

শীত এলেই ত্বক-চুলের অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হয়। এ মৌসুমে বাতাস শুষ্ক হয়ে ওঠে, শরীরের ভেতরের আর্দ্রতা কমে যায়, আর এর প্রথম ধাক্কা লাগে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা ও চুলের জৌলুসে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময় চিয়া সিডস হয়ে উঠতে পারে এক কার্যকরী ‘উইন্টার বিউটি পাওয়ারহাউস’। কারণ এই ক্ষুদ্র দানায় রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং দস্তা-ম্যাগনেশিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ।
ওমেগা-৩ ত্বকের বারিয়ারকে দৃঢ় রাখে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দূর করে শীতের মলিনতা। ফাইবার ঠিক রাখে হজম, যা ভেতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল রাখার বড় শর্ত। আর অ্যামিনো অ্যাসিড চুলের গোড়া মজবুত করে, কমায় ভাঙা-ঝরা সমস্যা।
চলুন তাহলে জেনে নিই, শীতে কীভাবে চিয়া সিডস খেতে হবে—
১) উষ্ণ চিয়া-পানি
গরমের দিনে ঠান্ডা চিয়া-পানি জনপ্রিয় হলেও শীতে এর উষ্ণ সংস্করণ বেশ কার্যকর। হালকা গরম পানিতে এক চামচ ভিজানো চিয়া, একটু লেবুর রস আর এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে খালি পেটে পান করুন। এটি হজমকে সক্রিয় করে, শরীরকে আর্দ্র রাখে এবং সকালে ত্বকে আনে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা।
২) সকালের ওটস বা ডালিয়ায় মেশান
শীতের আরামদায়ক ওটস, ডালিয়া কিংবা সেমাই পোরিজে এক চামচ ভিজানো চিয়া সিডস মিশিয়ে নিন। এতে স্বাদ বদলায় না, কিন্তু শরীর পায় দীর্ঘস্থায়ী শক্তি, ত্বক পায় ভেতর থেকে হাইড্রেশন আর চুল পায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
৩. চিয়া-কাশি
চিয়া-কাশি অদ্ভুত শোনালেও শীতের জন্য এটি দারুণ। আদা, তুলসি, দারচিনি ও গোলমরিচ দিয়ে কাশি বানিয়ে একটু ঠান্ডা হলে এতে দিন আধা চামচ ভিজানো চিয়া। এটি এক কাপেই দেয় রোগপ্রতিরোধ, হাইড্রেশন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সুবিধা। নিয়মিত খেলেই কমবে শীতকালীন ব্রেকআউট, শুষ্কতা এবং মাথার ত্বকের নানা সমস্যা।
৪. চিয়া-দই বিউটি বোল
দই শীতেও রয়ে যায় এক উৎকৃষ্ট বিউটি-ফুড। এতে মেশান মধু, চিয়া সিডস ও মৌসুমি ফল—আপেল, বেদানা, চীকু বা খেজুর। এটি প্রোবায়োটিক, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের সুন্দর মিশ্রণ; যা ত্বক-চুল দুটোকেই ভেতর থেকে মজবুত করে।
৫) উষ্ণ চিয়া-হানি ড্রিঙ্ক
এই সহজ পানীয়টি শীতে ত্বক ও চুলের জন্য এক ধরনের ‘এলিক্সার’। ভেজানো চিয়া সিডস, হালকা গরম পানি, মধু এবং চাইলে কিছু লেবুর রস—সব মিলিয়ে পান করলে কমে ত্বকের শুষ্কতা, কমে প্রদাহ এবং মজবুত হয় চুলের গোড়া।
৬) স্যুপ, খিচুড়ি বা সবজিতে ছিটিয়ে দিন
টমেটো স্যুপ, গরম খিচুড়ি কিংবা হালকা সবজিতে এক চিমটি চিয়া ছিটিয়ে দিন। স্বাদ বদলায় না, কিন্তু খাবারের পুষ্টিগুণ বেড়ে যায় দ্বিগুণ, যারা নোনতা খাবার পছন্দ করেন তাদের জন্য উপযোগী।
৭) চিয়া-হলুদ দুধ
রাতে হলুদ-দুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তাতে ভেজানো চিয়া যোগ করুন। চিয়া দুধের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বাড়িয়ে ত্বককে রাতভর পুষ্টি দেয়; হলুদ করে মেরামত—ফলে বাড়ে রাতের গ্লো, কমে রুক্ষতা।
কতটা খাবেন?
প্রতিদিন ১ থেকে ১.৫ টেবিল-চামচ চিয়া সিডস যথেষ্ট। এর বেশি খেলে পানি না খাওয়ার কারণে গ্যাস-বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আর সবসময় অন্তত ২০ মিনিট ভিজিয়ে তারপর খাবেন, তাহলেই এটি শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে।
নিয়মিত খেলে যা যা পরিবর্তন দেখবেন (৩-৪ সপ্তাহে)
১. ত্বক হবে নরম ও উজ্জ্বল
২. কমবে ড্রাই প্যাচ
৩. শক্তিশালী হবে চুলের গোড়া
৪. কমবে চুল পড়া
৫. বাড়বে চুলের স্বাভাবিক চকচকে ভাব
৬. শরীর থাকবে হালকা ও এনার্জেটিক
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন