থাইরয়েড সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে রাজধানীতে তিন দিনব্যাপী থাইরয়েড মেলার আয়োজন করেছে ‘দি থাইরয়েড সেন্টার ও বিটমির’। এ মেলায় ৫০০ টাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া দরিদ্র ও এক বছরের কম বয়সী শিশুদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে রাজধানীর ‘দ্য থাইরয়েড সেন্টারে’র সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসের (নিনমাস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল বারী।
এ সময়ে তিনি বলেন, জনসচেতনতা তৈরি করার লক্ষ্যে দি থাইরয়েড সেন্টার লিমিটেড ও বিটমির ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে থাইরয়েড মেলার আয়োজন করে আসছে। তিন দিনের মেলায় প্রায় দুই হাজার থাইরয়েড রোগী বিনামূল্যে ও কম মূল্যে সেবার ব্যবস্থা করা হবে।
মেলার উদ্বোধন শেষে সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসাকরা জানান, জীবনে চারটি সময়ে অবশ্যই থাইরয়েড স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন। প্রথমত জন্মের পরপরই, দ্বিতীয়ত বয়ঃসন্ধিকালে, এ ছাড়াও মায়েদের গর্ভধারণের পূর্বে ও বয়স ৪০ হওয়ার পরপর থাইরয়েড স্ক্রিনিং প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে রোগী ও রোগীর স্বজনদের থাইরয়েড রোগ সর্ম্পকে সচেতন করেন।
মেলায় ৫০০ টাকা ভিজিটে থাইরয়েড বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগী দেখবেন। ৩ হাজার ৫০০ টাকায় থাইরয়েড চেকআপ (রক্ত, আল্ট্রাসনোগ্রাম এবং ব্লাডগ্রুপিং)। এক বছরের কম বয়সী শিশুদের বিনামূল্যে থাইরয়েড চেকআপ। কম মূল্যে থাইরয়েড ক্যান্সার চিকিৎসা, ২৫ শতাংশ কম মূল্যে এলাস্ট্রস্কান করা হবে। এছাড়াও ২৫ শতাংশ কম মূল্যে থাইরয়েডগ্রন্থি গয়টার/টিউমার/ক্যান্সারের রেডিওফ্রিকুয়েন্সি, লেজার ও রোথেরাপী করা হবে।
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল বারী বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ কোন না কোন থাইরয়েড রোগে ভুগছেন। থাইরয়েড আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনেই নারী। প্রতি ২ হাজার ৩০০ শিশুর মধ্যে একজন জন্মগত থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছে। এ সকল আক্রান্ত ব্যক্তির ৬০ শতাংশই চিকিৎসা সেবার আওতায় নেই।
তিনি বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে থাইরয়েড রোগ বিস্তারে বংশগতির প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে দাদি, নানি বা মা এদের থাইরয়েডে সমস্যা থাকলে ৭০ শতাংশর ক্ষেত্রে শিশুদের ও আত্মীয়স্বজনদের থাইরয়েড সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আট শতাংশ রোগী সাব-ক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরোডিসম-এ ভুগছে, যার অধিকাংশই তাদের থাইরয়েড আছে তা জানে না।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, থাইরয়েড রোগ ছোঁয়াচে নয়। থাইরয়েড সমস্যা নিয়মিত চিকিৎসায় রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে চিকিৎসার না নিলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। যদি হঠাৎ ওজন বেড়ে যায় বা কমে যায়, অতিরিক্ত ঘাম হয়, শীত বা গরম অসহ্য লাগে, শরীর ব্যথা করে, চুল পড়ে যায়, ত্বকের সমস্যা থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে থাইরয়েডের ঝুঁকিতে আছেন। এছাড়াও যদি বুক ধড়ফড় বা হাত/পা কাঁপে, গলার স্বর বসে যায়, পাতলা পায়খানা হয়, শারীরিক দুর্বলতা থাকে, নিঃসন্তান দম্পতি বা বারবার গর্ভপাত হয়, অনিয়মিত/কম/বেশি মাসিক হয়, তাহলে অবশ্যই থাইরয়েড পরীক্ষা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিটমির সিনিয়র শিক্ষক ডা. সোনিয়া ফেরদৌস ও ডা. শায়লা পারভীন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন