কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৯ এএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কেমন ছিল বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা?

পুরোনো ছবি
পুরোনো ছবি

আজ ১৭ মার্চ। দেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ এই দিনটিতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার বজ্র কণ্ঠে সংগ্রামী হয়ে উঠেছিল লাখো মানুষ। সোচ্চার হয়েছিল নিজেদের অধিকারের দাবিতে।

বাঙালির স্বাধীনতার জন্য জীবনটিকে উৎসর্গ করেছিলেন জাতির এই মহান নেতা। পুরো জীবনটিকেই করে তুলেছিলেন সংগ্রাম মুখর। যার কারণে যেতে হয়েছে কারাগারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেমন ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছেলেবেলা।

শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম

দিনটি ছিল ব্রিটিশ শাসন আমল : ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। পূর্ব বাংলার গোপালগঞ্জ ছিল ফরিদপুর জেলার একটি মহকুমা। এরই অন্তর্গত পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

গোপালগঞ্জের দেওয়ানি আদালতের কোর্ট ক্লার্ক ছিলেন বাবা শেখ লুৎফুর রহমান। আর মা শেখ সায়েরা খাতুন গৃহিণী। তাদের চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে শেখ মুজিব ছিলেন তৃতীয় সন্তান। বাবা-মা আদরের মুজিবুর রহমানকে খোকা বলে ডাকতেন। তবে আকিকা দেওয়ার সময় শেখ মুজিবুর রহমান নামটি দিয়েছিলেন পিতা লুৎফর রহমানের নানা শেখ আবদুল মজিদ। কারও কাছে মুজিব, কারেও কাছে মিয়া ভাই অথবা মুজিব ভাই; কখনো বা তাকে ডাকা হয়েছে শেখ সাহেব নামে।

শিক্ষা জীবনে শেখ মুজিব

গৃহশিক্ষক মৌলভী সাখাওয়াৎ উল্লাহ ছিলেন শিশু মুজিবের প্রথম শিক্ষক। তাঁর একাডেমিক পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ছিল গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯২৯ সালে ৯ বছর বয়সে মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। তার দুই বছর বাদে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন মাদারীপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে।

১৯৩৪ সালে বেরিবেরি রোগ বা গ্লুকোমার কারণে চোখে জটিলতা দেখা দিলে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এ রোগ থেকেই তার চোখে জটিল অসুখ দেখা দেয়। বাবা চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে কলকাতায় পাড়ি জমান। কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিশেজ্ঞ ডা. টি আহমেদ সার্জারিতে সুস্থ হয়ে ওঠেন বাবা-মার আদরের খোকা।

তবে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তার শিক্ষাজীবন থেকে ৪টি মূল্যবান বছর কেড়ে নেয়। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করেন। এখান থেকেই তিনি ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন (বর্তমান মাধ্যমিক পরিক্ষা) পাস করেন। ইন্টারমিডিয়েট বা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৪৪ সালে ইসলামিয়া কলেজ থেকে এখন যেটি মাওলানা আজাদ কলেজ নামে পরিচিত। ১৯৪৭ সালে এখান থেকেই বিএ পাস করেন মিয়া ভাই।

একজন রাষ্ট্রনায়কের আবির্ভাব

শৈশব থেকেই ধীরে ধীরে পরিশীলিত হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা। স্কুলে থাকাকালীন তিনি একবার এক অযোগ্য শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে সব ছাত্রদের নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন।

গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে পড়ার সময় তার জন্য বাড়িতে গৃহশিক্ষক দেওয়া হয়েছিল। গৃহশিক্ষক ছিলেন আবদুল হামিদ, মুজিবুর রহমানের শিক্ষাজীবনে যার অবদান অপরিসীম। গোপালগঞ্জে আবদুল হামিদের একটি সংগঠন ছিল যার নাম ‘মুসলিম সেবা সমিতি’। এর কাজ ছিল দরিদ্র ছাত্রদের খাওয়া ও পড়াশোনায় সহায়তা করা। প্রতি রবিবার মহকুমার মুসলমান বাড়িগুলো থেকে মুষ্টি চাল জোগাড় করা হতো। তারপর সেই চাল বিক্রি করে গরিব ছাত্রদের বই কেনা, পরীক্ষা ও অন্যান্য খরচ চালানো হতো। এমনকি জায়গির ঠিক করার কাজও করা হতো। মিয়া ভাই ছিলেন এই সংগঠনের একনিষ্ঠ কর্মী।

তার মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশনারি হাইস্কুলে পড়ার সময়কার একটি ঘটনা আছে। মুজিব তখন নবম শ্রেণির ছাত্র; পড়াশোনার বাইরেও তিনি বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দেওয়ার সময় হঠাৎ একদিন গ্রেপ্তার হয়ে যান মুজিব। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি ছিল মিথ্যা। তাই ছাত্রদের প্রচণ্ড চাপের মুখে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় স্থানীয় পুলিশ।

শেখ মুজিবুর রহমানের ঘটনাবহুল ছেলেবেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তার পরিচয় হওয়া।

১৯৩৮ সালে শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে আসেন। দেখতে একটু বড় হওয়ায় হাজার ছাত্রদের মধ্যে স্কুল স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের দায়িত্ব পড়ল শেখ মুজিবের ওপর। শহীদ সাহেবকে দলীয়ভাবে সংবর্ধনা দেওয়ার সময় ছাত্রদের পক্ষ থেকে কথা বললেন শেখ মুজিব। এমনকি স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ার কথা জানিয়ে তা সংস্কার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও নিয়ে নিলেন। পরে ওই দাবি পূরণ করা হয়।

