‘দেশে নারীদের একটি বড় অংশ পিরিয়ড নিয়ে এখনো সচেতন নয়। অথচ এটি কোন লজ্জার বিষয় না। এ জন্য আরও সচেতনাতা জরুরি। আমরা একসঙ্গে চেষ্টা করবো সামাজিক ট্যাবুগুলো ভাঙতে, যেগুলো বহুদিন ধরে নারীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’
নারীদের মাসিক চলাকালে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ফ্রেশ অনন্যা এবং পিএজিএসবি’র প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
আজ শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর শেরাটন হোটেলে এ প্যানেল আলোচনাটি আয়োজন করে দৈনিক আমাদের সময়। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই)-এর জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ‘ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন’ এবং পেডিয়াট্রিক অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট গাইনিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিএজিএসবি) পৃষ্ঠপোষকতায় ‘টুগেদার ফর এ মেনস্ট্রুয়েশন-ফ্রেন্ডলি ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক এ প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনার উদ্বোধন করেন পিএজিএসবি সভাপতি অধ্যাপক কোহিনূর বেগম। তিনি বলেন, ‘দেশে নারীদের একটি বড় অংশ পিরিয়ড নিয়ে এখনো সচেতন নয়। এটি কোন লজ্জার বিষয় না। আমরা একসঙ্গে চেষ্টা করবো সামাজিক ট্যাবুগুলো ভাঙতে, যেগুলো বহুদিন ধরে নারীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসক, পৃষ্ঠপোষক, গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বিশ্বাস করি-এই আলোচনা সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি ভবিষ্যতের প্রজন্মকে আরও সচেতন, সহানুভূতিশীল এবং স্বাস্থ্যবোধ সম্পন্ন করে তুলবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমজিআই ডিরেক্টর ব্যারিস্টার তাসনিম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা নারী-পুরুষ সমাজে সবাই এক সঙ্গে কাজ করি। কিন্তু পিরিয়ড নিয়ে এখনো আমাদের মধ্যে লজ্জা কাজ করছে। যা এই সময়ে এসে ভাবাই যায় না। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করাটা খুবই জরুরী।’
সেমিনারে পিরিয়ডবিষয়ক একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা করেন পিএজিএসবি’র মহাসচিব অধ্যাপক গুলশান আরা। তিনি বলেন, ‘মাসিক হল একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। এই সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা সম্ভব। মাসিক সম্পর্কে কোনো ধরনের লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ করা উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাসিক চলাকালীন যোনিপথের পিএইচ লেভেল পরিবর্তিত হয় এবং এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।’
ডা. তানিয়া রহমান মিতুলের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় প্রায় ৫০ জন ডাক্তার অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- এমজিআই সিনিয়র জিএম (ব্র্যান্ড) কাজী মো. মহিউদ্দিন এবং দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাইনুল আলম, অনলাইন ইনচার্জ মঈন বকুল ও হেড অব ডিজিটাল মার্কেটিং সরোয়ার কবির শাকিল। আলোচনায় বক্তারা পিরিয়ড-সংক্রান্ত বিভিন্ন জানা-অজানা, সামাজিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং সেগুলো কাটিয়ে উঠতে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮-এর তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে মাত্র ২৯ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে। অর্থাৎ প্রায় ৭১ শতাংশ নারী এখনও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। পিরিয়ডের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করার ফলে সার্ভিক্যাল ইনফেকশন হতে পারে। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহারের ফলে পরবর্তীতে বন্ধ্যাত্ব এমনকি ক্যান্সার-এরও ঝুঁকি থাকে। এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা।
সেই সঙ্গে নারীদের পিরিয়ডের ট্যাবু ভাঙতে ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন-এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে এ প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য করুন