কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৩, ০৭:১৩ পিএম
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৩, ১১:৪২ এএম
অনলাইন সংস্করণ
আলজাজিরা থেকে

অভ্যুত্থান থেকে এরদোয়ানকে রক্ষার হিরো যারা

তুরস্কের সামরিক অভ্যুথান রুখে দিয়েছিল জনগণ
তুরস্কের সামরিক অভ্যুথান রুখে দিয়েছিল জনগণ

১৫ জুলাই, ২০১৬- তুরস্কে এক সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে রুখে দাঁড়িয়েছিল তুর্কি নারী, পুরুষ এমনকি শিশুরাও। সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠীর নেতৃত্বে সেই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় ট্যাঙ্ক, বন্দুক এবং বোমার সামনে বুক পেতে দিয়েছিল তুরস্কের সাহসী জনগণ। তাদের এই লড়াই ছিল গণতন্ত্র এবং তুর্কি জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষার লড়াই। তুর্কি জাতির পুনরুত্থানকে থামিয়ে দিতে চাওয়া সেই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে রুখে দিয়ে সেদিন তুরস্কের জনগণ তাদের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকেও রক্ষা করেছিলেন।

উড্রো উইলসন একবার বলেছিলেন: "আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি কারণ এটি প্রতিটি মানুষের শক্তিকে প্রকাশ করে।" সেই শক্তি, সাহস এবং বীরত্বই প্রতিদিন তুর্কিদের তাদের স্বাধীনতা লালন করতে, নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং তাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করতে পরিচালিত করে।

তুরস্ক যখন তার শতবর্ষের ভিশনগুলো প্রকাশ করছে ঠিক সেই মুহূর্তে এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা তুর্কি জাতিকে তাদের পথের কঠিন হুমকিগুলোকে আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয়। তুরস্কের ভেতর এবং বাইরের হুমকিগুলো তুরস্কের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং দেশের স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করতে চেয়েছিল। তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের শতবর্ষকে সেসব নায়ককে বিশেষ স্মরণে উৎসর্গ করা হয়েছে, যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন যাতে অন্যরা একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক এবং বহুত্ববাদী দেশে বাস করতে পারে। তারা শুধু আমাদের নায়ক নয়, বিশ্বের জন্যও তারা নায়ক। কারণ তারা স্বাধীনতা, সাম্য এবং আইনের শাসনের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব ও ‘তুরস্কের শতবর্ষ’-এর লক্ষ্যগুলোকে সমুন্নত রাখতেই চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন।

এই লড়াই ছিল তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে গণতন্ত্রের শক্তি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থাকা বিশ্বাসঘাতকদের মধ্যে একটি জীবন-মৃত্যুর লড়াই। সেই বিশ্বাসঘাতকরা ছিল তুরস্কের পুলিশ, সামরিক বাহিনী এবং বিচার বিভাগের মধ্যে। সেই বিশ্বাসঘাতকরা ছিল তুরস্কের এলিটদের মধ্যেও। সেইসাথে ছিল বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠন। গণতন্ত্রকে ব্যাহত করার সেই অপচেষ্টায় ২৫১ জন নিরীহ নাগরিককে হত্যা করা হয়। ২১৯৬ জন পুরুষ, নারী ও শিশু গুরুতর আহত হয় এবং কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের অবকাঠামো ধ্বংস হয়। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, তুরস্ক জাতির সার্বভৌমত্বের প্রতীক, পার্লামেন্ট ভবনে বোমা হামলা করা হয়। এসব কিছুর পেছনে ছিল অপরাধী, সন্ত্রাসী এবং এফইটিও নামের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

এফইটিও নামের এই গোয়েন্দা সংস্থাটি ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতায় একটি ‘ধর্মীয় আন্দোলন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শিক্ষা এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপের প্রচারের আড়ালে তারা তুরস্কের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা অবৈধভাবে তুর্কি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং অসংখ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশ করেছিল। এটি এমন এক গোপন সন্ত্রাসী সংগঠন, বিশ্বব্যাপী যার প্রচার রয়েছে এবং এর নেতৃত্বে রয়েছে তুরস্কের এক রাজনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক নেতা ফেতুল্লা গুলেন। যিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার বিশাল সম্পত্তিতে বসবাস করছেন।