কিন্তু যাওয়ার সময় সোহরাওয়ার্দী এই ছোট্ট ছেলেটির সৎ সাহসে মুগ্ধ হয়ে মুজিবুর রহমানের নাম ও বংশ পরিচয় জেনে নিলেন। তাকে কাছে ডেকে নিয়ে আদর করলেন। সেদিনের পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে তিনি মুজিবকে কলকাতায় তার সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন। এভাবেই শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক মঞ্চে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মিলিত প্রচেষ্টার যাত্রা।

মানব দরদী বঙ্গবন্ধুর বিকাশ

শেখ মুজিবুর রহমান যখন ছোট ছিলেন তখন থেকে তার কোমলমতি হৃদয়ে মানুষের প্রতি ভালোবাসার বীজটি ধীরে ধীরে চারায় পরিণত হতে শুরু করে। পরিণত বয়সে সেটা শুধু বিরাট মহীরুহেই রূপ নেয়নি বরং তাতে ফুল ধরাও শুরু করেছে।

কৈশোরে শেখ মুজিবুর রহমান রোদ-বৃষ্টিতে কোনো দরিদ্র ছেলেকে কষ্ট পেতে দেখে তার ছাতা দিয়ে দিতেন। এর জন্য শেখ পরিবারকে মাসে বেশ কয়েকটি ছাতা কিনতে হতো। স্কুলের কোনো বন্ধুর পড়ার বই না থাকলে তাকে মাঝে মধ্যে নিজের বই দিয়ে আসতেন। মাঝে মাঝে দিয়ে আসতেন।

স্কুল ছুটির সময় মা শেখ সায়রা বাড়ির আমগাছটার নিচে দাঁড়িয়ে খোকার জন্য অপেক্ষা করতেন। একদিন দেখা গেল সারা গায়ে চাদর পেঁচিয়ে গুটিশুটি মেরে হেটে আসছে খোকা। ঘটনা জিজ্ঞেস করাতে জানা গেল পথে এক গরিব ছেলের পরনে ছেড়া কাপড় দেখে নিজের পায়জামা-পাঞ্জাবি সব দিয়ে এসেছেন।

একবার টুঙ্গিপাড়ায় চাষিদের ফসল নষ্ট হওয়াতে চাষা-ভূষারা প্রচণ্ড অভাবে পড়ে যায়। অনেকের জন্য দুবেলা ভাতও জোটে না। সারা গ্রামে রীতিমতো দুর্ভিক্ষের ভয়ে সবাই দিনাতিপাত শুরু করে। কিশোর শেখ সাহেব এ পরিস্থিতিতে কিছু একটা করার জন্য ছটফট করছিলেন। উপায়ান্তর না দেখে গরিব কৃষকদের সাহায্যার্থে নিজেদের গোলা থেকে ধান বিতরণের জন্য পিতাকে অনুরোধ করলেন। তাদের নিজেদের ধান কতটুকু আছে তা নিয়ে তার ভাবনা নেই। অভুক্ত মানুষকে খাওয়ানোর চিন্তাটাই সে মুহূর্তে তার কাছে প্রাধান্য পেয়েছিল।

গ্রামের সব ধর্মের লোকদের নিয়ে একসঙ্গে সুখে থাকার দীক্ষা এবং সে অনুযায়ী চেষ্টা ছিল তার ছোট থেকেই। পরে এই চেষ্টাই রূপ নেয় একটি অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণে প্রাণপণ লড়াইয়ে।

সূত্র : ইউএনবি

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যমুনার তীরে বেওয়ারিশ জাহাজ, মালিক কে?

হেডফোনের জন্যই নিভে গেল নোমানের জীবন

উড্ডয়নের পর খুলে পড়ল বাংলাদেশ বিমানের চাকা

টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস

মেহেরপুরে সেনা অভিযানে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত

ছাত্রদল নেতা সাম্যকে হত্যা একটি চক্রান্তের অংশ : এ্যানি

কমিউনিটি ব্যাংক-অ্যাভিনিউ হোটেল অ্যান্ড স্যুইটস ও পিটাস্টপের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে সাত কলেজ

লাম্পি স্কিনে অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যু, আতঙ্কে খামারিরা

১০

গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত শতাধিক

১১

দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার দ্রুত হস্তক্ষেপ চাইলেন জবিসাস সেক্রেটারি 

১২

‘অপারেশন সিঁদুরের’ পর সামরিক বাজেট বিপুল বাড়াচ্ছে ভারত

১৩

পেহেলগামে হামলার অজুহাতে দুই হাজারের বেশি কাশ্মীরি আটক

১৪

দুই দিনের অর্ধদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের

১৫

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দামের বাবা মারা গেছেন

১৬

ফিফা সভাপতির বিলম্বে ক্ষুব্ধ উয়েফা, ফিফা কংগ্রেসে নাটকীয় ওয়াকআউট

১৭

শাহবাগ থানা ঘেরাও ঢাবি শিক্ষার্থীদের 

১৮

ঈদযাত্রায় বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু

১৯

সন্ধ্যার মধ্যে যেসব অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

২০
X