অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:০৭ পিএম
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৩২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কতিপয় পর্যবেক্ষণ

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে বহু কিছু হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে একান্ত প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচন। অনেকের ধারণা বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনটি নিরপেক্ষ হবে। অন্যতম কারণ হচ্ছে নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য করার জন্যে নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন সরকারের কতিপয় সুচিন্তিত পদক্ষেপ। ধারণা করছি ‘প্রধানমন্ত্রী একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে শতভাগ সমর্থন দিচ্ছেন।’ তার প্রণীত ও প্রচারিত ৫ দফার ভিত্তিক একটি বার্তায় তার স্বাক্ষর রয়েছে।

শেখ হাসিনার ৫টি বার্তা হলো- নির্বাচনে কোনো পক্ষ-পাতিত্ব করা যাবে না; স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেয়া যাবে না; স্বতন্ত্রদের বিরুদ্ধে দল কোনো ব্যবস্থা নেবে না; নিজের শক্তিতে জয়ী হতে হবে; নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।

এই পাঁচটি ঘোষণার সাথে তিনি তার দলীয় প্রার্থীদের কঠোর ভাবে নির্বাচন বিধি এবং লিখিত-অলিখিত নির্বাচনী আচরণ মানতে নির্দেশ দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে; যা থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আলামত দেখা যাচ্ছে।

নির্বাচন তফশিল ঘোষণার পর কমিশন কোনো ব্যাপারে পক্ষ-পাতমূলক, নতজানু কিংবা আইন বহির্ভূত কাজ করেননি। প্রার্থীর চূড়ান্ত গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে কেউ কেউ মৃদু আপত্তি জানালে কিংবা হৈচৈ করলে তা যে শুধু ‘মানুষের ভুলের’ কারণে হয়েছে তা বলাবাহুল্য। এখন হাইকোর্ট বা সুপ্রিমকোর্টের দ্বার তাদের জন্যে খোলা। আমার একান্ত বিশ্বাস বর্তমান প্রধান বিচারপতি সকল প্রকার ভয়-ভীতি বা অনুকম্পনার উর্ধ্বে থেকেই তার বা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাবেন এবং এ ব্যাপারে আপত্তির সম্মানজনক ও আইন সংগত সুরাহা হবে। তার এবং তার সহকর্মীদের অনেককে অতি ঘনিষ্ঠভাবে চেনার সুযোগ হয়েছে বলেই এমন দ্ব্যার্থহীন উক্তি করছি।

নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য ভূমিকা দৃশ্যমান। এখন ত বলতে গেলে নির্বাচন কমিশন সরকার পরিচালনা করছে। সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন যা চাচ্ছে তা-ই নির্দ্ধিধায় সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। তাই নির্বাচন পরিচালনায় সংযুক্তগণের নিয়োগ বদলিতে, এক্সিকিউটিভ মেজিস্ট্রেট নিয়োগে, ওসিদের বদলিতে এমনকি ডিসি, কমিশনার ও পুলিশের কমিশনার বদলিতে তারা কোনো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। এক সাথে অনেকের বদলি স্বাচ্ছন্দ্যে করা হচ্ছে, প্রয়োজনে আরও করা হবে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে বাঘা-বাঘা নেতাদের জবাবদিহিতার আওতায় এনেছেন এবং প্রার্থিতা বাতিলের খড়গটা ঝুলিয়ে রেখেছেন। তারা দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক আনা, তাদের গমনাগমন ও কর্তব্য পালনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে তৎপর।

ইতোমধ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ও বৈধ অস্ত্র সংযত করনে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ওসিদের বদলি বা ডিসিদের বদলিতে সম্ভাব্য পরিচিতজন স্বজন-প্রীতির দরজা বন্ধ হয়েছে। দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সম্ভাব্য সংঘাতের জ্বালামুখ বন্ধ করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। কতিপয় ব্যাপারে পিটার ডি হাসকে একটা ছোট ধন্যবাদ দিতে হয়। তার বা তার সরকারের কতিপয় পদেক্ষপ কিছুটা হলেও আচরণে কিছুটা সংযত ভাব এনেছে। নির্বাচনে যে কোনো অপকর্ম কী পরিণতি আনতে পারে তাও হাসের বদৌলতে সবার জানা। অন্যান্য যে খড়গগুলো তাদের আছে তার ইঙ্গিতও মাঝে মাঝে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। ভোটের আগে ও পরে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তারা আপাতত ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে ১০ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত মাঠে থাকবে। নিরাপত্তার জন্যে আনসারদের সার্ভিসও নেয়া হচ্ছে।

আর একটি ধন্যবাদ অবশ্যই আমাদের নিকট প্রতিবেশীর প্রাপ্য। ১৯৭১ সালের ন্যায় একটা কাজ তারা করেছে। ১৯৭১ সালে তারা খোলাখুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মনস্তাত্বিক যুদ্ধে জড়িয়ে গিয়েছিল, সোভিয়েট ইউনিয়নকে সমধিক গুরুত্ব দিয়েছিল। এবারেও ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুটা হলেও মন-ক্ষুণ্ণ করেছে। এতে বাংলাদেশের দায়িত্বও বাড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রদত্ত আশ্বাস বাস্তবে দেখতে তারা বাংলাদেশের কাছে অবাধ, সুষ্ঠ, উৎসবমুখর, অংশগ্রহণ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা মুক্ত নির্বাচন আশা করছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দায়-দায়িত্বটি বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে।

সব মিলিয়ে নির্বাচন যে সুষ্ঠু, অবাধ, উৎসবমুখর হবে তা বলা যায়। শেখ হাসিনার নির্বাচনী চাতুর্থের ব্যাপকতায় আসন্ন নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হবে বলেও বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে। কালো টাকার যথেষ্ট ব্যবহার ও নির্বাচন বিরোধীদের আচরণে লাগাম টানা হলে নির্বাচনটা নিঃসন্দেহে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক হবে। তবে গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারটিকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের কাছেই ছেড়ে দিয়ে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। দেশের সংবাদপত্র, সুশীল সমাজ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকগণের নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণযোগ্যতার মাত্রাটাকে বাড়াতে পারে।

লেখক : অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

‘প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করি’

মেয়ের জন্য চিপস আনতে গিয়ে প্রাণ হারান মোবারক

১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় সংকটে মার্কিন ডলার

তারেক রহমান জুলাই বিপ্লবের মূল নেতৃত্বে ছিলেন : অধ্যাপক মোর্শেদ

তারা ভেবেছে, নারীঘটিত বিষয় নিয়ে প্রচারে আমার ভোট কমে যাবে : আমির হামজা

পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিএনপিকে চরমোনাই পীরের কড়া বার্তা

১০

নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে : মান্না

১১

ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী আবিষ্কার

১২

৪ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করল পূর্বাচল আর্মি ক্যাম্পের সেনারা

১৩

চুক্তি নবায়নের পর মোনাকোয় ধারে গেলেন বার্সা তারকা ফাতি

১৪

উড্ডয়নের ৭ মিনিটেই মাটিতে আছড়ে পড়ল বিমান, সব আরোহী নিহত

১৫

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে : খালেদা জিয়া

১৬

ঘরে ঝুলছিল বিচারকের স্ত্রীর লাশ

১৭

বুমরাহকে নিয়ে ঝুঁকির মুখে ভারত: খেলালে সব শেষ?

১৮

জবি শিক্ষকের নামে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

১৯

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল রেসপন্স সেন্টারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই

২০
X