কৃত্রিম রক্তের গ্রুপ নিয়ে এবার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে জাপানের একদল গবেষক। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার সফল হলে বিশ্বজুড়ে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার (০৬ জুন) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষণায় জাপানের ‘নারা’ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিরোমি সাকাইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এতে সব ধরনের রক্তের গ্রুপে ব্যবহারযোগ্য কৃত্রিম রক্ত তৈরি করা হয়েছে। এই কৃত্রিম রক্ত প্রায় দুই বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব। যেখানে সাধারণ রক্ত মাত্র ৪২ দিন ভালো থাকে।
কীভাবে তৈরি হচ্ছে এই কৃত্রিম রক্ত? এই রক্ত তৈরি করতে গবেষকরা মেয়াদোত্তীর্ণ ডোনার রক্ত থেকে নেওয়া হিমোগ্লোবিন ব্যবহার করছেন। হিমোগ্লোবিন হলো লোহিত রক্তকণিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। এটি সংগ্রহ করার পর একটি সুরক্ষিত আবরণে ঢেকে কৃত্রিম রক্তকণিকা তৈরি করা হয়। এতে ভাইরাসের ঝুঁকি থাকে না এবং এটি অনেক স্থিতিশীল।
সাধারণ রক্তের মতো এতে কোনো নির্দিষ্ট গ্রুপ নেই, তাই এটি যেকারো শরীরে দেওয়া সম্ভব। এ জন্য কোনো ধরনের গ্রুপ পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না। ফলে দুর্ঘটনা বা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে এটি জীবনরক্ষা করতে পারে।
পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ২০২৫ সালের মার্চ মাসে গবেষক দলটি ১৬ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকের দেহে ১০০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার কৃত্রিম রক্ত প্রয়োগ করেন। এই পরীক্ষা যদি সফল হয়, তবে ২০৩০ সালের মধ্যেই জাপানে চিকিৎসায় এটি ব্যবহার শুরু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি হলে জাপান হবে বিশ্বের প্রথম দেশ, যেখানে বাস্তবে কৃত্রিম রক্ত ব্যবহৃত হবে।
অধ্যাপক সাকাই বলেন, ‘বর্তমানে লোহিত রক্তকণিকার কোনো নিরাপদ বিকল্প নেই, তাই কৃত্রিম রক্তের প্রয়োজন অনেক বেশি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া এই গবেষণা শুরু হওয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, এটি সফল হলে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য। একজন লেখেন, ‘যদি এটি সত্যি হয় এবং খুব বেশি দামী না হয়, তবে এটি পুরো চিকিৎসাব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারে।’
আরেকজন মন্তব্য করেন, জাপানি বিজ্ঞানীরা একের পর এক চমক দিচ্ছেন- এই কৃত্রিম রক্ত, দাঁত গজানোর চিকিৎসা, এমনকি এমন ইনজেকশন যা বিড়ালকে দীর্ঘজীবী করে! আশা করি এসব আবিষ্কার পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।’
বিশ্বে অন্য কোথায় কী হচ্ছে? জাপানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেও চলছে একই ধরনের গবেষণা। ‘ইরিথ্রোমার’ নামের একটি কৃত্রিম রক্ত তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে পুরনো হিমোগ্লোবিন ব্যবহার করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটি প্রকল্প- ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (DARPA) ইতিমধ্যে এই গবেষণার জন্য ৪৬ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৩৯৪ কোটি টাকা) অনুদান দিয়েছে।
মন্তব্য করুন