নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা নিয়ে আপনার সঙ্গে চূড়ান্ত অন্যায় করলেন পরিবারের মানুষজন। ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আত্মীয়-পরিজন বা কোনো সহকর্মী বড় কোনো ক্ষতি করে বসলেন। চলতিপথে রিকশাচালক, পথচারী কিংবা গণপরিবহনের হেলপারের কাছে অযথাই দুর্ব্যবহার পেলেন। এসব পরিস্থিতিতে আপনি সাধারণত কী করেন বা কী করবেন? ব্যক্তিভেদে প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হবে, এটাই স্বাভাবিক। অধিকাংশ মানুষই হয়তো প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠবেন। আর যাঁরা একটু অন্য রকম, মানবিক, ক্ষমাশীল হৃদয়ের মানুষ, তাঁরা কিন্তু সে পথ মাড়াবেন না। তাঁরা দুঃখ পাবেন, আড়ালে মুখ লুকিয়ে বিষাদ লুকাবেন হয়তো। মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে ছোট্ট করে হাসি ফুটিয়ে তুলবেন মুখে। তারপর মনে মনে বলবেন, ‘ব্যাপার না, ক্ষমা করে দিলাম।’
মার্কিন মনোবিজ্ঞানী এভারেট অর্থিংটন সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে অন্যকে ক্ষমা করলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ৫টি দেশের ৪ হাজার ৫০০ জনের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। অনেক গবেষণাপত্রেই এমন ফলাফল উঠে এসেছে। ক্ষমার মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে গড়ে ওঠে সুস্থ ও সুন্দর সম্পর্ক।
হতাশা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমে যায়। শত্রুতা হ্রাস পায়। গবেষকেরা জানান, ক্ষমার সঙ্গে মানুষের দৈহিক সুস্থতাও অনেকাংশে সম্পর্কিত। ক্ষমা করার গুণ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হৃৎস্বাস্থ্য ভালো রাখে, এমনকি দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ। আল্লাহর সৌন্দর্যময় সিফাতগুলোর মধ্যে একটি হলো ক্ষমা। সুন্দর-শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণ ও মানব কল্যাণে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যে মানুষের মধ্যে ক্ষমা ও সবর (ধৈর্য ধারণ) করার মহৎ গুণ থাকবে, সে অবশ্যই মানুষের পছন্দের ব্যক্তিতে পরিণত হবে। অন্যদিকে আল্লাহর বিশেষ রহমত তার ওপর বর্ষিত হবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ক্ষমা করো, ধৈর্য ধরো, হউক সুন্দরতর, বিদায়ের ক্ষণ।
মন্তব্য করুন