রাজধানী ঢাকাতে ছড়িয়ে পড়েছে জার্মান তেলাপোকা। এদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রাজধানীর বাসিন্দারা। বালাই দমন সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ঢাকার শতকরা ৮০ ভাগ অ্যাপার্টমেন্টে তেলাপোকার উপদ্রব রয়েছে। এরই মধ্যে দ্রুতহারে বাড়ছে জার্মান তেলাপোকার বিস্তার। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) টিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক আগে থেকেই ঢাকা শহরে তেলাপোকার উপদ্রব ছিল। আবাসিক এলাকা, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল এবং শহরের সর্বত্র দেখা যেত আমেরিকান তেলাপোকা। এটি এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ছিল। বর্তমানে এই তেলাপোকার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তবে, এখন চীনা তেলাপোকা নামে পরিচিত জার্মান তেলাপোকার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। ছোট ছোট এই তেলাপোকাগুলোর কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী। আকারে খুব ছোট হওয়ায়, এরা সহজেই সূক্ষ্ম ফাঁকফোকর দিয়ে এমনকি ঢাকা দেওয়া খাবারেও প্রবেশ করতে পারে। ছোট্ট বাদামি রঙের এই তেলাপোকা দ্রুতই এক ফ্ল্যাট থেকে অন্য ফ্ল্যাটে বংশবিস্তার করে, মহাসমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
নেহা পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী জিয়া উদ্দিন জানিয়েছেন, ঢাকার শতকরা ৮০ ভাগ বাসাবাড়িতে বর্তমানে জার্মান তেলাপোকার উপদ্রব আছে। ঢাকার প্রায় ৫০০ ফ্ল্যাটে তার কোম্পানি বালাই দমন সেবা দিয়েছে। ৯ বছর ধরে এই ব্যবসায় জড়িত আছেন জিয়া উদ্দিন। তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যেই জার্মান তেলাপোকার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ছোট প্রজাতির এই তেলাপোকা মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তবে কীটনাশকের প্রভাবে আমেরিকান তেলাপোকার সংখ্যা কমে গিয়েছে।
জার্মান তেলাপোকার আগমন
ঢাকা শহরে সবসময়ই তেলাপোকার অবাধ বিচরণ ছিল। তবে বিদেশ ভ্রমণ এবং আমদানিকৃত পণ্যের মাধ্যমে জার্মান তেলাপোকার বিস্তার ঘটেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এই তেলাপোকা এসেছে।
বিদেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ, আদা বা রসুনের সঙ্গেও এই তেলাপোকা আসতে পারে। আমদানিকৃত এসব পণ্যের গায়ে এই তেলাপোকার লার্ভা বা ডিম সেঁটে থাকে। পরবর্তীতে তারা বংশ বিস্তার করে। সুতরাং বলা যেতে পারে, আমদানি করা পণ্যের মাধ্যমে প্রথমে মুদি দোকানে যায় তেলাপোকা। এরপর ক্রেতার মাধ্যমে বাসাবাড়িতে এদের ঠাঁই হয়।
জিয়া উদ্দিন জানান, কিছু কিছু পেঁয়াজের গায়ে কালো কালো দাগ দেখা যায়। এগুলোই হলো জার্মান তেলাপোকার পিউপা বা লার্ভা। তাই এগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
জার্মান তেলাপোকা দমনের উপায়
এই জার্মান তেলাপোকা থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায় ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। বিশেষ করে রান্নাঘর যেন পরিষ্কার থাকে সে বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। বালাই দমন সেবাদাতারা জানিয়েছেন, অপরিচ্ছন্ন রান্নাঘরেই জার্মান তেলাপোকার উপদ্রব থাকে। রান্নাঘর পরিচ্ছন্ন থাকলে বাসাবাড়ি তেলাপোকা মুক্ত রাখা সম্ভব। তবে এরপরেও যদি এই তেলাপোকা দূর করা না যায়, তাহলে অবশ্যই বালাই দমন সেবাদাতাদের সাহায্য নিতে হবে।
এই তেলাপোকা দমনের বিষয়ে জিয়া উদ্দিন বলেন, অপরিচ্ছন্ন রান্নাঘর তেলাপোকার স্বর্গরাজ্য। আপনি যদি এটা পরিষ্কার রাখতে পারেন, তাহলে কখনোই তেলাপোকা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। যেসব রান্নাঘর একটু বেশি ময়লা, সেখানেই বাসা বাধে এই তেলাপোকা। অন্যদিকে যারা রান্নাঘর একদম পরিচ্ছন্ন রাখেন– তাদের বাড়িতে তেলাপোকার উপদ্রুপ হয় না।
মন্তব্য করুন