েছে। দেখা যায়, গাছের গভীরে চুনাপাথর ও চক তৈরি হয়েছে। এমনকি আশপাশের মাটিতেও মিলেছে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের উপস্থিতি।
গবেষণা দলের প্রধান রাউলি বলেন, আমরা ধারণা করেছিলাম, এই প্রক্রিয়া গাছের পৃষ্ঠতলে সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, কাঠের গভীর স্তরেও এই পরিবর্তন হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের প্রক্রিয়ায় বাতাসের অতিরিক্ত কার্বন গাছের দেহ ও মাটিতে স্থায়ীভাবে আটকে যায়। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায় এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এটি অক্সিজেন ও কার্বনের প্রাকৃতিক চক্রেরও অংশ।
গবেষকরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হারে এ ধরনের গাছ রোপণ করা গেলে পরিবেশ সুরক্ষায় নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। শুধু পরিবেশ নয়, ডুমুরগাছ খাদ্যের উৎস হিসেবেও মানুষের উপকারে আসে। ফলে এটি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সহায়ক হতে পারে।
তবে গবেষকরা সতর্ক করে জানাচ্ছেন, এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে আরও গবেষণা ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণের ওপর। বিশেষ করে জলবায়ু, পানি ব্যবস্থাপনা ও গাছের জীবনীশক্তি—সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তবুও, বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। প্রকৃতিনির্ভর এই সমাধান জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এক নতুন দিশা দেখাতে পারে।
তথ্যসূত্র : নিউ সায়েন্টিস্ট
মন্তব্য করুন