অনেকে মনে করেন, শুধু বেশি মিষ্টি খাওয়াই ডায়াবেটিসের মূল কারণ। যদিও চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস ধরা পড়লে মিষ্টি কম খাওয়ার পরামর্শ দেন, আসলেই কি শুধু মিষ্টি দায়ী? আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, বিষয়টি এতটা সরল নয়। আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের কিছু সাধারণ অভ্যাস, যেগুলোর দিকে আমরা হয়তো খুব একটা গুরুত্ব দিই না, সেগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।
সুস্থ থাকতে হলে শুধু খাবারে নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং ঘুম, মানসিক চাপ, দৈনন্দিন চলাফেরা- সবকিছুতেই ভারসাম্য রাখতে হবে। ভারতীয় কয়েকটি স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসের কথা, যেগুলো অজান্তেই রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন : ঘুমের মধ্যে ঘামছেন, ক্যানসারের লক্ষণ নয়তো
চলুন জেনে নিই এমন ৫টি অভ্যাস যা অবহেলা করলে ডায়াবেটিস শরীরে বাসা বাঁধতে পারে :
১. সকালের নাশতা এড়িয়ে যাওয়া
অনেকেই সকালে তাড়াহুড়োর কারণে নাশতা না করেই অফিস বা কাজে বেরিয়ে যান। কিন্তু খালি পেটে দীর্ঘ সময় থাকলে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে। এটি একসময় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই যতই ব্যস্ততা থাকুক, পুষ্টিকর সকালের খাবার গ্রহণ করা জরুরি।
২. পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
চলমান ব্যস্ত জীবনে ঘুম যেন বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের হরমোন ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটায়, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়াতে পারে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা উচিত, বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন।
৩. দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা
ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডেস্কে বসে থাকা আমাদের আধুনিক জীবনের বড় বাস্তবতা। কিন্তু শরীরচর্চার অভাব এবং দীর্ঘসময় এক জায়গায় বসে থাকাও ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। প্রতি ঘণ্টায় অন্তত কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করা উচিত। এছাড়া নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকর।
৪. ধূমপান করা
ধূমপানের কুফল নিয়ে অনেকেই জানেন, কিন্তু ডায়াবেটিসের সঙ্গে এর সরাসরি যোগ রয়েছে- তা অনেকেই জানেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ধূমপান ইনসুলিন প্রতিরোধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা ধীরে ধীরে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের দিকে ঠেলে দেয়। তাই ধূমপান ছাড়ার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
৫. অতিরিক্ত মানসিক চাপ
অতিরিক্ত স্ট্রেস শরীরে করটিসল নামক হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ এক সময় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই চাপ কমাতে নিয়মিত মেডিটেশন, যোগব্যায়াম কিংবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানো সহায়ক হতে পারে।
আরও পড়ুন : হাত-পায়ে ঝিঁঝি ধরা কি বড় কোনো সমস্যার ইঙ্গিত
আরও পড়ুন : যে ৫ কারণে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ঘটে
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কেবল খাবার নিয়ন্ত্রণ করলেই চলবে না, প্রতিদিনের অভ্যাসগুলোতেও আনতে হবে ইতিবাচক পরিবর্তন। সময়মতো খাওয়া, ঘুম, ব্যায়াম ও মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা- এই সবকিছু মিলেই শরীরকে ডায়াবেটিসমুক্ত রাখার সুরক্ষা দেয়।
মন্তব্য করুন