কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডায়াবেটিস পরীক্ষা ।  ছবি : সংগৃহীত
ডায়াবেটিস পরীক্ষা । ছবি : সংগৃহীত

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা। আমাদের শরীরের অগ্ন্যাশয় যখন আর ইনসুলিন হরমোন তৈরি করতে পারে না বা যখন শরীর অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত ইনসুলিনের সঠিক ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তখন ডায়াবেটিস দেখা দেয়। ফলে শরীর খাদ্যকে যেভাবে শক্তিতে পরিণত করে, তা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।

আমরা যেসব খাবার খাই, তার অধিকাংশই চিনিতে ভেঙে যায় (যাকে গ্লুকোজ বলে) এবং আমাদের রক্তপ্রবাহে মেশে। যখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন আমাদের মস্তিষ্ক অগ্ন্যাশয়কে ইনসুলিন নিঃসরণের সংকেত দেয়। ইনসুলিন কোষে এই গ্লুকোজ প্রবেশ করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ আমাদের শরীরের কোষগুলোকে গ্লুকোজ গ্রহণ করে কোষের চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার করার চাবি হিসেবে ইনসুলিন কাজ করে।

যদি ডায়াবেটিস রোগ হয়, তখন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি হয় না বা যে ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে, তার সঠিকভাবে ব্যবহার হয় না। যখন পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকে না বা কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না, তখন রক্তে অত্যধিক মাত্রায় শর্করা থেকে যায়। মেডিকেলের ভাষায় একে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলা হয়।

দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে উচ্চমাত্রায় শর্করা উপস্থিত থাকলে শরীরের নানাবিধ ক্ষতি হয়। হাইপারগ্লাইসেমিয়ার কারণে হৃদরোগ, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস এবং কিডনি রোগের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যেসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে

অতিরিক্ত দুর্বল ভাব, বারবার গলা শুকিয়ে যাওয়া ও পরিশ্রম ছাড়াই ক্লান্তি অনুভব হওয়া, ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ, অকারণেই ওজন হ্রাস, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, ত্বকে রঙের বিবর্ণতা, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে যাওয়া, মিষ্টিজাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হওয়া, কোনো কারণ ছাড়াই অনেক ওজন হ্রাস, শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও ক্ষত না শুকানো, চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব, বিরক্তি ভাব আসা, মেজাজের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ

টাইপ-২-এর তুলনায় টাইপ-১ ডায়াবেটিস সাধারণত কম। প্রায় ৫-১০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর টাইপ-১ রয়েছে। বর্তমানে কেউ জানে না কীভাবে টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়। তবে এ ধরনের ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা রয়েছে।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও উপসর্গ

ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ,, ক্ষুধা, পিপাসা বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসা, শরীরে ক্লান্তিভাব, কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমতে থাকা ইত্যাদি।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের প্রাথমিক উপসর্গগুলো ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস (ডিকেএ) নামক জীবননাশক ব্যাধির লক্ষণ হিসেবে সামনে আসে।

ডিকেএ এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিঃশ্বাসে ফলের মতো গন্ধ, চামড়া শুষ্ক হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মনোযোগ দিতে অসুবিধা ও বিভ্রান্তি বোধ করা ইত্যাদি।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতির কারণে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকেন। যেমন : হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, চোখের সমস্যা, দাঁতের সমস্যা, স্নায়ু ক্ষয়, পায়ের সমস্যা, বিষণ্নতা, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি।

যদি কারও টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে, তবে রক্তের গ্লুকোজ, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি ডায়াবেটিসের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মতো যত্ন নিতে হবে। এতে ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলো বিলম্বিত হবে এবং সহনীয় মাত্রায় থাকবে।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের প্রতিকার

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা, রক্তে শর্করার মাত্রা ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো, ডায়াবেটিস স্ব-ব্যবস্থাপনা শিক্ষা গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা খুঁজে নেয়া ইত্যাদি।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ

ডায়াবেটিস এর সবচেয়ে সাধারণ প্রকরণ হচ্ছে টাইপ-২ ডায়াবেটিস। এই ধরনের ডায়াবেটিস এ শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দেয় না। এই অবস্থাকে বলা হয় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। তখন অগ্ন্যাশয় আরও ইনসুলিন তৈরি করতে থাকে কোষগুলোকে প্রতিক্রিয়াশীল করার অভিপ্রায়ে। অগ্ন্যাশয় আর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না এবং ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে রক্তে শর্করার মাত্রা। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের বিকাশ প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।

যে কোনো বয়সেই টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে। এমনকি শৈশবেও। তবে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রায়ই মধ্যবয়সী ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঘটে। যদি আপনার বয়স ৪৫ বা তার বেশি হয়, যদি আপনার ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকে বা স্থূলকায়, সে ক্ষেত্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও উপসর্গ

ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া, ক্লান্তি অনুভব করা, চোখে ঝাপসা দেখা, হাতে পায়ে অসাড়তা বা শিহরণ অনুভব করা, ঘা সারতে দেরি হওয়া, ওজন হ্রাস ইত্যাদি।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো প্রায়ই বেশ কয়েক বছর ধরে নিভৃতে বিকাশ লাভ করে। কখনো কখনো উপসর্গের প্রকাশ এত মৃদু হয়ে থাকে, ঘূণাক্ষরেও টের পাওয়া না। অনেকের আবার কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। কিছু রোগী ডায়াবেটিস সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন, দৃষ্টি ঝাপসা বা হৃদরোগ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের বিষয়টি জানা যায় না।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জটিলতা

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যদি ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্ট করা হয়, তাহলে ডায়াবেটিসের সঙ্গে জড়িত অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তবে সেটিতে অবহেলা করলে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা ও রোগ দেখা দিতে পারে, যেমন : হৃদরোগ ও স্ট্রোক, স্নায়ু ক্ষয়, কিডনি রোগ, পায়ের সমস্যা, চোখের রোগ, মাড়ির রোগ ও অন্যান্য দন্তজনিত সমস্যা, যৌন সমস্যা ও মূত্রাশয়ের সমস্যা ইত্যাদি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টিকাটুলিতে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

বিয়ের প্রলোভনে ‘ধর্ষণ’, পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার

পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করতে যান ছাত্রদল নেতা, অতঃপর...

ছাত্রীদের হলে পুরুষ স্টাফ দিয়ে তল্লাশি

দাম কমলো ইন্টারনেটের

ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভাবার অনুরোধ তারেক রহমানের

বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

শাহজালালে বোয়িং বিমানে লাগেজ ট্রলির আঘাত

১০

আখতারকে রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

১১

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

১২

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

১৩

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

১৪

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

১৫

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

১৬

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

১৭

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

১৮

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

১৯

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

২০
X