কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৩ পিএম
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশ ১৬ বছর ধরে কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল : তারেক রহমান 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ১৬টা বছর ধরে যেন একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিয়ায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।

পোস্টে তারেক রহমান লেখেন, ১৬টা বছর ধরে বাংলাদেশ যেন একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল। কেউ সেই অন্ধকারকে খুব তীব্রভাবে টের পেয়েছে, কেউ চুপচাপ বয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু যাদের রাজনৈতিক অবস্থান তখনকার পতিত সরকারের বিপরীতে ছিল, তাদের জন্য এই অন্ধকার ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা, আর অসংখ্য পরিবার অপেক্ষা করেছে সেই প্রিয়জনদের জন্য, যারা আর কোনোদিন ঘরে ফিরে আসেনি।

তিনি লেখেন, এই বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা- সব জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই। কিন্তু অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী, সাধারণ মানুষ- সবাই সেই ভয়ংকর পরিবেশের ক্ষত বয়ে বেড়িয়েছে, ন্যূনতম মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত মর্যাদা, নিরাপত্তা, মত প্রকাশের অধিকার এর মত মৌলিক সব বিষয়গুলো ছিল হুমকির মুখে।

তারেক রহমান লেখেন, এই বছরগুলোতে আমাকেও কথা বলার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে আমার কথা বলার অধিকার সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেওয়া হয়। দেশের কোনো পত্রিকা, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়া যেন আমার কোনো বক্তব্য প্রকাশ না করা হয়, এমন নির্দেশনা জারি ছিল। তবুও এই চাপিয়ে দেয়া নীরবতার মধ্যেও আমি অধিকার, গণতন্ত্র আর মানুষের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছি, কারণ সত্যের স্পিরিটকে আদেশ দিয়ে থামানো যায় না। এই পুরো অন্ধকার সময়টায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ছিলেন আমাদের ধৈর্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক। মিথ্যা মামলা, কারাবাস, তাকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা- এসবই পুরো দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবুও তিনি তার গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে কখনো সরে যাননি। তার বিশ্বাস একটাই- অধিকার সবার; ভয় দেখিয়ে দেশকে এগোনো যায় না।

তিনি লেখেন, আমি ব্যক্তিগতভাবেও সেই দুঃসহ সময়ের সাক্ষী। আমার মা, যিনি দেশনেত্রী, নিজ হাতে সহ্য করেছেন তার ছেলেকে জেলে নেওয়া, নির্যাতন করার মানসিক যন্ত্রণা। তার আরেক ছেলেকে আমরা চিরতরে হারিয়েছি। বাংলাদেশের হাজারো পরিবারের মতো আমাদের পরিবারও ছিল লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু ইতিহাসের একটা সত্য আছে- কষ্ট মানুষকে সবসময় তিক্ত করে না। কখনো কখনো কষ্ট মানুষকে আরও মহান করে তোলে। দেশনেত্রী, আমার মা- এটাই প্রমাণ করেছেন। তিনি শিখিয়েছেন- যে অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, তা যেন আর কারও জীবনে না আসে। দেশকে বদলাতে হলে, ঘৃণার পথ নয়- ন্যায়, নৈতিকতা আর ক্ষমাশীলতার পথই ভবিষ্যত গড়ে। আজ বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনীতির চেয়েও বড় কিছু- একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ, যেখানে সবার জন্য মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে, যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, বিরোধী মত যেখানে হুমকি না হয়ে বরং গণতন্ত্রের অংশ হবে। যেখানে ভিন্ন মতের কারণে কাউকে নিপীড়িত হতে হবে না বা গুম হয়ে যেতে হবে না।

তিনি আরও লেখেন, বিএনপি আজ প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে, আমরা সমাধানের পথে বিশ্বাসী। আমরা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না, তা সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী। ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়- মানবাধিকারই মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত। আমরা আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাগর-রুনি- আর অসংখ্য শহীদের গল্প মনে রাখি, যেন ভবিষ্যতে এমন নিপীড়ন আর দায়মুক্তি আর কখনো ফিরে না আসে।

তারেক রহমান আরও লেখেন, বিএনপি মারাত্মক ক্ষতি সহ্য করেছে, কিন্তু ভেঙে যায়নি। বরং সত্য, ন্যায়, জবাবদিহি, পুনর্মিলন, আর আইনের শাসনে বিশ্বাস রেখে আরও দৃঢ় হয়েছে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই- যেখানে প্রতিটি মানুষের কণ্ঠ, অধিকার ও জীবন মূল্যবান; যেখানে মানবাধিকার আমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুটি বিষয়ের অনুমোদন পেল নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়

পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশ নিয়ে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা

অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সচিবালয়ে অবরুদ্ধ অর্থ উপদেষ্টা, উত্তেজনা চরমে

লালমাটিয়ায় এভেরোজ স্কুলে হামলা, শিক্ষক-কর্মচারী আহত

সুখবর পেলেন প্রাথমিকের ৬৫,৫০২ প্রধান শিক্ষক

ব্যারিস্টার ফুয়াদের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল

তারেক রহমানের আসনে যাকে প্রার্থী করল এনসিপি

বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি, ২ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ পদত্যাগ করেছেন

১০

বাংলাদেশ ১৬ বছর ধরে কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল : তারেক রহমান 

১১

তেজগাঁও কলেজে সংঘর্ষে আহত এইচএসসি শিক্ষার্থী রানা মারা গেছেন

১২

আইফোনের জন্য বন্ধুকে খুন!

১৩

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস / মানবাধিকারের মানদণ্ড যেন অদৃশ্য নির্দেশনায় বাধা 

১৪

হত্যাযজ্ঞের বেদনায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার ভয়ংকর প্রতিশোধ এবং স্বাধীনতার গল্প

১৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অটুট থাকবে : আইন উপদেষ্টা

১৬

কূটনৈতিক পাসপোর্ট জমা দিয়ে যা বললেন আসিফ মাহমুদ

১৭

বিশ্লেষণ / ইউক্রেন সেনাবাহিনীতে রেকর্ড সংখ্যায় পলায়ন, চরম সংকটে ফ্রন্টলাইন

১৮

কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়  6sense HQ-এর নতুন উদ্যোগ

১৯

বন্দি বিনিময় / ৩২ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়ে ৪৭ জনকে নিয়ে গেল ভারত

২০
X