‘এমএলএমে দ্বিগুণ মুনাফার ফাঁদে বারবার কেন গ্রাহক’ এ বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
শাহ্ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ : শর্টকাট বড়লোক হওয়ার লোভে সাধারণ মানুষ এসব ফাঁদে পা দিচ্ছে। প্রতারকরাও এই সুযোগটা সফলভাবে কাজে লাগিয়েছে। অল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফা দেওয়ার নাম করে প্রতারণার ছক এঁকেছে প্রতারকরা। এটা সূর্যালোকের মতো স্পষ্ট যে, ইতোপূর্বে যত অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লোভনীয় অফার দিয়েছে, তার অধিকাংশই ছিল প্রতারণার ফাঁদ। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটি প্রয়োজন, তা হলো ‘সচেতনতা’। কোনো আকর্ষণীয় বা লোভনীয় বিজ্ঞাপন বা অফার দেখেই হুট করে সম্মোহিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেহেতু লোভনীয় অফারের অধিকাংশই প্রতারণার ফাঁদ, তাই অনলাইন বিনিয়োগে এসব লোভনীয় অফারকে ‘না’ বলুন।
সাইদ তানভীর আলী : বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও অতি মুনাফাখোররা এমএলএমে বিনিয়োগ করে চলেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিনিয়োগকারীরা প্রায় সবাই শিক্ষিত শ্রেণির লোক। অপরদিকে গজিয়ে ওঠা এসব কোম্পানি সম্পর্কে বারবার তথ্য দিলেও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নেন না। যখন কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায় তখন গ্রাহকরা হন নিঃস্ব। পত্রিকায় বড় করে ফলাও হওয়ার পর সরকার হয় সোচ্চার। তত দিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। আসল প্রতারক চলে যায় বিদেশ, দেশীয় এজেন্টের হাতে দড়ি পড়লেও অর্থ আর উদ্ধার হয় না। আমি মনে করি, এই শর্টকাট ধনী হওয়ার পদ্ধতিতে হাঁটার জন্য বিনিয়োগকারীরাও দায়ী। তাই তাদেরও আইনের আওতায় আনা হলে পরবর্তীতে অন্য সবাই সতর্ক হবে।
বোরহান উদ্দিন সুমন : কম পূঁজিতে অধিক লাভের জন্য। বিশেষ করে পরিশ্রমও কম। চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন ও লোভনীয় প্রচারে মানুষ সহজে আকৃষ্ট হয়ে যায়।
শিমুল চৌধুরী : তিনটি কারণ বলবো, দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। লোভে পরে বার বার ধোকা খায়। প্রশাসনের কড়া নজরদারির অভাব।
জুবায়ের আহমেদ : কারণ আমরা শর্টকাটে ও স্বল্প পরিশ্রমে বিশাল বড়লোক হতে চাই। এমএলএমই একমাত্র পন্থা যা এই পথের সন্ধান দিয়ে থাকে।
মো. আমরান : অতি লোভী মানুষ লোভের কারণে প্রতারিত হয়। কাউকে যদি বিশ্বাস করে প্রতারিত হওয়া আর জেনেশুনে প্রতারিত হওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
শাহানা আক্তার : যেকোনো হায় হায় কোম্পানিগুলোতে মানুষ আকৃষ্ট খুব সহজেই হয়। কারণ, তারা এমন কিছু লোভনীয় বিষয় রাখে যে মানুষ বোঝার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলে। ইদানীং বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চলছে যাতে সরল-সোজা মানুষরা বুঝতে না পেরে টাকা-পয়সা হারিয়ে ফেলছে। এই ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করা উচিত। প্রতারক চক্র সব সময়ই আমাদের সরল মানুষদেরকে ঠকিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা এসব পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছি।
সেকান্দার মানিক : এমএলএমের ফাঁদে পরে একাধিক কারণে। বেকার লোকেরা মনে করে ঘরে বসে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। এর মাধ্যম এমএলএম। প্রবাসী আয়ের টাকা সঠিক বিনিয়োগ না করতে পারা। তাড়াতাড়ি ধনী হওয়ার প্রবণতা। এমএলএম সম্পর্কে অজ্ঞতা। এমএলএমের মাধ্যমে মানুষ যে হারে প্রতারিত হচ্ছে তার তুলনায় মিডিয়ায় কম প্রচারিত হওয়া। এমএলএমের ফাঁদ থেকে বাঁচতে হলে মিডিয়ার মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
আমাদুল হক : অলস যারা তারাই কোনো চিন্তা-ফিকির ছাড়াই এই কাজগুলো করে। কারণ, তারা কোনো কাজ করে না। শুধু কষ্টবিহীন লাভ খুঁজে বেড়ায়।
নুর আহমাদ সিদ্দিকী : বার বার ধোঁকায় পড়ছে সাধারণ মানুষ। একটু ভালো থাকার আশায় তিলে তিলে জমানো কষ্টার্জিত টাকা এমএলএম কোম্পানিগুলোকে দিয়ে দিচ্ছে। পরে তারা উধাও হবার খবর নতুন নয়। ডেসটিনি, ইভেলিসহ বহু কোম্পানি সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে উধাও। মানুষ বর্তমানে খুব কষ্টে আছে। তার ওপর কষ্টার্জিত টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলে মানুষ পাগল হয়ে পড়বে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া কেউ ভালো নেই। গরিব, কৃষক, কুলি-মজুরদের দেওয়া ভ্যাট ট্যাক্সের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। কানাডায় তৈরি করছে বেগম পাড়া। এমএলএম কোম্পানিগুলো দেশের গরিব মানুষের টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করে। সময় এখন সতর্ক হওয়ার।
