বুদ্ধিবৃত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ‘আওলিপিয়া’ অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জিতেছেন বাংলাদেশের সাদিদ শাহরিয়ার। লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় এককভাবে স্বর্ণপদকের পাশাপাশি দলগত অংশগ্রহণে রৌপ্য পদক এবং ট্রফিও অর্জন করে সাদিদ। সাদিদ আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি শাহরিয়ার আহমেদ এবং মা শারমিন সুলতানা সরকারের একজন উপসচিব।
সাত দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতা শুরু হয় ৯ আগস্ট। এতে মোট ইভেন্ট ছিল ৫টি। ৬০ মিনিটের নলেজ টেস্ট ও ইমপ্রমটু প্রতিযোগিতায় (যে কোনো বিষয় লটারির মাধ্যমে তুলে নিয়ে ১ মিনিট চিন্তা করে ২ মিনিট বলা) এককভাবে গোল্ড মেডেল জেতেন সাদিদ। আর বাংলাদেশ থেকে কোনো গ্রুপ করতে না পারায় অলিম্পিয়াড কর্তৃপক্ষ এই শিক্ষার্থীকে আজারবাইজান দেশের দুজন প্রতিযোগীর সঙ্গে যুক্ত করে। গ্রুপে কুইজ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও স্টোরি রাইটিং মিলিয়ে দলটি অর্জন করে সিলভার মেডেল। আর সম্মিলিতভাবে তারা ৩য় স্থান লাভ করে ট্রফি পান।
সাদিদ শাহরিয়ার তার এই অর্জনের বিষয়ে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই অ্যাডভেঞ্চার ধরনের বই পড়তে পছন্দ করতাম। যেমন- দ্য অ্যাডভেঞ্জার অব সার্লক হোমস, রবিনসন ক্রুশো ইত্যাদি। এখন যেমন হ্যারি পর্টার পড়ছি। এই বইগুলো আমাকে নতুন কিছু করতে সবসময় উৎসাহ দিত। বাবা-মায়ের কিছু দিনের জন্য চাকরির সুবাদে বিদেশে অবস্থান করায় আমি দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার স্কুলে কিছুদিন পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। বিদেশের স্কুলগুলোতে পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস যেমন- মেকিং, সংস্কৃতি, এক্সট্রা ল্যাঙ্গুয়েজ ও গেমস ক্লাসগুলোতে অনেক বেশি প্রাধান্য দিতাম। আমি সবসময় এই ক্লাসগুলোতে অংশগ্রহণ করতাম এবং বাংলাদেশকে তুলে ধরতাম।’
সাদিদ আরও বলেন, গত বছর বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেটে প্রথম আমি আওলিপিয়া অলিম্পিয়াড সম্পর্কে জানি এবং উৎসাহ নিয়ে অংশগ্রহণ করার জন্য বাবা-মাকে জানাই। কিন্তু এরপরে দেখা দিল বড় এক সমস্যা, তা হলো এই অলিম্পিয়াডে গ্রুপে অংশগ্রহণ করতে হয়। আমি গ্রুপের জন্য বন্ধুর সন্ধান করতে থাকি কিন্তু আগ্রহী কাউকে পেলাম না। হতাশ হয়ে বাবা-মাকে জানালে মা অলিম্পিয়াড কর্তৃপক্ষকে ই-মেইল দিয়ে জানতে পারে। যারা গ্রুপ করতে পারবে না তারা আওলিপিয়াতে অনলাইন গ্লোবাল কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। মা রেজিস্ট্রেশন করে দেন। আমি ক্লাস সেভেনের ছাত্র হওয়ায় আওলিন গ্রুপে পড়ি। শুরু হলো আমার প্রস্তুতি নেওয়ার পালা। প্রতিদিন আমি স্কুলের পড়া শেষ করে সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করতাম এবং কখনো কখনো মুভিও দেখতাম। তিন মাস প্রস্তুতি শেষে অনলাইনে গত এপ্রিল মাসে অংশগ্রহণ করি এবং অনলাইন গ্লোবাল প্রতিযোগিতায় প্রথম হই। এতে আমি লন্ডনে সাত দিনের প্রতিযেগিতায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হই। চার মাস স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে প্রস্তুত করি। আমার বাবা আমার সুপারভাইজার হয়ে যান। মা হন উৎসাহদাতা।
মন্তব্য করুন