বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি নারী বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন। অনেক সময় দেখা যায়, গর্ভধারণে অসুবিধা হলেও এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো আমরা গুরুত্ব দিই না। অথচ অনিয়মিত মাসিক, ব্যথাযুক্ত সহবাস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা কিংবা তলপেটের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার মতো লক্ষণগুলো আগেভাগে শনাক্ত করতে পারলে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
চিকিৎসা জার্নাল স্ট্যাটপিয়ার্লস-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের বন্ধ্যত্বের প্রায় ২৫ শতাংশের পেছনে রয়েছে ডিম্বস্ফোটনজনিত সমস্যা (ovulatory disorder)। তাই মাসিকের নিয়ম, হরমোন পরিবর্তন এবং শারীরিক অস্বস্তির মতো বিষয়গুলোর প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক নারীই মাসিক অনিয়ম, হরমোনের ওঠানামা বা তলপেট ব্যথাকে সাময়িক সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করেন। কিন্তু এগুলো অনেক সময় গভীর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। যেমন : পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), এন্ডোমেট্রিওসিস, থাইরয়েড সমস্যা বা প্রজনন অঙ্গের সংক্রমণ। এসব কারণেই গর্ভধারণে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
আগেভাগে এসব লক্ষণ সম্পর্কে জানা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া শুধু সন্তান ধারণের সম্ভাবনাই বাড়ায় না, বরং নারীর সামগ্রিক প্রজনন ও হরমোনজনিত সুস্থতাও নিশ্চিত করে।
নারীদের বন্ধ্যত্বের সাধারণ ৬টি লক্ষণ
১. অনিয়মিত বা মাসিক বন্ধ থাকা
নিয়মিত মাসিক চক্র ডিম্বস্ফোটনের (ovulation) জন্য অপরিহার্য। মাসিকের ব্যবধান যদি ২১ দিনের কম বা ৩৫ দিনের বেশি হয়, কিংবা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়; তাহলে এটি ডিম্বস্ফোটনজনিত সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
সম্ভাব্য কারণ : পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) বা থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
২. সহবাসে ব্যথা অনুভব করা
যদি সহবাসের সময় বা পরে অস্বাভাবিক ব্যথা হয়, তবে এটি প্রজনন অঙ্গের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
সম্ভাব্য কারণ : এন্ডোমেট্রিওসিস, ফাইব্রয়েড বা পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ (PID)। এসব সমস্যা সময়মতো চিকিৎসা না পেলে গর্ভধারণে জটিলতা তৈরি করে।
৩️. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
অকারণে ওজন বাড়া বা কমে যাওয়া, অতিরিক্ত লোম গজানো, ব্রণ, ঘুমের সমস্যা—এসবই হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ হতে পারে।
প্রভাব : হরমোনের পরিবর্তন ডিম্বস্ফোটন ও মাসিক চক্রকে ব্যাহত করে, ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়।
৪. তলপেটে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
নিয়মিত তলপেট বা কোমরে ব্যথা থাকা অনেক সময় এন্ডোমেট্রিওসিস বা ফাইব্রয়েডের লক্ষণ হতে পারে। এসব অবস্থায় জরায়ু বা ফলোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা গর্ভধারণে বাধা দেয়।
৫️. অতিরিক্ত ওজন বা ওজন কমাতে সমস্যা
অতিরিক্ত ওজন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। মোটা নারীদের মধ্যে PCOS-এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়, যা ডিম্বস্ফোটনে প্রভাব ফেলে। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত রোগা শরীরেও হরমোনের অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, যা প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৬️. অস্বাভাবিক স্রাব বা বারবার ইনফেকশন
অস্বাভাবিক স্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, বা বারবার যোনিপথে সংক্রমণও প্রজনন অঙ্গের জটিলতার ইঙ্গিত দেয়। এসব সংক্রমণ জরায়ু বা ফলোপিয়ান টিউবে প্রদাহ তৈরি করে, যা বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়।
আগেভাগে সচেতনতা জরুরি
যে কোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনলে বন্ধ্যাত্বের জটিলতা অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন