স্মার্টফোন ছাড়া আজকের জীবন যেন এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতের ঘুম পর্যন্ত—হাতে ফোন, চোখে স্ক্রিন, কানে নোটিফিকেশন। কিন্তু এই অবিচ্ছেদ্য সঙ্গীটিই অনেক সময় হয়ে উঠতে পারে নীরব বিপদের কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অজান্তেই আমরা এমন কিছু জায়গায় ফোন রাখি বা ব্যবহার করি, যা কেবল ডিভাইসের নয়, শরীরেরও মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। রেডিয়েশন, তাপ, ব্যাকটেরিয়া কিংবা অগ্নিকাণ্ড—সব মিলিয়ে ফোনের ভুল ব্যবহার থেকে ঝুঁকিতে পড়তে পারেন আপনি নিজেও।
চিকিৎসক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যেসব জায়গায় নিয়মিত ফোন রাখা হয়, তার কিছু জায়গা একেবারেই ‘নিষিদ্ধ এলাকা’। কারণ, এসব অভ্যাসে বাড়তে পারে ক্যানসারের ঝুঁকি, ত্বকের সংক্রমণ, ঘুমের ব্যাঘাত এমনকি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোথায় ফোন রাখা বিপজ্জনক-
পকেটে ফোন রাখার অভ্যাস
চিকিৎসক লিলি ফ্রিডম্যান জানান, শরীরের সঙ্গে ফোন সরাসরি সংস্পর্শে থাকলে রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়ে, যা ডিএনএ কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি প্রজনন ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও মোবাইল রেডিয়েশনকে ‘সম্ভাব্য কার্সিনোজেনিক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। অর্থাৎ এটি ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে সন্দেহভাজন। তাই সুবিধার জন্য পকেটে ফোন রাখার অভ্যাস ধীরে ধীরে ত্যাগ করা জরুরি।
বালিশের নিচে ফোন রাখা
অনেকে ঘুমের সময় ফোন বালিশের নিচে রেখে দেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে ফোন চার্জে থাকলে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি ফোনের আলো ঘুমের হরমোন ‘মেলাটোনিন’-এর নিঃসরণে বাধা দেয়, যার ফলে ঘুমের মান কমে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মুখের খুব কাছে নিয়ে ফোন ব্যবহার
দীর্ঘ সময় ফোন মুখের কাছে ধরে কথা বললে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া জমে। এতে ব্রণ, ফুসকুড়ি, এমনকি সংক্রমণ পর্যন্ত হতে পারে। এ জন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, সরাসরি ফোন কানে না ধরে বরং হেডফোন বা ইয়ারপড ব্যবহার করতে—যাতে ত্বক ফোনের সরাসরি সংস্পর্শে না আসে।
বাথরুমে ফোন ব্যবহার
আধুনিক জীবনের এক ভয়াবহ অভ্যাস বাথরুমে ফোন নিয়ে যাওয়া। গবেষণা বলছে, টয়লেট ফ্লাশ করার সময় তিন ফুটের মধ্যে থাকা যে কোনো বস্তুতে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এই জীবাণুগুলো ফোনে জমে পরে মুখ বা ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ফলে সংক্রমণ ও নানা অসুখের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
দীর্ঘ সময় চার্জে রেখে দেওয়া
ফোন ফুল চার্জ হওয়ার পরও চার্জার খুলে না রাখলে ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। এতে ব্যাটারির আয়ু কমে, এমনকি বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনাও তৈরি হয়। বিশেষ করে নকল চার্জার ব্যবহার করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়ে।
গাড়ির ড্যাশবোর্ড বা গ্লাভ কম্পার্টমেন্টে ফোন
অনেকেই গাড়ির ভেতরে ফোন রেখে দেন, বিশেষ করে গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়ায়। এতে ফোনের যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হতে পারে। চরম গরমে ব্যাটারি লিক হতে পারে, আবার ঠান্ডায় স্ক্রিন ও টাচ সেনসরের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
বালির ওপর বা সৈকতের তোয়ালে
সমুদ্র সৈকতে ছবি তোলার পর অনেকেই ফোন বালির ওপর রেখে দেন। সূর্যের তাপে ফোন অতিরিক্ত গরম হয়ে হার্ডওয়্যার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বালির ক্ষুদ্র কণাগুলো ক্যামেরা লেন্স ও স্পিকারে ঢুকে ডিভাইসের স্থায়ী ক্ষতি করে। তাই সৈকতে ফোন রাখার আগে অবশ্যই সুরক্ষিত ব্যাগ বা কভার ব্যবহার করা উচিত।
সূত্র : দ্য হেলদি
মন্তব্য করুন