মো. শাহরিয়ার সরকার সৌরভ : আজকাল সবাই চায় খুব তাড়াতাড়ি উপরে উঠতে। বাংলাদেশে বেকার লোকের অভাব নেই। তারা যখন দেখে খুব অল্প টাকায় অল্প সময়ের মধ্যে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায়। তখন তারা এই এমএলএমের মতো প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দেয়। এর আগেও অনেক প্রতারক চক্র দেশের টাকা মেরে দিয়েছে। তবুও তারা এই রকম প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দেয়। বাংলাদেশে বেকারত্ব দূর হলে এমন সমস্যা খুব কমই দেখা যাবে।
মো. আবুল হাসান রাশেদী : অতি লোভ করা ভালো না। কথায় আছে, লোভে পাপ; পাপে মৃত্যু। এ জন্য অতি লাভের আশায় এ রকম ধোঁকাভাজ কোম্পানিতে যোগ না দেওয়াই ভালো।
মীর কাশেম : স্বল্প বিনিয়োগে অতি মুনাফার লোভ দেখায় এমএলএম। বিনাশ্রমে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখায় এমএলএম। সেই লোভ ও স্বপ্নে বিভোর হয়ে কিছু বেকার ও সহজ-সরল মানুষ এমএলএমের ফাঁদে পা দেয়। এ কাজে কিছু ফিটফাট সামাজিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত জড়িত থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে কিছু দুর্নীতিবাজ সরকারি লোকজনেরও যোগসাজশ থাকে। তাদের স্মার্ট কথাবার্তা ও আচরণে বিমোহিত হয়ে লোকজন এমএলএমের প্রতারণার শিকার হন। কোটিকোটি টাকা হাতিয়ে এমএলএম একদিন উধাও হলেই বিনিয়োগকারী গ্রাহকের রঙ্গিন স্বপ্ন ভাঙে। হা-হুতাশ করে। দুর্বৃত্ত এমএলএমের এসব অপতৎপরতা প্রশাসনের কঠোর নজরদারি করতে হবে। জনগণকে আরো সচেতন হতে হবে। বেকারদের কাজের সুব্যবস্থা করতে হবে।
এম রহিম উদ্দিন : আলাদিনের চেরাগের মতো আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে চায় সবাই। এসব কোম্পানি থেকে সাবধান। কোনো বিনিয়োগ করার পূর্বে অবশ্যই আগে দেখে নিন, তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি আছে কি না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্মারক রয়েছে কি না। কোনোভাবেই ১০ মাসে ২ গুণ সম্ভব নয়। কাজেই সাবধান।
মো. সজীব খান : এক হচ্ছে লোভ। দ্বিতীয় হচ্ছে সরকার এর কোনো সঠিক তদারকি করে না। মানুষ চায় সহজে পয়সাওয়ালা হতে কিন্তু প্রতারকরা সেটার সুযোগ নিয়ে নিরীহ মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করে দেয়। সরকার যদি সঠিক তদারকি করে এসব ব্যবসা করতে পারবে কিন্তু পালিয়ে যেতে পারবে না।
শিহাব উদ্দিন মো. জোবায়ের : এটা লোভ নয়, নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তায় মানুষকে এগুলোর দিকে টেনে নিয়ে আসে। বর্তমানে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে সামাজিক সংগঠনগুলোর জনমত তৈরি এবং জনমত জরিপ করে সতর্ক করার অভাবে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আপনি-আমি নিজ অবস্থান থেকে সতর্ক হলে এদের কাজকর্ম জনগণের সামনে তুলে আনলে, ব্যাপক প্রচার করলে জনগণ অনেক ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবে। যারা এই কাজ প্রমোট করবে তাদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
জহিরুল ইসলাম নাহিদ : শুধু লোভী মানুষ এই ফাঁদে পা দিচ্ছে এমন না। অনেক সাধারণ মানুষ ভুল করে আসছে। এর প্রধান কারণ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। বেকারত্ব ও পরিবারের ভরণপোষণ না মেটাতে পারাই কারণ। একটু বেশি ইনকাম, একটু লাভ, এসব করতে করতে মানুষ এসব প্রতারণায় পা বাড়ায়।
নুরুজ্জামান নওয়াব : মানুষ সব সময় বেশি মুনাফা খোঁজে। তাই লোকসানের তোয়াক্কা না করেই বিনিয়োগ করে এবং বারবার ধরা খাচ্ছে।
কামাল হোসাইন : জাতিগতভাবে যে আমরা শিক্ষা এবং জ্ঞানের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছি এটা মিথ্যা না। আমার বুঝতে হবে, আমি যখন নিজের পরিশ্রমে নিজের টাকায় মুনাফা করতে পারি না, তখন অতি লাভের আশায় আমি কেনো আরেকজনের পাতা ফাঁদে এবং লোভে অন্যকে টাকা দেব।
মো. শাহাবুদ্দিন : আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে যারা পরিশ্রম করতে চায় না কিন্তু স্বাবলম্বী হতে চায়। তারাই বিশেষ করে এই ফাঁদে পা দেয়। সচেতনতার অভাব এবং অতি লোভ এর জন্য দায়ী।
ইফতাহার জামান হ্রদয় : যেকোনো কিছুর বিনিময়ে মানুষ চায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। এমএলএম কোম্পানিগুলো এমন ফাঁদ পেতে বসে যেগুলো দেখলেই মনে হবে কোম্পানিটা যদি কিছু মাস বছর থাকে তাইলে আমি অনেক টাকার মালিক হয়ে যেতে পারবো। যার জন্য মানুষ নিজের সব টাকা-পয়সা বিলিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হাওয়ার নেশায় নিজেকে ডুবিয়ে দেয়।
গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম
মন্তব্য করুন