রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সারা দেশের মানবাধিকার আন্দোলন এতোটাই বিস্তৃত হবে যে, মানবাধিকার সম্পকে সকলে সচেতন হয়ে উঠবে। আমরা সচেতন হয়েছি বলেই মার্কিনিদের শিক্ষা দিতে চাই। মার্কিনিদের শিক্ষা এ জন্য দিতে চাই, আমরা তাদের চেয়ে বেশি মানবাধিকার রক্ষা করে থাকি।
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে রোববার সকাল ১১টায় (১০ ডিসেম্বর) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মানবাধিকার দিবস ২০২৩ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আশা করবো আজকের দিনে যেখানে যেখানে মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে , স্মরণ করা হচ্ছে সকলে যেনো একত্রিত হয়ে গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনেন। আমার আন্তরিক অনুরোধ জানাচ্ছি। মানবাধিকারকে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে যেন ব্যবহার না করা হয়। ১৯৭৩ সালে আলজিরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে ভাষণ দানকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।
রাষ্ট্রপতির মতে, মানবাধিকারের দিকটিকে সাবজনীন ও সবার জন্য সমানভাবে দেখতে হবে। কোনো ধরনের বৈষম্য বা পক্ষপাতিত্ব করা চলবে না। আমি আশা করি বিশ্বের যেখানেই মানবাধিকার লংঘিত হবে, যেখানে দলমত, ধম-বণ-নিবিশেষে সকল দেশ মানবাধিকার সংস্থা, মানবাধিকার কমীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হবে। রাষ্ট্রপতি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের উল্লেখ করে বলেন, পরিষ্কার বলেছেন, মানবাধিকার পরিধি, ব্যাপ্তি, সংরক্ষণ, উন্নয়নের নিশ্চিতকরণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ তাদের কাযক্রম সারা দেশে পরিচালিত করছেন। এতে আমি খুশি, আনন্দিত হয়েছি যে, তাদের কাযক্রমে। যতই খুশি হই না কেনো কথার কথা আরো অগ্রগতি হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের যেখানে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটবে সেখানে মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকার কমিশন সেটা নিশ্চিত করেছেন। যেখানে মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে সেখানেই মানবাধিকার কমিশন কাজ করেছেন। সেজন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাই।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় মানবাধিকারের কাজ কারাগার, হাসপাতাল, শিশুসদন পরিদশনসহ সরকারের কাছে সুপারিশ করা। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সুপারিশগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়তা করা।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হতাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানবাধিকার লংঘন হয়েছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আমরা মানবাধিকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতেও এই কাজ অব্যাহত থাকবে। শুধু বাংলাদেশ মানবাধিকারের কাজ করবে না, প্যালেস্টাইনে যেভাবে মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে সেটার ব্যাপারে জাতিসংঘ এবং মানবাধিকারের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদেরকে সচেতন হতে হবে। এটি বন্ধ করতে হবে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দেশের শ্রম অধিকার, শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করার পাশাপাশি সব ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদী কাযক্রম নিরসনে কাজ করছে সরকার। মানবাধিকার লংঘনে গুরুত্বপূণ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবাধিকার দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য স্বাধীনতা, সমতা ও সকলের জন্য ন্যায় বিচার। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে থাকি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শাস্তি, নিখোঁজ, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা, বাল্যবিয়ে, গৃহপরিচারিকা নিযাতন, শিশু হত্যা বিষয়ক অভিযোগ। সবচেয়ে বেশি অভিয্গাগ পেয়ে থাকি জমিজমা বিষয়ক অভিযোগ। এ বছর গত ১০ মাসে ৫৯৫টি অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে শতকরা ৬৫ ভাগ অথাৎ ৩২৫টি নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্থায়ী সদস্য মোঃ সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। ড. কামালউদ্দিন আহমেদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন।
মন্তব্য করুন