পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিপথগামী রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অপসারিত কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি অযৌক্তিক ও শৃঙ্খলা বহির্ভূত বলে জানিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায় সংস্থাটি।
বিজ্ঞপ্তি সংস্থাটি জানিয়েছেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সমাধানযোগ্য যৌক্তিক সুযোগ-সুবিধাদি প্রদানের লক্ষ্যে প্রতি মাসে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সমিতিসমূহ পরিদর্শন করে প্রত্যেক সমিতির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে আন্তরিকভাবে সবার সাথে সাক্ষাৎপূর্বক তাদের যৌক্তিক সুযোগ-সুবিধাদি ইতিবাচক জ্ঞাত হয়ে তা দ্রুততম সময়ে সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ চলমান রয়েছে। মতবিনিময় ও ইতিবাচক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা, প্রণোদনা ও কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি করেছে।
বাপবিবো এবং পবিসের জন্য অভিন্ন সার্ভিস কোড ও একীভূত করার বিষয়টি সরকার/রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত, এটি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বা সংস্থা প্রধানের এখতিয়ারভুক্ত নয়। এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এ বিষয়টি কেন্দ্র করে সম্মানিত গ্রাহকদের জিম্মি করে অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না।
সরকারি চাকরি বিধি ভঙ্গকারীদের এবং দেশদ্রোহী কাজে সম্পৃক্তকারীদের চাকরিচ্যুত করা হবে মর্মে সরকার সংস্কারমূলক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। গ্রাহক সেবা বিপর্যয় ঘটিয়ে ব্ল্যাক আউটের মতো অস্থিতিশীল ও দেশকে অকার্যকর করার কাজ করেছে অপসারিত কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়ায় গ্রাহককে মৃত্যুর মুখে ফেলে দিয়েছিল যার ফলে নেত্রকোনায় একজন রোগী হাসপাতালে বিদ্যুতের অভাবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে, যা রাষ্ট্রদ্রোহ কাজের শামিল।
দেশকে উন্নত ও যুগোপযোগী করার জন্য সরকার যে সংস্কারমূলক কাজ করে যাচ্ছে তা সময়ের দাবি। ধৈর্য ও শৃঙ্খলার সাথে এ সংস্কার কাজে সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। রাষ্ট্র সংস্কার কালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা ও রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের শামিল, যা রাষ্ট্র ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক কোনো মতেই মেনে নেওয়া হবে না।
সরকারি আদেশে পবিসসমূহে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের স্বামী/স্ত্রী একই পবিস/কাছাকাছি কর্মস্থলে বদলি/পদায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৫৪জন স্বামী/স্ত্রীকে তাদের চাহিদা/আবেদন মোতাবেক পছন্দের কর্মস্থলে বদলি করা হয়েছে। ৩৫ স্বামী/স্ত্রীর সমন্বয় বদলি প্রক্রিয়া চলমান আছে, যা একটি বিরল নজির। বদলি চাকরির বিধি অনুসারে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এটি কোন শাস্তি বা হয়রানি নয়। নতুন পবিসে বদলির মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভিন্ন পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে, যা তাদের পেশাগত দক্ষতা ও সমস্যা মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং তাদের অভিজ্ঞতা ও কর্মপদ্ধতির আদান প্রদান ঘটেছে, যা সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে সহায়ক হয়েছে বিধায় বাপবিবো ও পবিসের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। কাজের প্রতি তাদের স্পৃহা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ, বাপবিবোর্ড ও পবিসের উদ্যোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন যৌক্তিক সুযোগ সুবিধা ইতোমধ্যে প্রদান করা হলেও গ্রাহক সেবাকে বাধাগ্রস্ত করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যক্তিগত সুবিধা হাসিল করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের অযৌক্তিক কার্যক্রম প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে পুনরায় ষড়যন্ত্রের জাল বুনে ২১ মে ২০২৫ ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করেছে, যা দাপ্তরিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান করার শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এ বিষয়ে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার/জেনারেল ম্যানেজার কর্তৃক জানানো হয়েছে যে, এহেন পরিস্থিতিতে তাঁরা সমিতির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে স্টাফ সভা করেছেন। স্টাফ সভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ জানিয়েছেন যে, অপসারিত ও বিপথগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেছে, তাদের সাথে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। সরকার, বাপবিবোর্ড ও পবিসে চাকরি বিধিমালা মেনে তারা সকলে কর্মস্থলে উপস্থিত আছেন। সরকারি বিধি বিধানের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল ও কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন । এছাড়াও গ্রাহক সেবার স্বার্থে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত স্টেশন লিভ না করার জন্য সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার/জেনারেল ম্যানেজারগণ নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং এই আদেশ অমান্য করা হলে পবিস চাকরি বিধি অনুযায়ী অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পল্লী বিদ্যুতায়ন একটি অত্যাবশ্যকীয় সেবামূলক কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্মানিত ৩ কোটি ৭০ লক্ষ গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের স্বার্থে এই বিশাল কর্মযজ্ঞের কর্ণধার হিসেবে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও সকল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুষ্ঠু ও সুশৃংখলভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সততা, নিষ্ঠা, জবাব দিহিতা ও চাকরি বিধি যথাযথভাবে প্রতিপালনপূর্বক পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে শৃঙ্খলার সাথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সদা সচেষ্ট ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
মন্তব্য করুন