কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৪, ০৬:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এখনো ১০০ কিমি বেগে বাতাস বইছে খুলনায়

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে প্লাবিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ছবি : সংগৃহীত
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে প্লাবিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ছবি : সংগৃহীত

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টার পরপরই মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়।

এরইমধ্যে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে পুরো সুন্দরবন। এ ছাড়া উপকূলীয় অনেক এলাকায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল।

বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়া ও টানা বৃষ্টিতে জেলার কয়েকটি নদ-নদীর পানি ৪ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের পানির চাপে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।

বাগেরহাটের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘এত পানি আগে দেখিনি। ঝড় তো মাঝেমধ্যেই হয়। তবে এবারই মনে হয় এত লম্বা সময় ধরে ঝোড়ো বাতাস হচ্ছে।’

এদিকে রিমালের প্রভাবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার গতিবেগের বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ‌।

সোমবার (২৭ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানান তিনি।

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের কলকাতা শহরে অবস্থিত রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে মোস্তফা কামাল পলাশ‌ বলেন, দুপুর ৩টার সময়ও খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার গতিবেগের বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, রিমাল এমন কিছু উদাহরণ সৃষ্টি করতেছে যে ইতোপূর্বে বাংলাদেশের কোনো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করেনি। সম্ভাবনা অনেক বেশি যে আরও ১ দিন পুরো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ঘণ্টা ৫০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগে বাতাস প্রবাহিত হওয়া অব্যাহত থাকবে। কমপক্ষে আরও ২৪ ঘণ্টা উপকূলীয় এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট উঁচু জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হবে।

এ ছাড়া শক্তির বিচারে না হলেও চরিত্রের দিক থেকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল ছিল ব্যতিক্রম। ধীরগতিতে এটির স্থলভাগে এগিয়ে আসাকে স্বাভাবিক মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড়গুলোর গতি কমে যাচ্ছে। আর এতে আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলে আঘাত হানছে। তারা বলছেন, ভবিষ্যৎ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলো বেশি শক্তিশালী হবে ও সেগুলোর ক্ষতিকর প্রভাবও অনেক বেশি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে মোস্তফা কামাল পলাশ‌ আরও বলেন, গত ২২ মে দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয় যা পর্যায়ক্রমে নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপের স্তর পেরিয়ে ২৫ মে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এটি রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে স্থলভাগে আঘাত হানতে শুরু করে। আমেরিকার জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের পূর্বাভাস অনুসারে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকতে পারে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের স্থলভাগ পুরোপুরি অতিক্রম করতে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত সময় নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি হিসেবে কাজ করে সমুদ্রের গরম পানি। ফলে স্থলভাগে প্রবেশের পরপরই ঘূর্ণিঝড় প্রয়োজনীয় শক্তির অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমী আচরণের কথা বলছে বেশির ভাগ আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল।

ব্যতিক্রমী আচরণ বিশ্লেষণ করে এ গবেষক বলেন, প্রথমত, বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেল বলছে, স্থলভাগে প্রবেশের পরও প্রায় ২৪ ঘণ্টা ঘূর্ণিঝড় শক্তি ধরে রাখবে। দ্বিতীয়ত, দুই দিনের বেশি সময় নিয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগ ত্যাগ করে ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করবে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের ৮টি বিভাগেই রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। চতুর্থত, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রথম পর্যায় লঘুচাপ থেকে শুরু করে ঝড়ে পরিণত হওয়া পর্যন্ত রিমাল অস্বাভাবিক ধীরগতিতে (ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার) সামনে অগ্রসর হয়েছে। অথচ আগে ঘূর্ণিঝড়গুলো ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে আসত। আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলগুলোতে এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় গবেষকরা বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ঘূর্ণিঝড়ের যে বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন, তা রিমালের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়গুলোর চলার গতি (আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় ট্রান্স স্পিড) খুবই ধীর হবে। আমেরিকার জাতীয় আবহাওয়া সংস্থার বিজ্ঞানী জেমস ক্ষীণ ১৯৪৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রমাণ পেয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের চলার গতিবেগ গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে। ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে প্রবেশের পরে চলার গতি ২০ শতাংশ কমেছে বিশ্বব্যাপী। চলার গতি কমে যাওয়ায় সমুদ্রের ওপরে অবস্থান করার সময় অনেক বেশি পরিমাণে মেঘের সৃষ্টি করছে। স্থলভাগে পৌঁছানোর পরে সেই অতিরিক্ত মেঘ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম প্রধান ঘূর্ণিঝড় গবেষক আমেরিকার এমআইটির ক্যারি ইমানুয়েল পরিচালিত ঘূর্ণিঝড়বিষয়ক অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের চলার গতিবেগ কমে যাওয়ার সাম্প্রতিক কালের ঝড়গুলোর প্রভাবে অনেক বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় রিমাল
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সুসজ্জিত গাড়িতে পুলিশ কনস্টেবলের রাজকীয় বিদায়

বালু চুরি, সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

এবার মুরাদনগরে নারীসহ ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা

২০১৮ সালের রাতের ভোট নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক সিইসি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় হাসপাতালের পরিচালক নিহত

হবিগঞ্জে ছুরিকাঘাতে এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত

ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি হবে কি না, জানালেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা

ক্রিকেট ছাড়ার পর রেসলিংয়ে নাম লেখাতে যাচ্ছিলেন সাবেক ইংলিশ তারকা!

তাজিয়া মিছিল নিয়ে ডিএমপির নির্দেশনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির সুযোগ

১০

অপ্রত্যাশিত ধসের আক্ষেপে তাসকিন

১১

ঘুমের মধ্যে দম আটকে যাওয়া কীসের লক্ষণ, হলে কী করবেন?

১২

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক তৌহিদুলের শুধু বদলি নয়, অপসারণ চান কর্মকর্তারা

১৩

আরবের কোথায় গেলে খরচ কম, কোথায় সবচেয়ে বেশি

১৪

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি

১৫

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ? 

১৬

আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

১৭

বাসায় তৈরি ক্রিমেই দূর হবে মুখের দাগছোপ

১৮

বান্দরবানে সেনা অভিযানে কেএনএ কমান্ডারসহ ২ সদস্য নিহত

১৯

বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প

২০
X