

আজকের দিনে মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি ছাড়া জীবন কল্পনাই করা যায় না। কাজ, পড়াশোনা, বিনোদন—সবকিছুতেই স্ক্রিন। কিন্তু প্রতিদিন যদি ৪ ঘণ্টার বেশি সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, তাহলে ধীরে ধীরে তার প্রভাব পড়ে চোখ, মস্তিষ্ক এবং ঘুমের ওপর। চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে, এটি শুধু চোখের ক্লান্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—দীর্ঘদিনে পুরো স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
চলুন সহজ করে বুঝে নেওয়া যাক, দীর্ঘ সময় স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে শরীরে কী কী পরিবর্তন ঘটে—
চোখের পলক কমে যায় : স্ক্রিনে মনোযোগ দিলে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৬০-৬৬ শতাংশ কম পলক ফেলি আমরা। এর ফলে চোখ শুকিয়ে যায় এবং দেখা দেয় ড্রাই আই সিনড্রোম। চোখে জ্বালা, চুলকানি, লালভাব ও অস্বস্তি বাড়ে।
ঝাপসা দেখা ও ফোকাসের সমস্যা : একটানা একই দূরত্বে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের ছোট পেশিগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ৪ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় স্ক্রিন দেখলে ঝাপসা দেখা, ফোকাস বদলাতে কষ্ট হওয়া বা কখনো ডাবল ভিশনও হতে পারে। এই সমস্যাকে বলা হয় অ্যাকমোডেটিভ স্প্যাজম।
মাথাব্যথা : চোখ, কপাল ও ঘাড়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে শুরু হয় স্ক্রিন-টাইম হেডেক। এর সঙ্গে স্ক্রিন থেকে বের হওয়া ব্লু লাইট চোখের ক্লান্তি আরও বাড়িয়ে তোলে।
ব্রেন ফগ বা মাথা ঝিমুনি : ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনে তথ্য দেখলে মস্তিষ্ক অতিরিক্ত চাপের মধ্যে পড়ে। এতে কর্টিসল হরমোন বাড়ে, মনোযোগ কমে যায় এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়। ফলে অনেক সময় পড়া বা দেখা বিষয় মনে রাখতে কষ্ট হয়—এই অবস্থাকেই বলা হয় ব্রেন ফগ।
মেজাজের পরিবর্তন ও মানসিক ক্লান্তি : নিরবচ্ছিন্ন ভিডিও, নোটিফিকেশন ও তথ্যের চাপে ডোপামিন হরমোনের ওঠানামা ঘটে। এর ফল হিসেবে দেখা দেয় অস্থিরতা, মন খারাপ, বিরক্তি এবং অতিরিক্ত মানসিক ক্লান্তি—যাকে বলা হয় ডিজিটাল ফ্যাটিগ।
ঘুমের সমস্যা : রাতে ঘুমানোর আগে ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করলে মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়, যা ঘুম আনতে সাহায্য করে। ফলে দেরিতে ঘুম আসে, ঘুমের গভীরতা কমে এবং পরদিন শরীর আরও ক্লান্ত লাগে।
ডিজিটাল যুগে স্ক্রিন পুরোপুরি এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়, বিশেষ করে কর্মজীবীদের জন্য। তাই ক্ষতি কমাতে বিশেষজ্ঞরা কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেন—
সাধারণ নিয়ম
- প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর ছোট বিরতি নিন
- অপ্রয়োজনীয় স্ক্রিন টাইম ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে সীমিত রাখুন
- ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে স্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ করুন
- ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন: প্রতি ২০ মিনিটে, ২০ ফুট দূরে ২০ সেকেন্ড তাকান
- সচেতনভাবে বেশি পলক ফেলুন
- ব্লু লাইট ফিল্টার বা ব্লু কাট চশমা ব্যবহার করুন
- নিয়মিত ঘাড়, কাঁধ ও পিঠ স্ট্রেচ করুন
- কাজের ফাঁকে অল্প হাঁটাহাঁটি করুন
- সম্ভব হলে প্রাকৃতিক আলোতে কাজ করার চেষ্টা করুন
স্ক্রিন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে, কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। একটু সচেতনতা ও সঠিক অভ্যাস গড়ে তুললে চোখ ও মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখা সম্ভব। ভারসাম্য বজায় রাখলেই ডিজিটাল জীবন হবে নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন