বাসস
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মেয়ের খাবারের জন্যে বের হয়ে আর ঘরে ফেরা হলো না শহীদ শাহাবুদ্দিনের

শহীদ শাহাবুদ্দিন। ছবি : সংগৃহীত
শহীদ শাহাবুদ্দিন। ছবি : সংগৃহীত

ছোট মেয়ের চিপস খাওয়ার বায়না মেটাতে খাবার কিনতে বাইরে বের হয়ে আর ঘরে ফেরা হলো না শহীদ শাহাবুদ্দিনের।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর সঙ্গে আলাপকালে শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী বিবি হালিমা এসব কথা বলেন।

গত পাঁচ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা থানার সামনের চৌরাস্তায় পুলিশের একটি দল এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে সেখানে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সিএনজিচালক শাহাবুদ্দিন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্সেস হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত আটটার দিকে তিনি মারা যান।

শাহাবুদ্দিন ভোলা সদর উপজেলার চর সামাইয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড এলাকার আবুল কালামের বড় ছেলে। তার মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। তিনি রাজধানীর শেরেবাংলা থানার সামনের চৌরাস্তা সংলগ্ন আনিসের বস্তির একটি ঘরে স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা এবং ছোট বোনকে নিয়ে যৌথভাবে বসবাস করতেন। বস্তিতে তার বাবা আবুল কালামের ক্ষুদ্র ভাতের হোটেল ও নিজে সিএনজি চালিয়ে যা আয় করতেন তাতে মোটামুটি ভালোভাবেই চলে যেত তাদের পরিবার।

কিন্তু শাহাবুদ্দিন শহীদ হওয়ায় পরিবারের ছন্দপতন ঘটে। তার মৃত্যুর পর কয়েক দিন আগে পারিবারিক কারণে পরিবারের সবাই ভোলা সদরের গ্রামের বাড়িতে আসেন।

শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী বিবি হালিমা বলেন, গত পাঁচ আগস্ট সকাল থেকেই রাজধানীতে থমথমে অবস্থা ছিল। আমার স্বামী সিএনজি চালানোর জন্য সকালে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু রাজধানীর পরিস্থিতি খারাপ থাকায় সিএনজির মালিক গাড়ি নিয়ে বের হতে নিষেধ করে। সারাদিন ঘরেই ছিল। সন্ধ্যার আগে যখন প্রচুর গোলাগুলি হয়, তখন একবার ঘর থেকে বের হয়ে বাবার দোকানে গিয়ে একটি ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়ে বলে, দোকান বন্ধ করে তোমরা সবাই ঘরে চলে যাও। বলে সেও ঘরে ফিরে আসে।

বিবি হালিমা বলেন, শাহাবুদ্দিন ঘরে এলে তাদের ছোট মেয়ে সানজিদা বাবার কাছে চিপস জাতীয় খাবারের বায়না ধরে। মেয়ের জন্য খাবার কিনতে বের হলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন শাহাবুদ্দিন। বর্তমানে হালিমার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে লামিয়া (১৪) ও সানজিদাকে (৭) নিয়ে ভীষণ অর্থ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বিবি হালিমা তার শ্বশুরের সঙ্গেই রয়েছেন। শ্বশুর স্বল্প আয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হওয়ায় অর্থ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে পরিবারে। তাই সরকারি সহায়তা কামনা করেছেন এই শহীদের স্ত্রী।

শহীদ শাহাবুদ্দিনের পিতা আবুল কালাম বাসসকে বলেন, গত পাঁচ আগস্ট দুপুরের পর থেকেই হাসিনা সরকারের পতনের খবরে ছাত্র-জনতা রাজপথে বিজয় মিছিলসহ উল্লাসে মেতে ওঠে। হঠাৎ করে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে শেরেবাংলা থানার সামনের চৌরাস্তা সংলগ্ন এলাকায় একদল পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এতে তার ছেলে শাহাবুদ্দিনের মাথায় একটি গুলি লাগে। পরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্সেস হাসপাতালে রাত আটটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছেলের মৃত্যু হয়।

