দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা, শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, শ্রীকৃষ্ণ পূজাসহ নানা আয়োজনে শনিবার (১৬ আগস্ট) উদযাপিত হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আরাধ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি শুভ জন্মাষ্টমী উৎসব। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশে উৎসব উদযাপিত হয়।
উৎসবের মূল অনুষঙ্গ ছিল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। যেটি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি এবং ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের যৌথ উদ্যোগ পলাশী মোড় থেকে শুরু হয়ে জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে গুলিস্তান মোড়, নবাবপুর রোড, রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হয়।
বিকেলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির সংলগ্ন পলাশী মোড়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল এবং সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে এভাবে তিন বাহিনী প্রধানের একত্রে জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা উদ্বোধন করার ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।
জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাজল দেবনাথ, অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, জয়ন্ত সেন দীপু, মিলন কান্তি দত্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা হীরেন্দ্রনাথ সমাজদার হীরু, মঙ্গল চন্দ্র ঘোষ, অ্যাড. তাপস কুমার পাল, অধ্যপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, পূরবী মজুমদার, বাবুল দেবনাথ, অ্যাড. শ্যামল কুমার রায়, রমেন মন্ডল, শুভাশীষ কুমার বিশ্বাস সাধন, পদ্মাবতী দেবী, বিপ্লব দে, অ্যাড. কিশোর কুমার বসু, তাপস কুমার কুন্ডু, সাগর হালদার, গিরিধারী সাহা, পরিমল ভৌমিক প্রমুখ।
হিন্দু পুরাণমতে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের জন্য এ দিন মথুরায় কংসের কারাগারে মা দেবকী ও বাবা বসুদেবের ঘর আলো করে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ- এই বিশ্বাস ধারণ করেই দিবসটি উদযাপন করে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তাদের আরও বিশ্বাস, দুষ্টের দমন করতে এভাবেই যুগে যুগে ভগবান মানুষের কাছে নেমে আসেন এবং সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করেন।
জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল নামে। শ্রীকৃষ্ণের রথ, রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি, কংসের কারাগার, রাম-সীতা, লব-কুশসহ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনের নানা অংশের আদলে সেজে শোভাযাত্রায় অংশ নেন ভক্তরা। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে ঢাকা মহানগর ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাক, মিনিট্রাক, পিকআপ, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি নিয়ে ভক্তরা ঢাকেশ্বরী মন্দির, পলাশী মোড়সহ আশপাশের এলাকায় মিলিত হন। নানা দৃশ্যপট নিয়ে ধর্মীয় আঙ্গিক বজায় রেখে রাজধানীর প্রতিটি মন্দির এবং হিন্দু সংগঠনগুলোও শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া শোভাযাত্রায় সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও অনেকে বাড়িঘর এবং রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দর্শন করে মনের ইচ্ছা পূরণ করেন।
এর আগে সকাল ৮টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞের মাধ্যমে জন্মাষ্টমীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। গীতাযজ্ঞ পরিচালনা করে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শংকর মঠ ও মিশন। এ ছাড়া রাতে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে অনুষ্ঠিত হয় কৃষ্ণপূজা।
এ দিকে শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫১তম জন্মাষ্টমী মহোৎসব উদযাপন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকে চারদিনব্যাপি নানা কর্মসূচি পালন করছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ-ইসকন বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে গতকাল সকাল ৮টায় শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ, সকাল ১০টায় কীর্তনমেলা, বিকেলে আলোচনা সভা, সন্ধ্যায় সন্ধ্যা-আরতি, এরপর শ্রীকৃষ্ণলীলামৃত পাঠ এবং রাতে শ্রীকৃষ্ণের মহাভিষেক অনুষ্ঠান হয়। ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচিতে জন্মাষ্টমী উদযাপন করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
মন্তব্য করুন