ড. মো. আনোয়ার হোসেন
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস

মানবাধিকারের মানদণ্ড যেন অদৃশ্য নির্দেশনায় বাধা 

ড. মো. আনোয়ার হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
ড. মো. আনোয়ার হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

‘ন্যায়ের প্রদীপ’ নামের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটির সদর দপ্তর ঝিমঝিম করে ব্যস্ত। সংস্থার দেশ পরিচালক রাসেল বাবু , তার বিলাসবহুল কাচের অফিসে বসে একটি জরুরি রিপোর্ট পর্যালোচনা করছেন। রিপোর্টটি ছিল একটি দেশের সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দমন-পীড়ন নিয়ে।

রাসেল রিপোর্টে চোখ বোলাচ্ছিলেন, যেখানে ভুক্তভোগীদের হৃদয়বিদারক সব বর্ণনা ছিল। কিন্তু তার মনে খটকা লাগল যখন তিনি দেখলেন যে, রিপোর্টে শুধু সরকারি পক্ষের ওপর আক্রমণের ঘটনাগুলোই জোরালভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিরোধী গোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনাগুলো উল্লেখ থাকলেও, সেগুলোকে খুব হালকাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

অফিসের বাইরে তার সহকারী রাজেশ, সংস্থার অন্যতম প্রধান তহবিলদাতা ‘ওরিয়ন ফাউন্ডেশন’ -এর একজন বোর্ড সদস্যের ছেলে, একটি ফোন কলে ব্যস্ত। ওরিয়ন ফাউন্ডেশন মূলত পশ্চিমা স্বার্থ রক্ষা করে চলে এবং দেশের বর্তমান বিরোধীদের সাথে তাদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব রয়েছে। রিকি ফোনে তার বাবাকে আশ্বস্ত করছে, ‘চিন্তা করবেন না, রিপোর্টে শুধু ওই দিকটাই ফোকাস করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে।’

রাসেল সবটা জানতেন। তিনি জানতেন যে, ‘ন্যায়ের প্রদীপ’-এর মতো আপাতদৃষ্টিতে নিরপেক্ষ সংগঠনগুলো আসলে অদৃশ্য সুতোর টানে পরিচালিত হয়। এই সুতো টানেন তাদের প্রধান তহবিলদাতারা, যারা নিজস্ব রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে মানবাধিকারের মঞ্চ ব্যবহার করেন।

তিনি রিপোর্টটি অনুমোদন করলেন। কারণ তিনি জানতেন, যদি তিনি এটি আটকে দেন, তবে সংস্থার তহবিল কমে যাবে, তার পদমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে এবং সবশেষে সংস্থার নামও খারাপ হবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রিপোর্টটি প্রকাশের সাথে সাথেই তোলপাড় সৃষ্টি হলো এবং বিরোধী দলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ল।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর তারিখে পালিত হয়। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘মানবাধিকার, আমাদের প্রতিদিনের অপরিহার্য বিষয় (Human Rights, Our Everyday Essentials)’। এই প্রতিপাদ্যটি মানুষের প্রতিদিনের জীবনে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরে এবং দেখায় যে কীভাবে মানবাধিকার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে। এর মূল লক্ষ্য হলো– মানবাধিকারের মূল্যবোধকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং এগুলোকে একটি বিমূর্ত ধারণা হিসেবে না দেখে বরং জীবনের অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে মানুষকে উৎসাহিত করা।

২০২৫ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো একক বৈশ্বিক প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি, কারণ সাধারণত বছরের শেষে বা পরবর্তী বছরের শুরুতে বার্ষিক প্রতিবেদনগুলো (যেমন : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের) প্রকাশিত হয়। তবে, মানবাধিকারের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য সূচক, যেমন মানব স্বাধীনতা সূচক ২০২৫ এবং বৈশ্বিক শান্তি সূচক ২০২৫ অনুযায়ী শীর্ষ দেশগুলোর তালিকা নিচে দেওয়া হলো :

মানব স্বাধীনতা সূচকে এই দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবেই মানবাধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে– সুইজারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, এস্তোনিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, সুইডেন এবং লুক্সেমবার্গ।

বৈশ্বিক শান্তি সূচকে এই দেশগুলো আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক স্বাধীনতার উচ্চ মান বজায় রাখার জন্য পরিচিত– আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, স্লোভেনিয়া এবং ফিনল্যান্ড। এই সূচকটি সামাজিক নিরাপত্তা, চলমান অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংঘাত এবং সামরিকীকরণের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ২০২৫ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, যে দেশগুলোতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং গুরুতর মানবাধিকার সংকট অব্যাহত রয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি হলো : আফগানিস্তান : এখানে তালেবান শাসনামলে নারী ও মেয়েদের অধিকারের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

সুদান : দুই বছরের গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটিতে ব্যাপক হারে যৌন সহিংসতা এবং যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যার ফলে লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

