একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের গণতদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে পুনঃতদন্ত করে এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিক নেতাসহ বিশিষ্টজনরা।
তারা বলেন, ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সাংবাদিক মানিক সাহা কলম তুলেছিলেন, তিনি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। তার হত্যাকাণ্ডের প্রহসনের রায় বাতিল করে পুনঃতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করতে হবে।’
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে পরিকল্পিত বোমা হামলায় নিহত একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক সাহার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে আয়োজিত স্মৃতিচারণ সভায় এসব কথা বলেন তারা। সভাটির আয়োজন করে সাংবাদিক মানিক সাহার সুহৃদরা।
২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন নির্ভীক সাংবাদিক, পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষানুরাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক সাহা।
সভায় বক্তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মানিক সাহা হত্যাকারীরা কীভাবে পার পেয়ে যায়? এই বাস্তবতা আমরা মেনে নিতে পারছি না।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মানিক সাহা নিজেও জানতেন, তিনি যেভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন সে কারণে তার ওপর হামলা হতে পারে। কিন্তু তারপরও কখনো বিন্দু মাত্র দুশ্চিন্তা তার মাঝে ছিল না। মানিক সাহাসহ আরও সাংবাদিকদের যারা খুন করেছে এই কথা যদি বলতে চাই তাহলে বলতে হবে যারা সত্যের শত্রু তারা এসকল হত্যাকাণ্ড করেছে। কারণ সাংবাদিকরা সব সময় সত্যানুসন্ধানে কাজ করেন। আর যারা মফস্বলে কাজ করেন তাদের চিহ্নিত করা সহজ। তাই তারা কোনো বিষয় নিয়ে কাজ করলে তাদের প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়।
মানিক সাহার হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অনেক সময় দীর্ঘ শত্রুতার কারণে বিচার কার্য বিলম্ব হয়। কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধ্বে আমি সরকারের প্রতি অনুরোধ করব মানিক সাহাসহ যেসব সাংবাদিকরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সুষ্ঠু বিচার পান।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বরেণ্য রাজনীতিক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আইন যদি অন্যায্য হয়- তা হলে সুষ্ঠু বিচার সম্ভব না। মানিক সাহাসহ অনান্য সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের পেছনে আইনের প্রয়োগের অভাবই দায়ী। মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আমাদের একটি দীর্ঘ মেয়াদি আন্দোলন করতে হবে। একটি টাস্কফোর্স গঠন করে মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত পরিকল্পকারীদের উন্মোচন করতে হবে।’
মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের বিচারে একটি ‘গণতদন্ত কমিশন’ গঠনের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, তিনি আমৃত্যু জনমুখী সাংবাদিকতা করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমতার পক্ষে আপসহীন ছিলেন। জনমুখী সাংবাদিকতার জন্যই মৌলবাদী শক্তি তাকে হত্যা করেছে। তার হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে ২০০৬-এ যে রায় হয়েছে তা ছিল গোজামিলের রায়। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের পুনঃঃতদন্ত চাই। এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীসহ জড়িত সকলের বিচারের দাবিতে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
স্মৃতিচারণ সভায় মানিক সাহার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে নানা স্মৃতি তুলে ধরে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, মানিক সাহা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সব সময় স্বোচ্চার ছিলেন। নীতিহীনতাকে পরাজিত করে যদি নীতিনিষ্ঠা আনা যায় বাংলাদেশে, তাহলে মানিক সাহার হত্যার বিচার এই দেশে হবেই।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘মানিক সাহাকে হত্যার বিশ বছর পরও আমরা বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতনের বিচার বরাবরের মতই হচ্ছে না। সাংবাদিকতা, সংস্কৃতি সবকিছুর ওপর হামলা হচ্ছে। মনে হয় এই দেশে কোনো অলিখিত নিয়ম আছে সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হবে না। তাই সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আমাদের অবিলম্বে সোচ্চার হতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, নিউজ২৪-এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল কান্তি, মানবাধিকার কর্মী নুর আলী, সিনিয়র সাংবাদিক আশিষ কুমার দে, কামরুজ্জামান ননি, সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগ নেতা তারেক উদ্দিন তারেক, লায়লা পারভীন সেজুতি, ভানু রঞ্জন চক্রবর্তী প্রমুখ।
মন্তব্য করুন