কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:০৬ পিএম
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এডিসি হারুনকে নিয়ে যা বলছেন বাবা

বাম থেকে এডিসি হারুন ও তার বাবা। ছবি: কালবেলা
বাম থেকে এডিসি হারুন ও তার বাবা। ছবি: কালবেলা

ছাত্রলীগ নেতাদের থানায় নিয়ে পেটানোর ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ। এ ঘটনার পর তার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে কথা বলেছেন হারুনের বাবা।

তবে হারুনকে নিয়ে কী বলছে- তার পরিবার ও এলাকার লোকজন, সেটা জানার চেষ্টা করেছে কালবেলা। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) হারুনের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের থানাঘাটা গ্রাম এবং আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হারুনের ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক জীবনই এখন এলাকার মানুষের আলোচনার কেন্দ্রে।

জানা গেছে, হারুনের বাবা জামালউদ্দীন গাজীর বাড়ি ছিল বালিয়াখালী গ্রামে। তবে ছেলেদের জন্মের আগ থেকে তারা থানাঘাটা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। জামালউদ্দীন গাজী মাড়িয়ালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। হারুনের মা শেফালী বেগম একজন গৃহিণী।

বাবার কর্মস্থল মাড়িয়ালা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন হারুন। পরে সাতক্ষীরা ও ঢাকায় পড়াশোনা করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির (টিপু-বাদশা কমিটি) বন ও পরিবেশবিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন হারুন। তার ছোট ভাইয়ের নাম শরীফুল ইসলাম। তিনি সাইফুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়াবিষয়ক উপ-সম্পাদক ছিলেন। শরীফুল বর্তমানে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন কর্মকর্তা। তবে তার পরিবারের আর কেউ সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।

হারুনের বাবা জামালউদ্দীন গাজী বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার দুই ছেলে সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতি করত। ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর থেকে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। মূলত গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি ও আমার ছোট ছেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু হেনা সাকিলের পক্ষে থাকায় বর্তমান স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানের লোকজন আমাদের জামায়াত বানানোর অপচেষ্টা করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক। অনেক কষ্টে ছেলেদের পড়াশোনা শিখিয়েছি। এলাকায় আমাদের একটি বাড়ি ছাড়া অঢেল সম্পত্তি নেই। বর্তমানে আমরা ঢাকায় অবস্থান করছি। বাড়িতে তালা দিয়ে এসেছি। ছেলের বিপদের সময় যারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে অপপ্রচার করছে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম।’

হারুনের রাজনীতির বিষয়ে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে মিশ্র তথ্য। কেউ বলছেন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত; আবার কেউ বলছেন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি করেছেন হারুন।

আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক দীপঙ্কর বাছাড় বলেন, হারুন ও তার ভাই ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তবে তার নানা হাজরাখালী গ্রামের বাবর আলী সানা মুসলিম লীগ ও জামায়াতের রাজনীতি করতেন। তাদের পরিবারের অন্যরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

হারুনের নিজগ্রাম থানাঘাটার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী মোড়ল বলেন, হারুন চাকরি পাওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু হেনা সাকিল বলেন, ‘হারুনের পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে গত দুটি সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হারুনের বাবা-মা নৌকার পক্ষে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার নানার পরিবারের সঙ্গে জমাজমি নিয়ে বিরোধের কারণে ইউনিয়নের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন জোয়ারদার ও তার ছেলে পলাশ বিভিন্ন স্থানে তাকে জামায়াত-বিএনপি বানানোর চক্রান্ত করছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম বর্ষে হারুন জিয়া হল ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাকের ছত্রছায়ায় থেকে গণহলে অবস্থান করতেন।’ তবে হারুন সরাসরি ছাত্রদল করতেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি।

শ্রীউলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সরদার বলেন, ‘এডিসি হারুন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার চাকরির সময়কালে আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তার চাকরির সময় কয়েক দফায় তাকে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি। তবে চাকরি পেয়ে সে নিজ দলের নেতাকর্মীদের বেআইনিভাবে মারপিট করবে এমনটি আশা করিনি।’

এদিকে এডিসি হারুনের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য দেখা যাচ্ছে। অনেকই বলছেন তিনি জামায়াত-বিএনপির কর্মী। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের দাবি, হারুন ও তার ভাই ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, এডিসি হারুন ছাত্রদলকর্মী ছিলেন এবং তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

তবে বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুন যখন সাতক্ষীরায় পড়াশুনা করতেন সে সময়কার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমান সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আখতার হোসেন বলেন, ‘এডিসি হারুন ও তার ছোট ভাই সাতক্ষীরা ডে নাইট কলেজে লেখাপড়া করত। সে সময় ওই কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি ছিল না। তবে তারা দুই ভাই আমার সঙ্গে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করত। এরপর তারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডানা মেলেছে স্বপ্নের পাঁচপুকুরিয়া সেতু

সীমান্তে ১১ বাংলাদেশিকে বিএসএফের পুশইন

জেনেভা ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান, মাদক-অস্ত্রসহ আটক ১১

অপর্ণা সেনের প্রেমে পড়ে বাংলা শিখেছিলেন কমল হাসান

সম্পর্ক গভীর করতে ভালোবাসা বোঝার পাঁচটি ভাষা জানুন

‘কেউ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে বরদাশত করা হবে না’

ডাকসুর এক ভিপি প্রার্থী গ্রেপ্তার

ঢাকায় পা রাখল নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট দল

যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলায় যুদ্ধজাহাজ ও ড্রোন মোতায়েন ভেনেজুয়েলার

মেক্সিকো ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে : রাষ্ট্রদূত আনসারী

১০

রাকসুর নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা

১১

কখনো কোমরপানি, কখনো কোলে চড়ে স্কুলে যায় শত শিক্ষার্থী

১২

সহকর্মীকে নিয়ে পরী মণির গুঞ্জন

১৩

বিপিএল মাতানো ক্রিকেটারকে ‘মুক্তি’ দিলেন আইপিএল খেলা ক্রিকেটার

১৪

ইরান ও পাক সেনাপ্রধানের ফোনালাপ, আলোচনায় ছিল যেসব বিষয়

১৫

বাচ্চা পটি করতে চাইছে না? জেনে নিন কী করবেন

১৬

সিলেটে পাথরকাণ্ডে এবার মাঠে নেমেছে সিআইডি

১৭

ভূমি অফিসের দায়িত্বে ঝাড়ুদার 

১৮

আর চাপ সহ্য করতে পারলেন না ডলি

১৯

তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি 

২০
X