মিয়ানমার : এখানে সামরিক জান্তা সরকারের অধীনে পদ্ধতিগত দমন-পীড়ন চলছে এবং শ্রমিক অধিকারসহ অন্যান্য নাগরিক অধিকার মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।

সিরিয়া : এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকট এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।

ইথিওপিয়া : এখানেও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি এবং মানবিক সহায়তার সীমিত সুযোগের কারণে গুরুতর মানবাধিকার সমস্যা বিদ্যমান।

গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো : দেশটিতে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এবং আইনের শাসনের অভাবে গুরুতর মানবাধিকার অপব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে।

উত্তর কোরিয়া : এটি বিশ্বের অন্যতম কঠোর নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র, যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতায় ব্যাপক হস্তক্ষেপ করা হয়।

চীন : উইঘুর মুসলিমদের প্রতি আচরণসহ ভিন্নমত দমন, নজরদারি এবং নাগরিক স্বাধীনতার ওপর কঠোর বিধিনিষেধের জন্য দেশটি সমালোচিত।

রাশিয়া : ইউক্রেনের সাথে চলমান যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণভাবে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর দমন-পীড়নের কারণে মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।

ইরান : এখানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর দমন-পীড়ন, মৃত্যুদণ্ডের হার বৃদ্ধি এবং নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ অব্যাহত রয়েছে।

উপরস্থ দেশগুলোতে সংঘাত, দমনমূলক শাসন এবং আইনের শাসনের অনুপস্থিতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রধান কারণ। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের ২০২৪ সালের বিশ্ব মানবাধিকার র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো অস্থিতিশীল। খোদ আদালত পড়ায় আসামিদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। যদিও, এ সময় গুমের মত মানবতাবিরোধী অপরাধ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সরকার গুমের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সাথে তদন্তে সহযোগিতা করছে।

২০২৫ সালে উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা এবং ধর্মীয় চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে হুমকি দেখা গেছে। ২০২৫ সালের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম স্থানে উঠে এসেছে, যদিও এটি এখনো ‘অত্যন্ত গুরুতর’ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০২৫ সালের বিশ্ব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা এবং নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সহিংসতাসহ মানবাধিকার রক্ষায় এখনো ঘাটতি রয়েছে।

মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে এবং দেশের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সরকার নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে পারে :

আইনের শাসন, সব নাগরিকের জন্য আইনের সমান প্রয়োগ এবং বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার। বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে চলা এবং নির্যাতনের অভিযোগের দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা উচিত। সংবিধান স্বীকৃত মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সম্মান করা এবং এ সংক্রান্ত আইনগুলোর যেন অপব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করা উচিত।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও স্বাধীন করা দরকার, যাতে তারা কার্যকরভাবে অভিযোগ তদন্ত করতে পারে এবং সুপারিশ প্রদান করতে পারে। নারী, শিশু, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী এবং সংখ্যালঘুদের মতো দুর্বল জনগোষ্ঠী যাতে বৈষম্যের শিকার না হয়, তাদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার।

মানবাধিকার রক্ষা কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী হওয়া উচিত। বাংলাদেশের জনগণের ভূমিকা নিম্নরূপ হওয়া উচিত :

প্রতিটি নাগরিকের উচিত তাদের নিজস্ব মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া, যা বাংলাদেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে উল্লেখ আছে। অধিকার জানার পাশাপাশি অন্যদের, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠী যেমন নারী, শিশু, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকারকে সম্মান করা এবং স্বীকৃতি দেওয়া অপরিহার্য। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানবাধিকারের মূলনীতি নিয়ে আলোচনা ও শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত। যখনই মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে দেখা যাবে, তখনই তার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ করা উচিত। নীরবতা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়।

মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের ভূমিকা হতে হবে সক্রিয়, সচেতন এবং ঐক্যবদ্ধ। প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বশীল আচরণ এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একটি ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব।

বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষপাতিত্বের মূল কারণগুলো হলো- অনেক আন্তর্জাতিক এনজিও তাদের দাতা সংস্থার এজেন্ডা বা স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, যা স্থানীয় বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে এবং নিরপেক্ষতাকে প্রভাবিত করে।

সরকার ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের চাপ অনেক সময় মানবাধিকার সংস্থার কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে, ফলে তারা সরকারের সমালোচনা করতে বা নির্দিষ্ট ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিতে দ্বিধা বোধ করে।

মানবাধিকার সংখ্যাগুলোর আদর্শীক ভূমিকা থাকা উচিত। যেমন, সরকারের কোনো চাপ বা প্রভাব ছাড়াই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিরপেক্ষভাবে তদন্ত ও রিপোর্ট করা। এমনকি, ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা প্রদান এবং তাদের পক্ষে আদালতে লড়া, যাতে ন্যায্য বিচার নিশ্চিত হয়।

