নিয়মিত সাইক্লিং বা সাইকেল চালনা পারকিনসন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে-সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ উর্দু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নিয়মিত সাইক্লিং মস্তিষ্কের সেই অংশগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যেগুলো শরীরের নড়াচড়া ও ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে রোগীদের দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায় এবং রোগের লক্ষণগুলো হ্রাস পেতে পারে।
গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?
তথ্যপ্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিষয়ক আন্তর্জাতিক এক ওয়েবসাইট জানায়, গবেষণায় দেখা গেছে, সাইক্লিং পারকিনসনে আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কের সংযোগ পুনরায় সক্রিয় করতে সহায়তা করে।
গবেষণাটিতে অংশ নিয়েছিলেন ৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক পারকিনসন রোগী। তাদের প্রত্যেকের মস্তিষ্কের কার্যক্রম রেকর্ড করার জন্য আগে থেকেই ‘ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন (DBS)’ নামের একটি যন্ত্র বসানো ছিল। চার সপ্তাহ ধরে মোট ১২টি সাইক্লিং সেশন করানো হয় এই রোগীদের। এরপর গবেষকরা দেখতে পান, তাদের মস্তিষ্কে যেসব জায়গা শরীরের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে।
গবেষকদের দাবি, শরীরচর্চার মাধ্যমে মস্তিষ্কের ভেতরে পরিবর্তন আসতে পারে, এটাকেই বলা হয় ‘নিউরোপ্লাস্টিসিটি’। সহজ ভাষায়, মস্তিষ্কের নিজেকে নতুনভাবে গঠন ও সংযোগ তৈরির ক্ষমতা।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
গবেষণার নেতৃত্বে থাকা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পারকিনসনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যতটা সম্ভব সক্রিয় থাকতে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে উৎসাহিত করা উচিত। এতে করে শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কও সচল থাকে, যা রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
তারা বলেন, এই পন্থায় ‘সাইক্লিং একটি সহজলভ্য ও কার্যকর ব্যায়াম। এটি পারকিনসনের মতো জটিল রোগেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।’
পারকিনসন রোগ কী?
পারকিনসন হলো এক ধরনের ধীরগতির নিউরোলজিক্যাল রোগ, যা সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয়। এই রোগে মস্তিষ্কের সেই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা শরীরের নড়াচড়া ও সমন্বয় নিয়ন্ত্রণ করে।
পারকিনসন রোগের প্রধান কয়েকটি লক্ষণ
১. হাত-পা বা শরীরে কম্পন
২. চলাফেরায় অসুবিধা
৩. শরীরের অস্বাভাবিক আড়ষ্টতা
৪. ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারা
পারকিনসন ধীরে ধীরে বাড়ে এবং একবার হলে পুরোপুরি নিরাময়ের কোনো ব্যবস্থা এখনো নেই। তবে সঠিক ওষুধ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং রোগীর জীবনমান অনেকটাই উন্নত করা সম্ভব।
মন্তব্য করুন