সেই অন্ধকার দিনগুলোর সাত বছর পর আজ তুরস্কের প্রধান অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি হলো দেশের ভেতরে এবং বাইরে সন্ত্রাসবাদী এফইটিও নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে লড়াই করা। শুধু এফইটিও নয়, সব চরমপন্থি সংগঠন এবং তাদের সহযোগীদের নির্মূল করতে তুরস্ক বদ্ধপরিকর। তারা যেখানেই থাকুক না কেন, জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনবে তুরস্ক। তুরস্ক সেই অপরাধীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে যারা তুর্কি জাতির পুনরুত্থানকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল।

ব্যর্থ সেই সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে, কোভিড-১৯ মহামারিসহ অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে তুরস্ক এবং সম্প্রতি দেশের দক্ষিণে এক বিপর্যয়কর ভূমিকম্প আঘাত হানে যাতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ১ লাখেরও অধিক ভবন ধসে পড়েছে এবং মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও অনেক অবকাঠামো। বিপর্যয়কর ভূমিকম্পের তিন সপ্তাহ পর সরকার দ্রুত একটি পুনর্গঠন পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যার মধ্যে ৬ লাখ ৫০ হাজার নতুন ভবন, ৫ লাখ ৭ হাজার বাসস্থান এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার গ্রামের পুনর্নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি ছিল এমন একটি উদ্যোগ তুর্কি জনগণ গভীরভাবে যার প্রশংসা করেছিল।

আর সে কারণেই বিপর্যয়কর ভূমিকম্পের মাত্র কয়েক মাস পর, তুরস্ক একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতি ও সংসদীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছে। এটা প্রমাণ করে যে, তুর্কি জনগণ তাদের দেশের প্রতিনিধি নির্বাচনে তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছার অনুশীলন করতে অটল। নেতৃত্ব এবং জনগণের মধ্যে আস্থার এই গভীর সম্পর্কের কারণে, তুরস্ক শক্তিশালী থেকে আরও শক্তিশালী হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে।

পরিশেষে, তাদের সবার মহৎ আত্মত্যাগকে আমরা সাধুবাদ জানাই যারা বিশ্বাসঘাতকদের সেই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে রুখে দিতে দেশের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা সর্বদা তাদের স্মরণ করব যারা কেবল ‘তুরস্কের শতবর্ষের নায়ক’ হিসেবে নয়, বরং তুরস্কের ‘স্থিতিশীলতা, ঐক্য, শান্তি এবং গণতন্ত্রের নায়ক’ হিসেবে আত্মত্যাগ করেছিলেন।

মূল : ড. মো. মোস্তফা গোকজু, ভাষান্তর - মুজাহিদুল ইসলাম

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

১৭ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

রাকসু নির্বাচন / মেয়েদের ৬ হলে ভিপি-এজিএস পদে শিবির, জিএসে আম্মার

রাকসুতে ১৩ হলের ফল ঘোষণা

পরিবেশ, পরিস্থিতি ও শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার ব্যর্থ : মোস্তফা জামান

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল

‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে ঢাবিতে মশাল মিছিল

এইচএসসিতে উত্তীর্ণ / গুমের শিকার হিরুর কন্যা নাবিলাকে তারেক রহমানের শুভেচ্ছা

জন্মদিনে নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত রাশেদ প্রধান

১০

দুই খুদে ফুটবলারের পাশে বিএনপি

১১

রাকসুতে শহীদ হবিবুর রহমান হলে ভিপি–এজিএসে শিবির, জিএসে আম্মার

১২

বিশ্লেষণ / কেন পাকিস্তান-তালেবানদের মধ্যে সমঝোতা সহজ নয়

১৩

রাকসুতে ১১ হলের ফল ঘোষণা, এগিয়ে যারা

১৪

শিগগির উদ্বোধন হতে যাচ্ছে হোটেল ‘বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস বে হিলস্’

১৫

রাকসু নির্বাচন / নবাব আব্দুল লতিফ হলের ফল ঘোষণা

১৬

রাকসুতে ৮ হলের ফল ঘোষণা

১৭

রাকসু নির্বাচন / শের-ই বাংলা হলের ফল ঘোষণা

১৮

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না এনসিপি

১৯

রাকসুতে জুলাই-৩৬ হলের ফল ঘোষণা

২০
X