

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশে (কেআইবি) অবিলম্বে একজন জ্যেষ্ঠ ও নিরপেক্ষ কৃষিবিদকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ এবং বর্তমান প্রশাসক আবদুর রব খানের বিরুদ্ধে নিয়োগ ও আর্থিক অনিয়মের বিচার দাবি করেছে এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব)।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এ্যাবের নেতারা কেআইবিতে সংঘটিত আর্থিক অনিয়ম ও প্রশাসনিক দুর্নীতি তদন্তে একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের দাবি জানান। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা এবং কৃষিবিদদের বিরুদ্ধে করা ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানান তারা।
সংগঠনের আহ্বায়ক ড. কামরুজ্জামান কায়সার অভিযোগ করেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি আবদুর রব খানকে ৯০ দিনের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছিল, যার মূল দায়িত্ব ছিল নির্বাচন আয়োজন করে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। কিন্তু তিনি সে দায়িত্ব পালন না করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
ড. কায়সার বলেন, তার মেয়াদ দুই দফায় বাড়িয়ে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত করা হলেও তিনি নির্বাচন আয়োজন করেননি। উল্টো তিনি কেআইবির তহবিল থেকে কোটি টাকার উন্নয়ন, মেরামত ও নিয়োগ বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন।
এ্যাবের সদস্য সচিব শাহাদত হোসেন বিপ্লব অভিযোগ করেন, প্রশাসক হিসেবে উন্নয়নকাজ, নতুন নিয়োগ বা কাউকে চাকরিচ্যুত করার কোনো এখতিয়ার আবদুর রব খানের ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি নিজের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়েছেন এবং কোটেশন ছাড়াই বিভিন্ন কাজে ব্যয় বাড়িয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এসি মেরামতে ৯৩ হাজার টাকার বিল ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ছাদ মেরামতে ১০ লাখ টাকার কাজ ১৫ লাখ টাকা এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপনে ২ লাখ টাকার কাজ ৫ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।
বিপ্লব আরও অভিযোগ করেন, আবদুর রব খান মাসে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বেতন, ১ লাখ টাকার তেল খরচ, ঈদ বোনাস ও নববর্ষ ভাতা নিয়েছেন এবং নিজের পছন্দের অডিটর নিয়োগ দিয়ে ৮ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন।
শাহাদত হোসেন বিপ্লব বলেন, মেয়াদ তিন দফা বাড়ানোর পরও তিনি নির্বাচন আয়োজনের কোনো উদ্যোগ নেননি। বরং গঠনতন্ত্র পরিপন্থি একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন, যার সদস্যরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক সংগঠনের অনুসারী। এসব কর্মকাণ্ডে কৃষিবিদ সমাজে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে এবং তারা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তার অপসারণ দাবি করে আসছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ্যাব নেতারা জানান, তারা সম্প্রতি সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইদুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মহাপরিচালক তাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, আগামী তিন দিনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কৃষিবিদদের সমন্বয়ে নতুন প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং বর্তমান প্রশাসকের মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, কেআইবি কৃষিবিদদের অর্থে গড়া প্রতিষ্ঠান। এটির স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। তারা আবদুর রব খানকে বৈধ নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত অফিসে না আসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরই কৃষিবিদদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও অরাজকতার ‘মিথ্যা মামলা’ করা হয়, যাতে তারা বিস্মিত হয়েছেন। তারা প্রশ্ন তোলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান আমরা অতীতে রক্ষা করেছি, এখনো আমরাই রক্ষা করব। আমরা কেন ভাঙতে যাব?
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ্যাব নেতারা কেআইবিকে অস্থিতিশীল করতে একটি ‘ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তি’র ইন্ধন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদত হোসেন চঞ্চল, সদস্য (দপ্তরের দায়িত্বে) অধ্যাপক জমশেদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন