দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে বিশেষত পদ্মার চরাঞ্চল, নদী অববাহিকা ও বরেন্দ্র এলাকায় উঁচু-নিচু ঘাস বা ফসলের জমিতে এই সাপটি বেশি দেখা যায়। তবে বিগত কয়েক বছরে সাপটি দেশের নদী বিধৌত বেশ কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
জোহরা মিলা বলেন, ‘এই সাপটি কোনো নির্দিষ্ট আবাসস্থলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, এবং যদিও এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খোলা, ঘাসযুক্ত বা ঝোপঝাড় এলাকায় পাওয়া যায়। তবে এটি বনে, আবাদী এবং কৃষিজমিতেও দেখা যেতে পারে।
এটি ঘন বন এড়িয়ে চলে এবং সমভূমি, উপকূলীয় নিম্নভূমি এবং পাহাড়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই প্রজাতিটি প্রায়ই গ্রামাঞ্চলে বসতির আশেপাশে পাওয়া যায়, যেখানে ইঁদুরের বিস্তার বেশি।
অন্যান্য সাপের তুলনায় এই সাপের বংশবিস্তারের হারও বেশি। প্রজাতিভেদে বাংলাদেশের রাসেল ভাইপার ৬-৬৩টি বাচ্চা প্রসব করে।’
তিনি বলেন, দুই দশক আগেও রাসেল ভাইপার খুব একটা দেখা যেত না, কিন্তু গত এক দশকে এই সাপের সংখ্যা বা বিস্তার বেশ বেড়েছে।
তার ধারণা, রাসেল ভাইপার স্থলজ সাপ হলেও অনেকক্ষেত্রে এটি বন্যার পানিতে বা কচুরি পানায় ভাসতে ভাসতে বহুপথ অতিক্রম করতে পারে। বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চল থেকে সাপটি হয়তো এভাবেই পদ্মা নদী অববাহিকার জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিককালে ফসলের বিশেষ করে ধানক্ষেতে রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি নিয়ে জোহরা মিলা বলেন, ‘ইঁদুর, ব্যাঙ, ছোট পাখি ও টিকিটিকি রাসেল ভাইপারের প্রিয় খাবার।
যেহেতু ফসলের ক্ষেতে ইঁদুরের উৎপাত বেশি তাই খাবারের খোঁজে সেখানে গিয়ে হাজির হয় রাসেল ভাইপার।’
‘এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ঝোপঝাড়ের পরিমাণও কমে গেছে। ফলে অনেক সময় বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ ও পর্যাপ্ত খাবার পেয়ে ফসলের ক্ষেতের আশেপাশেই আবাস গড়েছে এই সাপ; বংশবিস্তার করছে। কৃষকরা যেহেতু ফসলের ক্ষেতেই কাজ করেন তাই তারাই বেশি রাসেল ভাইপারের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।’
‘তাছাড়া বসতবাড়ির আশপাশেও ইঁদুর ও টিকটিকি প্রাচুর্যতা বেশি থাকায় খাবারের খোঁজে রাসেল ভাইপার অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে এবং মানুষকে দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আক্রমণ করে বসে’, বলেন তিনি।
আইইউসিএনের ২০১৫ সালের লাল তালিকা অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে প্রায় হুমকিগ্রস্ত প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী সাপটি রক্ষিত প্রাণী বলেও জানান এই বন্যপ্রাণী গবেষক ও বন কমকর্তা।
মন্তব্য করুন