ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রায় ৭ হাজার ১৫১টি ভাষাভাষী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে হতে যাচ্ছে। যারা নিজেদের ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে। আমরা যে একুশে ফেব্রুয়ারি বা মাতৃভাষা দিবস পালন করছি এটি শুধু আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার জন্যই নয়, বরং এই মাতৃভাষা দিবস হল পৃথিবীর সব নির্যাতিত-নিপীড়িত-অসহায় মানুষের।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর শহীদ মিনারের পাদদেশে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ- মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘সংযোগ-২০২৪’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর নির্যাতিত নিপীড়িত অসহায় মানুষ শিখেছে কীভাবে একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কীভাবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক-শোষক বা এদের দোসরদের মতো ফেসিস্ট শক্তির থেকে মুক্তি এবং স্বাধীনতা অর্জন করা যায়।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর দে বলেন, আজ বিশ্বায়নের কারণে নানাভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাষাগুলো সংকটের মধ্যে আছে। নিশ্চয়ই এ সংকট থেকে বাংলা ভাষা যে মুক্ত আছে, তা কিন্তু নয়। এ কারণে আমাদের জোটবদ্ধতা দরকার।
তিনি বলেন, বাঙালি সব সময় ছোটবদ্ধ জাতি। বাঙালি সব সময় একসঙ্গে বেঁচে থাকার জাতি। বাঙালি সব সময় উদারভাবে বলে, ‘এসো ভাই হিন্দু, এসো ভাই মুসলমান, এসো ভাই বৌদ্ধ, এসো ভাই খ্রিস্টান। আমরা সবাই বাঙালি, আমরা চলো ঝাঁপিয়ে পড়ি।’ এই অসাম্প্রদায়িকতা রয়েছে আমাদের রক্তে, ঐতিহ্যে।
তিনি আরও বলেন, বাঙালি যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, সেটা সীমান্তের এপারেও থাকতে পারে, ওপারেও থাকতে পারে। আমরা সব বাঙালিকেই এই শহীদ মিনারের মুক্ত প্রাঙ্গণে স্বাগত জানাই। এটি এমন একটি জায়গা, যার সঙ্গে আমাদের ভাষার জন্য আন্দোলন এবং রক্ত দেওয়ার ইতিহাস জড়িত আছে।
সারা বিশ্বের বাঙালিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আসুন আমরা সারা পৃথিবীর বাঙালি এক হই। বাংলা শিখার জন্য আমরা এক হই। আর সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আপনাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ভাষা দিবস উদযাপনের জন্য যে আগমন, এই শুভ আগমনের জন্য আপনাদের মাধ্যমে সীমান্তের ওপারে যারা আছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা যে মর্যাদা পেয়েছে, যে স্বীকৃতি পেয়েছে সেজন্য আমরা ভাগ্যবান। কারণ, আমরা যারা বাংলায় উচ্চারণ করি, বাংলায় কথা বলি, বাংলায় সংস্কৃতি সৃষ্টি করি, বাংলায় জাতি রাষ্ট্র সৃষ্টি করি। আমাদের এই ভাষার শক্তির মধ্য দিয়ে এবং আমাদের সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে আমরা বিশ্বনেতৃত্বে যেতে সক্ষম হবো।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক জহিরুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. মাহফুজুল ইসলাম, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ কলকাতার অধ্যক্ষ রেভারেন্ড ডক্টর ফাদার ডমিনিক স্যাভিও এবং ভারতীয় দূতাবাস ঢাকা, বাংলাদেশের প্রতিনিধি জয়ন্ত বর্ষী বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ফাদার অনিল গোমজ, আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক নিপুন দাস।
অনুষ্ঠানটির শুরুতে ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর জাতীয় সংগীত গেয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি পুষ্পাঞ্জলি প্রদানপূর্বক ভারত এবং বাংলাদেশের শিল্পীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।
মন্তব্য করুন