

অনেক সময় এমন হয় যে আপনার সঙ্গীর বাবা-মা আপনাকে যেমনভাবে আপন করে নেবেন বলে আশা করেছিলেন, ঠিক তেমনটা হয় না। বিষয়টি কষ্টের এবং হতাশার হতে পারে।
তবে মনে রাখতে হবে, এটি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা, যা অনেক দম্পতিই জীবনে কোনো না কোনো সময়ের মধ্যে পার করে। সঙ্গীর বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা আপনার সম্পর্কের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই চলুন, এই সম্পর্কটা ধীরে ধীরে ভালো করার কিছু সহজ উপায় জেনে নিই।
নিজের অনুভূতি বুঝুন : কোনো কিছু করার আগে নিজের মনের ভেতরটা বোঝা জরুরি। নিজেকে প্রশ্ন করুন—সঙ্গীর বাবা-মা আপনাকে কী ভাবছে, সেটা নিয়ে আপনি এত চিন্তিত কেন? আপনার ভেতরে কোনো ভয়, দুশ্চিন্তা বা আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে, আগে সেগুলো চিনে নিন এবং নিজে নিজে সামলানোর চেষ্টা করুন।
সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন : আপনার সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন। তার বাবা-মা আপনার ব্যাপারে কী ভাবছেন, তা নিয়ে আপনার অনুভূতিগুলো জানান। একে অন্যকে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন এবং ঠিক করুন কীভাবে দুজন মিলে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। এই সময় আপনার সঙ্গী আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি হতে পারে।
সম্মান দেখান এবং ধৈর্য ধরুন : সঙ্গীর বাবা-মায়ের মন জয় করতে হলে সম্মান আর ধৈর্য খুব দরকার। তারা যদি আপনার সঙ্গে সবসময় ভালো ব্যবহার নাও করেন, তবুও আপনি ভদ্র ও শান্ত থাকুন। বিশ্বাস তৈরি হতে সময় লাগে। তাই তাড়াহুড়ো না করে এটাকে দীর্ঘ পথের একটা যাত্রা হিসেবে দেখুন।
মিল খোঁজার চেষ্টা করুন : সঙ্গীর বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। সেটা হতে পারে কোনো শখ, ভ্রমণের গল্প, পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা বা সাধারণ কোনো আগ্রহ। এই মিলগুলো সম্পর্ককে কাছাকাছি আনতে সাহায্য করে।
আন্তরিক আগ্রহ দেখান : তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় সত্যি করে আগ্রহ দেখান। তাদের জীবন, অভিজ্ঞতা আর ভাবনাগুলো সম্পর্কে জানতে চান। মন দিয়ে শুনুন। তাদের কথা যে আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন, এটা বুঝতে পারলে সম্পর্ক অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
নিজের সীমা বজায় রাখুন : ভালো সম্পর্ক গড়ার পাশাপাশি নিজের সীমাও ঠিক রাখা জরুরি। খুব বেশি ব্যক্তিগত কথা বলা বা তাদের জীবনে অতিরিক্ত জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়। বন্ধুত্বপূর্ণ থাকুন, আবার তাদের ব্যক্তিগত জায়গাটাকেও সম্মান করুন।
তাদের মূল্যবোধকে সম্মান করুন : সঙ্গীর বাবা-মায়ের চিন্তাধারা, বিশ্বাস বা রীতিনীতি আপনার থেকে আলাদা হতে পারে। সেগুলো আপনার পছন্দ না হলেও সম্মান দেখান। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার মানসিকতা রাখুন এবং তাদের জীবনযাপনকে সম্মান করুন।
ক্ষমা চাইতে ও ক্ষমা করতে শিখুন : আগে যদি কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা ঝগড়া হয়ে থাকে, আর আপনার দোষ থাকে, তাহলে দুঃখ প্রকাশ করতে দ্বিধা করবেন না। একইভাবে, তাদের ভুল থাকলে ক্ষমা করার মানসিকতাও রাখুন। ক্ষমা চাওয়া আর ক্ষমা করা অনেক পুরোনো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
সঙ্গীর সঙ্গে মিলেই সমাধান খুঁজুন : এ পরিস্থিতি সামলাতে সঙ্গীর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করুন। সে আপনাকে এবং তার বাবা-মাকে ভালোভাবে চেনে, তাই তার পরামর্শ অনেক কাজে আসতে পারে। দুজন মিলে সম্পর্ক উন্নত করার একটা পথ খুঁজে নিন।
সব চেষ্টা করার পরও হতে পারে, সঙ্গীর বাবা-মা আপনাকে পুরোপুরি মেনে নেবেন না। এমন হলে সেটা ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কটা শক্ত রাখার দিকে মন দিন এবং জীবনের অন্য গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন।
সঙ্গীর বাবা-মা আপনাকে পছন্দ না করলে পরিস্থিতি কঠিন হতে পারে, কিন্তু সেটা ধীরে ধীরে ভালো করা সম্ভব। নিজের আচরণ নিয়ে ভাবুন, সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলুন এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আপনার আর আপনার সঙ্গীর সম্পর্ককে শক্ত রাখা।
সময়, ধৈর্য আর চেষ্টা থাকলে শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করা সম্ভব, আর না হলেও তাদের মতামতকে যেন আপনার সম্পর্কের ক্ষতি করতে না পারে, সেটাই সবচেয়ে জরুরি। ভবিষ্যতের সুখের জন্য নিজের সম্পর্কটাকেই অগ্রাধিকার দিন।
সূত্র : Relationship Rules
মন্তব্য করুন