যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার সাজা আগামী ১৬ জুলাই কার্যকর হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তাকে মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একদল সমাজকর্মী ও ভারতীয় নাগরিক।
৩৪ বছর বয়সী এই নার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৭ সালে তার সাবেক ব্যবসায়িক অংশীদার তালাল আবদো মাহদিকে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করে মরদেহ খণ্ডিত করে একটি পানির ট্যাঙ্কে ফেলে দেন। ওই বছরই মাহদির দেহাবশেষ উদ্ধারের পর ইয়েমেনের রাজধানী সানায় প্রিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রিয়া অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। আদালতে তার আইনজীবীর দাবি, মাহদি তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন, টাকা ও পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছিলেন, এমনকি বন্দুক দেখিয়ে হুমকিও দেন। পাসপোর্ট উদ্ধারের উদ্দেশ্যে মাহদিকে অজ্ঞান করার চেষ্টা করেন প্রিয়া, কিন্তু ভুলবশত ওষুধের মাত্রা বেশি হয়ে যাওয়ায় তিনি মারা যান।
২০২০ সালে স্থানীয় একটি আদালত নিমিশা প্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তার পরিবার ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলেও ২০২৩ সালে সেটি খারিজ হয়ে যায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হুতি বিদ্রোহী সরকারের সর্বোচ্চ পরিষদের সভাপতি মাহদি আল মাশাত আনুষ্ঠানিকভাবে এই মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেন।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিমিশা প্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচানোর এখনো একটি সুযোগ রয়েছে। ইয়েমেনের ইসলামিক বিচার ব্যবস্থায় ‘দিয়াহ’ বা রক্তমূল্য দিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ রাখা আছে। এটিই এখন প্রিয়াকে বাঁচানোর একমাত্র উপায়।
এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’ নামে একটি সংগঠন গঠিত হয়েছে, যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিং করছে এবং অনলাইনে ক্রাউডফান্ডিং করে ১০ লাখ ডলার সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। এই অর্থই মাহদির পরিবারের কাছে রক্তমূল্য হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সংগঠনটির এক সদস্য বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘আমরা এখনো মাহদির পরিবারের কাছ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। তারা ক্ষমা করবেন কি না, বা আরও কিছু চাইছেন কি না, সেটিই এখন মূল প্রশ্ন।’
নিমিশার মা, যিনি কেরালার একজন দরিদ্র গৃহকর্মী, ২০১৪ সাল থেকেই ইয়েমেনে অবস্থান করছেন। মেয়েকে বাঁচাতে তিনি মাহদির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আলোচনার জন্য ইয়েমেনভিত্তিক সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোমকে মনোনীত করেছেন।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছে এবং কূটনৈতিকভাবে কী করা যায়, তা নিয়ে বিবেচনা করছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন মাহদির পরিবারের ওপরই নির্ভর করছে—তারা প্রিয়াকে ক্ষমা করবে কি না।
মন্তব্য করুন