বাসস
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বাসসের প্রতিবেদন

‘সবার আব্বু আসে, আমার আব্বু আসে না কেন?’ প্রশ্ন ছোট্ট রাইসার

বাম থেকে শহীদ ইউসুফ সানোয়ারের মা মরিয়ম বেগম, একমাত্র সন্তান ইসরাত জাহান রাইসা এবং স্ত্রী রেহেনা আক্তার রানু স্ত্রী। ছবি : সংগৃহীত
বাম থেকে শহীদ ইউসুফ সানোয়ারের মা মরিয়ম বেগম, একমাত্র সন্তান ইসরাত জাহান রাইসা এবং স্ত্রী রেহেনা আক্তার রানু স্ত্রী। ছবি : সংগৃহীত

‘সবার আব্বু আসে, আমার আব্বু আসে না কেন, কবে আসবে, আব্বুকে তাড়াতাড়ি আসতে বলো না মা।’ প্রতিদিন মেয়ের এমন অসংখ্য নিষ্পাপ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার গোবিন্দপুরের সাতঘর এলাকার শহীদ ইউসুফ সানোয়ারের স্ত্রী রেহেনা আক্তার রানুকে।

সংবাদমাধ্যমকে রেহেনা আক্তার জানান, শহীদ ইউসুফ সানোয়ারের একমাত্র সন্তান ইসরাত জাহান রাইসা। সে স্থানীয় ইছাপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। বাড়ির সামনে শহীদ ইউসুফ সানোয়ারের কবরের সামনে স্থানীয়রা তার স্মরণে ছবি দিয়ে একটি ব্যানার লাগিয়েছিল। কিন্তু আমার মেয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসা যাওয়ার সময় তার বাবার ছবি দেখে কান্নাকাটি করে।

পরে স্থানীয়দের অনুরোধ করে সে ব্যানার আমি সরিয়ে ফেলি। মেয়ে তার বাবাকে হারিয়েছে, আমি হারিয়েছি স্বামীকে। আমরা এখন কোথায় যাব? কী করব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। স্বামীকে হারিয়ে আজ অসহায় হয়ে পথে বসার মতো অবস্থা হয়েছে আমাদের।

রাজধানীর পুরান ঢাকার কলতাবাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রেতা ইউসুফ সানোয়ার (৪০) গত ২০ জুলাই দেশব্যাপী কারফিউ জারির প্রথম দিন ছোট ভাই খোকনকে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে শনির আখড়ায় গুলিবিদ্ধ হন। এর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে ফেরার পথে শনির আখড়ায় নেমে কিছুদূর হেঁটে অন্য কোনো যানবাহন ধরতে চেয়েছিলেন ইউসুফ। শনির আখড়ার ঢালে পৌঁছালে হঠাৎ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পেছনে ছিলেন খোকন, তার স্ত্রী মারজান বেগম ও খালা শিরিন আক্তার। তিনজন তাকে ধরাধরি করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিলে তারা গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শহিদ ইউসুফ সানোয়ারের মা মরিয়ম বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার আগে বড় পুত (ছেলে) ইউসুফকে বলে গেছিলো আমাকে দেইখা রাখতে, আজ তো সে নাই, আমাদের কে দেখবে।

পাঁচ ভাইয়ের যৌথ পরিবারে তার ভূমিকা বেশি ছিলো। আমার অন্য ছেলেরা ঢাকায় কাজ করে। কেউ মুদি দোকানের কর্মচারী, একজন সিএনজি চালক, ইলেকট্রনিক্স মিস্ত্রি ও অপরজন গার্মেন্টসে চাকরি করে। ইউসুফই সবাইকে দেখাশুনা করতো। এখন সে তো নাই। আমাদের কথা বাদ দিলাম। তার একটি মাত্র মাইয়া (কন্যা) সন্তান। সে বাবা হারা। তার বউ বাচ্চারা কীভাবে চলবে। এসব চিন্তায় ঘুম অসে না। হাসিনা এটা কী করল? আমার পুতরে মাইরা সবাইরে ভাসাইয়া দিল। তার বিচার কি অইবো না?

শহীদ ইউসুফের প্রতিবেশি ও স্বজন জানে আলম, আশিকুর রহমান, লাকি আক্তারসহ অনেকে জানান, বর্তমানে পরিবারটি খুবই অসহায়। বড় ছেলে হিসেবে তার ওপর সবাই নির্ভরশীল ছিলো। এখন তার স্ত্রী ও মেয়ে কার ওপর কতদিন নির্ভরশীল থাকবে? শিশু মেয়েটা বাবার জন্য প্রতিদিন কান্না কাটি করে। এমন নির্মম চিত্র খুবই কষ্টকর। আমরা এর বিচার চাই এবং অসহায় পরিবারটিকে সহায়তার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

এদিকে যাত্রাবাড়ির শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রেতা ইউসুফ সানোয়ার পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে নিহতের শ্যালক মামুনুর রশীদ এ মামলা করেন।

এ মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাব্বত আলী।

এ বিষয়ে নিহত ইউসুফ সানোয়ারের শ্যালক মামুনুর রশীদ বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ গুলি করে আমার বোন জামাইকে হত্যা করেছে। আমার বোন স্বামী হারা হয়েছে। অবুঝ ভাগনি রাইসা এতিম হয়েছে, বাবার সোহাগ আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। এ ঘটনায় আমি মামলা করেছি।

লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, নিহতের পর আমরা তার বাসায় গিয়েছিলাম। খোঁজখবর নিয়েছি। সকল তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে সরকারি সহযোগিতা আসলে বা নির্দেশনা পেলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মামদানির সঙ্গে শুক্রবার বসবেন ট্রাম্প

শীত এলেই কি চুল পড়ে বা ভেঙে যায়, বিশেষজ্ঞ জানালেন যত্নের উপায়

নভেম্বরেই কি দেশে শৈত্যপ্রবাহ আসছে?

চাঁদাবাজদের রুখতে হলে প্রস্তুতি নিতে হবে : ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে কতটা প্রভাব ফেলবে ‘হাসিনা ইস্যু’

ট্রাম্পের জলবায়ু নীতিতে বাড়তে পারে ১৩ লাখ মৃত্যু

গয়না খুলে কয়েদির পোশাকে মাধুরী!

আজ থেকে নতুন দামে স্বর্ণ বিক্রি শুরু, ভরি কত

হিমেল বাতাসে ১৩ ডিগ্রির ঘরে তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা

নিরাপদ থাকতে ব্রাউজারে যা ব্যবহার করবেন

১০

তোপের মুখে রাম চরণের স্ত্রী

১১

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল

১২

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে হাইড্রোলিয়া জেইলানিকা ফুল

১৩

শততম টেস্টে শতক হাঁকিয়ে ইতিহাস গড়লেন মুশফিক

১৪

বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশ, বাংলাদেশের ম্যাচ কবে কার বিপক্ষে

১৫

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চায়ের দোকানে থাকা ৪ জন দগ্ধ

১৬

চালু হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

১৭

৩৬ ঘণ্টার হরতাল চলছে

১৮

নাশতার জন্য সেরা ১২ খাবার

১৯

কেমন থাকবে আজ ঢাকার আবহাওয়া

২০
X