সনাতন ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্য-ভক্তদের কখনোই উদ্যোম ও সাহস না হারানোর আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকাস্থ রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালন পর্ষদের সভাপতি বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার।
শুক্রবার (১৬ মে) দুপুরে রাজধানী ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের স্বামী অক্ষরানন্দ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। এদিন বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদের (বাংলাদেশ) ২৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় ‘বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার বলেন, আপনারা কখনোই উদ্যোম ও সাহস হারাবেন না। এটাকে জাগরিত রাখবেন। আপনারা সব সময় বিশ্বাস করবেন, এই দিব্য ত্রয়ীর (রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, মা সারদা দেবী ও স্বামী বিবেকানন্দ) হাত আপনার মস্তকে প্রসারিত। তাদের আশীর্বাদ আপনারা সব সময় পাচ্ছেন, আমরা পাচ্ছি। সুতরাং কোনো পরিস্থিতিতেই আমরা যেন হতোদ্যম না হই।
বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদের (বাংলাদেশ) এই উপদেষ্টা বলেন, সত্য, ত্যাগ, সেবা এবং প্রেম- এই চারটি জিনিস স্বামীজীর ভাবাদর্শ। এগুলোকে আপনারা সবসময় বিবেচনায় নিবেন আপনাদের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক দেবাশীষ পাল বলেন, বিবেকানন্দের সৈনিকদের বলব, শুধু ধর্মচর্চা করলে হবে না, সাহসীও হতে হবে। এ দেশ আমাদের জন্মভূমি। স্বর্গের চেয়েও গরিয়সী। সুতরাং এ দেশ ছেড়ে আমরা যাব না।
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে মতের পার্থক্য থাকবে। কিন্তু আমাদের স্বার্থের প্রশ্নে আমরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমাদের স্বার্থ একটাই, আমি হিন্দু।
মহারাজ-ধর্মগুরুদের উদ্দেশে অধ্যাপক দেবাশীষ পাল বলেন, আপনারা কোনো বিশেষ দলের হবেন না। আমরা সবাই আপনাদের কাছে যাব। আপনারা এটা নিশ্চিত করবেন।
এই মহতী অনুষ্ঠানে আশীর্বচন ও দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন ঢাকাস্থ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ এবং বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদের (বাংলাদেশ) প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রধান উপদেষ্টা স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজী মহারাজ।
স্বামী অক্ষরানন্দজীর অনুপ্রেরণা ও সার্বিক সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং শুভানুধ্যায়ীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালের ১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ বাংলাদেশ। স্বামী অক্ষরানন্দজী ছিলেন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা।
বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদের (বাংলাদেশ) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আশুতোষ রায়ের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক দুর্জয় সোহানী ও ঢাবির শিক্ষার্থী শুভ হালদারের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- ঢাকাস্থ রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালন পর্ষদের সহ-সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, হবিগঞ্জস্থ রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী বেদময়ানন্দজী মহারাজ, দিনাজপুরস্থ রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী বিভাত্মানন্দজী মহারাজ, বাগেরহাটে অবস্থিত রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী গুরুসেবানন্দজী মহারাজ, নারায়ণগঞ্জস্থ রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী একনাথানন্দজী মহারাজ, ফরিদপুরস্থ রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী সুরবরানন্দজী মহারাজ, চাঁদপুরস্থ রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী স্থিরাত্মানন্দজী মহারাজ, ময়মনসিংহস্থ রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী সন্ততানন্দজী মহারাজ, বরিশালে অবস্থিত রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী বিজিতাত্মানন্দজী মহারাজ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রীতম নাগ।
দিনের অনুষ্ঠানমালার শুরুতে সেখানে স্বামীজীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। ‘বীর সেনাপতি বিবেকানন্দ’ শিরোনামে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন ঢাকাস্থ রামকৃষ্ণ মঠের সন্ন্যাসী স্বামী পূণ্যদানন্দ। বার্ষিক সাধারণ সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির বার্ষিক কার্যক্রমের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদের (বাংলাদেশ) সাধারণ সম্পাদক ড. সুকান্ত রায় এবং বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ আশুতোষ ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, বর্তমান সহসভাপতি অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে অতিথি এবং ভক্তদের মধ্যাহ্ন প্রসাদে আপ্যায়ন করা হয়।
মন্তব্য করুন