বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আজ থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সের কম বয়সী সকল শিশুকে বিনামূল্যে ১ ডোজ টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (TCV) প্রদান করা হয়েছে। সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর, যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
জাতীয় পর্যায়ে প্রথমবারের মতো একই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি শিশুকে টিকা প্রদান করা হবে। জন্মসনদ না থাকলেও শিশুরা এই টিকার সুরক্ষা পেতে পারবে- যাতে কোনো শিশুই টিকাদান থেকে বঞ্চিত না হয়।
জাতীয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রোববার (১২ অক্টোবর) সকালে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
ঢাকা আহছানিয়া মিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংস্থাটি প্রাথমিকভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬টি ওয়ার্ড, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩টি ওয়ার্ড এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডসহ মোট ৩৬টি ওয়ার্ডে টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় ৪২০টি স্কুল ও মাদ্রাসায় প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৭২১ জন শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমানে ২৮টি স্কুল ও মাদ্রাসায় টিকাদান ক্যাম্পেইন চলছে। পরবর্তীতে সকল স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে এই কর্মসূচি সম্প্রসারিত হবে। এ ছাড়া রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের অধীনে পরিচালিত টিকাদান ক্যাম্পেইনেও মনিটরিং করছে আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের সুপারভাইজাররা। সারা দেশে কার্যক্রমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংস্থার ২৩৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমোদিত টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (TCV) একটি নিরাপদ, উন্নত ও কার্যকর টিকা, যা শরীরে প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সের কম শিশুদের একটি মাত্র ডোজ প্রদানেই ৮৫% পর্যন্ত টাইফয়েড প্রতিরোধ সম্ভব, যা শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, প্রাথমিকভাবে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্কুল, মাদ্রাসা ও সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিকা প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সের সকল শিশু, এমনকি স্কুলবহির্ভূত শিশুদেরও ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। শহরের ভাসমান ও পথশিশুদের টিকাদানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে।
সরকারের লক্ষ্য এই কর্মসূচির আওতায় ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা প্রদান করা। ইতোমধ্যে ১ কোটি ৬৮ লাখ শিশুর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে, এবং নিবন্ধনের পর টিকার সনদপত্র সরাসরি ডাউনলোড করা যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জাতীয় উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশে টাইফয়েড সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে এবং শিশুস্বাস্থ্যের মান ও সুরক্ষা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
মন্তব্য করুন