মানবাধিকার সংস্থাগুলির কার্যক্রম নিয়ে এই গল্পটি লিখে নিবন্ধে সমাপ্তি টানছি : গ্লোবাল ভয়েসেস একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার সংস্থা। তাদের নীতিমালায় নিরপেক্ষতার কথা থাকলেও, বাস্তবে তাদের স্থানীয় কার্যক্রমগুলো যেন এক অদৃশ্য সুতোয় বাধা। সরকার (ক)-এর শাসনামলে দেশে একটি বড় রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পুলিশ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে হালকা বলপ্রয়োগ করে এবং কয়েকজন কর্মী আহত হয়।

মিজানুর রহমান, যিনি সেই সময়ে সংস্থাটির প্রধান ছিলেন, তাৎক্ষণিকভাবে একটি জ্বালাময়ী রিপোর্ট তৈরি করেন। ‘বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে,’ ‘গণতন্ত্র বিপন্ন’, ‘রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন’– এমন সব শব্দ ব্যবহার করে সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মহলে শোরগোল ফেলে দেয়। তারা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায়। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই রিপোর্ট ফলাও করে প্রচার করে। পরবর্তী নির্বাচনে সরকার (ক) হেরে যায় এবং সরকার (খ) ক্ষমতায় আসে, যারা ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী।

কয়েক মাস পর, সরকার (খ)-এর আমলে আরও বড় একটি সমাবেশ হয়। এইবার পরিস্থিতি আরও খারাপ আকার ধারণ করে। পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে, রাবার বুলেট ব্যবহার করে এবং বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়, এমনকি কয়েকজনের মৃত্যুও হয়। মিজানুর রহমান এবারও ঘটনাস্থলে ছিলেন। কিন্তু এবার তার রিপোর্ট লেখার ভঙ্গি সম্পূর্ণ বদলে যায়। তার রিপোর্টে ‘নিপীড়ন’ বা ‘গণতন্ত্র বিপন্ন’ শব্দগুলো আর জায়গা পায় না। তিনি লেখেন : ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বাধ্য হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, ‘সহিংসতা এড়াতে উভয়ের সংযম প্রয়োজন ছিল’ ‘পরিস্থিতি জটিল ছিল’।

আগেরবারের মতো আন্তর্জাতিক মহলে কোনো শোরগোল হলো না। গণমাধ্যমেও খবরটি সেভাবে গুরুত্ব পেল না। এক সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে এই দ্বিমুখী আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি মুচকি হেসে বলেন, ‘প্রতিটি পরিস্থিতি ভিন্ন এবং আমাদের প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতি ও বিদ্যমান আইনি কাঠামোর ওপর নির্ভর করে।’

মানবাধিকার সংস্থাটির ভেতরের খবর হলো, সরকার (খ)-এর সঙ্গে তাদের সদর দপ্তরের সুসম্পর্ক ছিল এবং স্থানীয় কার্যক্রমে ‘নমনীয়’ হওয়ার অলিখিত নির্দেশনা ছিল। মানবাধিকারের মানদণ্ড যেন সরকারভেদে বদলে যাচ্ছিল, আর মিজানুর রহমান কেবল সেই অদৃশ্য নির্দেশনাই পালন করছিলেন।

লেখক : ড. মো. আনোয়ার হোসেন, প্রাবন্ধিক, কথা সাহিত্যিক, প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহল

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুটি বিষয়ের অনুমোদন পেল নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়

পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশ নিয়ে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা

অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সচিবালয়ে অবরুদ্ধ অর্থ উপদেষ্টা, উত্তেজনা চরমে

লালমাটিয়ায় এভেরোজ স্কুলে হামলা, শিক্ষক-কর্মচারী আহত

সুখবর পেলেন প্রাথমিকের ৬৫,৫০২ প্রধান শিক্ষক

ব্যারিস্টার ফুয়াদের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল

তারেক রহমানের আসনে যাকে প্রার্থী করল এনসিপি

বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি, ২ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ পদত্যাগ করেছেন

১০

বাংলাদেশ ১৬ বছর ধরে কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল : তারেক রহমান 

১১

তেজগাঁও কলেজে সংঘর্ষে আহত এইচএসসি শিক্ষার্থী রানা মারা গেছেন

১২

আইফোনের জন্য বন্ধুকে খুন!

১৩

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস / মানবাধিকারের মানদণ্ড যেন অদৃশ্য নির্দেশনায় বাধা 

১৪

হত্যাযজ্ঞের বেদনায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার ভয়ংকর প্রতিশোধ এবং স্বাধীনতার গল্প

১৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অটুট থাকবে : আইন উপদেষ্টা

১৬

কূটনৈতিক পাসপোর্ট জমা দিয়ে যা বললেন আসিফ মাহমুদ

১৭

বিশ্লেষণ / ইউক্রেন সেনাবাহিনীতে রেকর্ড সংখ্যায় পলায়ন, চরম সংকটে ফ্রন্টলাইন

১৮

কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়  6sense HQ-এর নতুন উদ্যোগ

১৯

বন্দি বিনিময় / ৩২ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়ে ৪৭ জনকে নিয়ে গেল ভারত

২০
X