জন্মসনদ থাকুক বা না থাকুক, কোনো অজুহাতে একটি শিশুও যেন বাদ না যায়—সেই নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫-এর জাতীয় অ্যাডভোকেসি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ডায়রিয়া ও রাতকানার মতো অনেক প্রতিরোধযোগ্য রোগ আমরা সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। তবু আজও দেশের শিশুরা টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় কিংবা স্থায়ী অঙ্গহানির শিকার হয়—এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক ও লজ্জার। কারণ টাইফয়েড কোনো জটিল বা অজানা রোগ নয়; এটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। দেরিতে হলেও আমরা টাইফয়েডের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছি। আমি আশাবাদী, এবারও আমরা সফল হতে পারব।
তিনি বলেন, টাইফয়েড এমন এক রোগ যা অল্পবয়সী শিশুদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। কিন্তু অধিকাংশ পরিবার এখনো এর গুরুত্ব বোঝে না, এমনকি অনেকেই জানে না যে টাইফয়েডের টিকা এখন দেশে সহজলভ্য। এটি আমাদের সচেতনতা ও যোগাযোগের ঘাটতির পরিচায়ক। তাই টিকা নিয়ে যেন কেউ ভয় বা বিভ্রান্তিতে না থাকে, সে বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। স্কুল, মসজিদ ও কমিউনিটি সেন্টারসহ সব জায়গায় এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।
জনসচেতনতা বাড়াতে সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, এটা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। ইমাম, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী—সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মিডিয়াও এই উদ্যোগে আমাদের বড় সহযোগী হতে পারে। স্বাস্থ্য খাত একা সফল হতে পারে না; সামাজিক সহযোগিতাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শতভাগ শিশুর টিকাদান নিশ্চিত করা- যেন কোনো শিশু বাদ না যায়। কারণ, একটি শিশু বাদ পড়া মানে একটি পুরো পরিবার ঝুঁকিতে থাকা। জন্মসনদ থাকুক বা না থাকুক, কোনো অজুহাতে কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। গৃহকর্মী, বস্তির শিশু—সব শিশুকেই টিকার আওতায় আনতে হবে।
টিকাদান কার্যক্রমে জটিলতা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, টাইফয়েডের টিকা নিতে যেন কেউ প্রশাসনিক ঝামেলায় না পড়ে। এই টিকা সবার জন্য সহজলভ্য, বিনামূল্যে ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। মানুষকে বুঝাতে হবে—এটি কোনো বিলাসিতা নয়, এটি জীবনের নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।
এ সময় স্বাস্থ্যের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের সবচেয়ে সফল উদ্যোগ হলো জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি। আশা করছি, শিগগির টাইফয়েডও এই নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আসবে।
তিনি আরও বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা জরুরি। মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ ও ইন্টার্ন ডাক্তারদের যুক্ত করা গেলে মাঠপর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম সাইফুল ইসলাম, এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক দাউদ মিয়া, ইউনিসেফের প্রতিনিধি দীপিকা শর্মা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রাজেশ নরওয়ানসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।
মন্তব্য করুন