তিনি আরও বলেন, রাতেই তারা শাহাবুদ্দিনের মৃতদেহ নিয়ে ভোলা গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পরদিন সকাল দশটায় নিজ বাড়ির সামনে জানাজা শেষে দাফন করা হয় তাকে। সেদিন পুলিশের গুলিতে আরও কয়েকজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।

শাহাবুদ্দিনের পিতা জানান, অভাবের তাড়নায় বহু বছর আগে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভোলা ছেড়ে ঢাকায় এসেছেন। এক সময় রিকশা চালিয়েছেন। এখন ছোট একটি ভাতের হোটেল দিয়েছেন। অনেক আশা-ভরসা ছিল এই ছেলেকে নিয়ে। তাই শাহাবুদ্দিনের শহীদ হওয়ার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়েছেন তার বাবা।

শাহাবুদ্দিনের মা মনোয়ারা বেগম জানান, তাদের তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে শাহাবুদ্দিন ছিল সবার বড়। অন্য ছেলেরা আলাদা থাকলেও শাহাবুদ্দিন বাবা-মাকে নিয়েই থাকতেন। ছেলে সব সময় বাবা-মায়ের প্রতি আলাদা খেয়াল রাখত। মা-বাবার কোনো কষ্ট সহ্য করতে পারত না এই ছেলে। ছেলের এমন অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তার স্বামীর বয়স হয়েছে, সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটাবেন তাই ভাবছেন।

শাহাবুদ্দিনের ছোট বোন ফাতেমা বলেন, তার অন্য দুই ভাই ঢাকায় আলাদা থাকেন। তাদের চার বোনের বিয়ে হয়েছে। একমাত্র অবিবাহিত ছোট বোন সাথী আক্তার বাবা-মা ও ভাই শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন। আমরা ঢাকায় গেলে এই ভাইয়ের বাসায় গিয়েই উঠতাম।

তিনি আরও বলেন, বাবার ছোট ভাতের হোটেলের আয়ের পাশাপাশি সিএনজি চালিয়ে পরিবারের মূল আয়ের জোগান দিত ভাই শাহাবুদ্দিন। দুটি ছোট মেয়ে নিয়ে ভাবী খুবই সমস্যায় রয়েছেন। তাই সরকার তার পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন এমনটাই প্রত্যাশা তার।

শহীদ শাহাবুদ্দিনের বড় মেয়ে লামিয়া জানায়, তার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাবে। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। বাবার মৃত্যুর পরে এখন লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপি-যুবদলের তিনজনকে অব্যাহতি

রাব্বানীর জিএস পদ অবৈধের সুপারিশে রাশেদের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ পুলিশকে চীন দূতাবাসের কম্পিউটার উপহার

নানা কর্মসূচিতে রাজধানীতে বিশ্ব নরসুন্দর দিবস পালিত

সেতু বিভাগের সচিবের জিআইসিসি সম্মেলনে অংশগ্রহণ

জামায়াতের সঙ্গে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের বৈঠক

ঘুমের মধ্যেই না ফেরার দেশে অস্কারজয়ী রবার্ট রেডফোর্ড

ভাঙ্গায় সরকারি দপ্তরে নাশকতাকারীদের বিচারের দাবিতে বিএনপির শান্তি মিছিল

গলায় বাদাম আটকে নবম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু

‘ঋণে জর্জরিত মানুষটির চল্লিশা যারা খেলেন, খাবার কীভাবে তাদের পেটে নামল’

১০

এবার দেশের বাজারে আরও বাড়ল স্বর্ণের দাম

১১

পৃথক ফৌজদারি ও পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা করল সরকার

১২

আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব : গণতন্ত্র মঞ্চ

১৩

শুরুতে ঝড়, শেষে ম্লান বাংলাদেশ

১৪

টাঙ্গাইলে সরকারি চাল উদ্ধার

১৫

১৭ বিয়ে করা সেই বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

১৬

অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে : জুলাই মঞ্চ

১৭

এশিয়া কাপ থেকে সরে দাঁড়ালে কত টাকার ক্ষতির মুখে পড়বে পাকিস্তান?

১৮

সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ডে আগুন, ৮ শ্রমিক দগ্ধ

১৯

এলডিসি থেকে উত্তরণে দেশের বাণিজ্য সুবিধা সংকুচিত হতে পারে : তারেক রহমান

২০
X