চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে ছাত্র-জনতা হত্যা, নিপীড়ন ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে র্যালি ও সংহতি সমাবেশ আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতি চিরন্তনের (ভিসি চত্বর) সামনে থেকে একটি র্যালি নিয়ে টিএসসি, শহীদ মিনার ও দোয়েল চত্বর হয়ে আবার টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে একটি সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ থেকে বলা হয়, এ মুহূর্তে ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার আমরা এই সরকারের কাছে চাই না। যারা হত্যা করেছে তাদের কাছে হত্যার বিচার চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে সমাবেশে অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আজকে আন্দোলন যে পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে এ মুহূর্তে ছাত্র-জনতার হত্যার বিচার আমরা এই সরকারের কাছে চাই না। যারা হত্যা করেছে তাদের কাছে হত্যার বিচার চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এছাড়া এ সরকারের কাছে কোনো তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিও আমরা জানাই না। কারণ তারা যে কমিটি করবে সেটাতেও তাদের বেহায়া বাহিনী রাখবে। যাতে করে এই তদন্ত যথাযথ না হয়। এ আন্দোলনে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যে নির্যাতন হয়েছে, যে গণহত্যা করেছে তাতে করে সরকারের কাছে বিচার চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এটাই আমাদের একমাত্র দাবি।
অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, সরকার এই লাশের উপর দিয়েও থাকতে চাচ্ছে কিন্তু এ সুযোগ নেই। এটা বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোটেই না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছি। তাজা প্রাণ রাষ্ট্রের সম্পদ। বাড়ি, গাড়ি রাষ্ট্রের সম্পদ নয়। হেলিকপ্টার থেকে বিএনপি-জামায়াত গুলি করেনি। কারা এই গুলি চালিয়েছে তা জনগণ জানে। আমরা এই স্বৈরাচারের পদত্যাগ চাই।
অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ঘিরে দেশে ইতিহাসের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। সরকার তাদের রক্ত নিয়ে এখনো হাসছে। শিক্ষার্থীদের ওপর আর গুলি চালাবেন না। আপনারা গণহত্যার দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব দরকার। জাতিসংঘের তদারকিতে সুষ্ঠু তদন্ত হতে পারে। এ সরকারের কাছে আমরা বিচার প্রত্যাশা করি না। খুনি কখনো বিচার করতে পারে না।
সাদা দলের এই কর্মসূচিতে ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মুহা. মিজানুর রহমান, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস ও অধ্যাপক ড. শাফী মো. মোস্তফা, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রশীদ ও অধ্যাপক ড. আবু আসাদ চৌধুরী, চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগের অধ্যাপক দেবাশীষ পাল, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, বোটানি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল করিম ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলছানী, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম মোস্তফা আল মামুন এবং ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আশেকুল আলম রানা ও অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন, অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস, অধ্যাপক শামসুল আলম, ড. মো. নূরুল আমিন এবং ড. মো. সাইফুল্লাহসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন