

বাংলাদেশে ডেঙ্গু এখন আর মৌসুমি রোগ নয়। বছরের যেকোনো সময়ই দেখা দিচ্ছে এই জ্বর। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার বাড়ায় মানুষের উদ্বেগও বাড়ছে। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন, ডেঙ্গুর কি ভ্যাকসিন আছে? থাকলে বাংলাদেশে কেন দেওয়া হয় না?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন রয়েছে, কিন্তু সেগুলো সব বয়স বা সব মানুষের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর নয়। তাই এখনো বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আনতে সরকার সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আছে, তবে সীমাবদ্ধতা রয়েছে
বর্তমানে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে দুটি ভ্যাকসিন সবচেয়ে বেশি আলোচিত - ডেঙ্গাভেক্সিয়া এবং কিউডেঙ্গা। দুটোই কয়েকটি দেশে ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও কিউডেঙ্গাকে অনুমোদন দিয়েছে।
ডেঙ্গাভেক্সিয়া নিতে চাইলে শর্ত হলো - যিনি টিকা নেবেন, তার আগে একবার ডেঙ্গু হওয়া থাকতে হবে। যারা কখনো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়নি, তাদের মধ্যে এ ভ্যাকসিনের জটিলতার ঝুঁকি রয়েছে। তাই এটি সবার জন্য উপযুক্ত নয়।
কিউডেঙ্গা সাধারণত ৬ থেকে ১৬ বছরের কিশোর-কিশোরীদের জন্য অনুমোদিত। তবে এটিও সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত নয় এবং সবার জন্য ব্যবহারযোগ্য এমন সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এ জন্য দেশগুলো ভ্যাকসিন ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করছে।
বাংলাদেশ কেন ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে না?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের সীমাবদ্ধতা, বয়সভিত্তিক অনুমোদন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা এবং আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা - সব মিলেই বাংলাদেশ ভ্যাকসিন চালু করতে দেরি করছে।
এ ছাড়া ভ্যাকসিন অনুমোদনের আগে জাতীয় পর্যায়ের টেকনিক্যাল কমিটির মতামত প্রয়োজন। তারা এখনো সবার জন্য উপযোগী ভ্যাকসিনের সুপারিশ দেয়নি।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভ্যাকসিন অনুমোদন দিলে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বাড়ার আশঙ্কাও আছে। কারণ ডেঙ্গুকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহামারি ঘোষণা করতে হতে পারে, যা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল।
বাংলাদেশে ভ্যাকসিন গবেষণা
২০১৩ সালে আইসিডিডিআরবি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের সহায়তায় একটি নতুন ডেঙ্গু ভ্যাকসিন - TV005’এর দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল চালায়। এটি এমন একটি ভ্যাকসিন, যা এক ডোজেই চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে সক্ষম বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল সফল হলে এটি সহজে ব্যবহারযোগ্য ভ্যাকসিন হিসেবে সামনে আসতে পারে। তবে এই ট্রায়াল ও অনুমোদনের প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি।
২০২৪–২০২৫ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও বেড়েছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই ভ্যাকসিন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হলেও, বর্তমানে বাজারে থাকা ভ্যাকসিনগুলো সবার জন্য উপযোগী নয়। তাই সরকার চিকিৎসা, রোগ শনাক্তকরণ এবং মশা নিয়ন্ত্রণকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিউডেঙ্গাকে প্রাক-যোগ্যতা প্রদান করেছে, যা ভবিষ্যতে এই ভ্যাকসিন কেনা সহজ করতে পারে। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ভ্যাকসিন ব্যবহারের ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্যাকসিন থাকলেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় হলো মশার প্রজনন কমানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধি। বাড়িতে এবং আশপাশে পানি জমতে না দেওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, মশারি ব্যবহার করা - এসবই ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে বড় ভূমিকা রাখে।
ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন আছে, তবে তা এখনো সবার জন্য নিরাপদ বা কার্যকর - এমন সিদ্ধান্ত আসেনি। তাই বাংলাদেশে এটি চালু করতে দেরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে গবেষণা এগোলে এবং নিরাপদ ভ্যাকসিন পাওয়া গেলে বাংলাদেশেও ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ব্যবহার শুরু হতে পারে। তবে ততদিন পর্যন্ত সচেতনতা এবং মশা নিয়ন্ত্রণই সবচেয়ে বড় আশ্রয়।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
মন্তব্য করুন