রাজধানীর মাতুয়াইলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলামুখী বাস ছাড়া বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে গাবতলী থেকে উত্তরাঞ্চলগামী এবং মহাখালী থেকে ময়মনসিংহগামী বাস চললেও সংখ্যায় কম।
শনিবার (২৯ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসেবে যাত্রাবাড়ীতে অবস্থান নেওয়ার কথা থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
যাত্রাবাড়ী ছাড়াও নয়াবাজার, গাবতলী ও আবদুল্লাহপুরে অবস্থান নেওয়ার কথা ছিল বিএনপি। তবে সবকটি স্থানেই তারা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থানের সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। আর সে সময় তিনটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে কে বা কারা আগুন লাগিয়েছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: মাতুয়াইলে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ
এরপর থেকে সায়েদাবাদ থেকে কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম অঞ্চলমুখী বাস ছাড়া বন্ধ হয়ে যায়। এসব জেলা ছেড়ে আসা সায়েদাবাদমুখী বাসগুলোও কাচপুরের পরে আটকে যায়।
সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার আগ পর্যন্ত গাড়ি চলছিল। তবে এরপর গাড়ি যেতে পারছে না। ঢাকার দিকে ঢোকার মুখে মাতুয়াইলের আগে বাসগুলো আটকে গেছে।
একইভাবে পোস্তগোলা দিয়ে যেসব গাড়ি আসছে সেগুলো ঢুকতে পারছে না এবং বেরও হতে পারছে না। শুনেছি মাতুয়াইলে চারটি বাস ভাঙচুর করেছে, বলেন তিনি।
এদিন সকালে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে দুদলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আমানের আশপাশে থাকা বিএনপির অন্তত ২০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: গাবতলীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ
এ ঘটনার পর গাবতলীতে দূরপাল্লার বাসে সব কাউন্টার খোলা আছে তবে যাত্রী কম, টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু বাস যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে।
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মন্টু মিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কাউন্টার খোলা। টিকিট বিক্রি করছি। কিন্তু অন্যান্য দিনের চেয়ে যাত্রী অনেক কম। যাত্রী নাই, এ জন্য দুইটা বাস ছাড়ছি, দুই তিন বাসের যাত্রী এক বাসে দিয়ে ছেড়েছি।
এ ছাড়া এদিন পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে উত্তরার আবদুল্লাহপুর বিএনএস সেন্টার এলাকায় অবস্থান নেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে বিএনপিকর্মী সন্দেহে মো. আসাদুজ্জামান ও ফারুক ইসলাম নামে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ঘটনার পর মহাখালী বাস টার্মিনালে ময়মনসিংহের বিভিন্ন রুটের বাস টার্মিনালে আসছে, কিছু বাস ছেড়েও যাচ্ছে। তবে যাত্রী অন্য সময়ের তুলনায় কম।
আরও পড়ুন: উত্তরায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, সড়কে যান চলাচল বন্ধ
ময়মনসিংহ রুটের সৌখিন পরিবহনের চালকের সহকারী আহমেদ আলী বলেন, গাড়ি ছাড়ছি। কিন্তু যাত্রী নাই, পুরাই ফাঁকা। সামনে গেলে দেখি কিছু যাত্রী পাই কি না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ট্রাফিক) নাভিদ কামাল শৈবাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রাস্তায় যানবাহল চলাচল অব্যাহত আছে। সাময়িক কিছু সমস্যা ছিল, কিন্তু এখন স্বাভাবিক। তবে আজ রাস্তায় গাড়ি তুলনামূলক কম।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (২৮ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ শেষে অবিলম্বে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী, শনিবার (২৯ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি করার ঘোষণা দেয় বিএনপি।
বিএনপির এমন ঘোষণার পর ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। যুবলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, গাবতলী এবং আমিনবাজারে শান্তি সমাবেশ করবে তারা।
পরে ডিএমপির অনুমতি না পাওয়ায় কর্মসূচি স্থগিত করে আওয়ামী লীগ।
ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক দলসমূহ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে এই অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য কোনো অনুমতি গ্রহণ করেনি। আইনশৃঙ্খলা অবনতির জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জনদুর্ভোগের বিষয় বিবেচনায় সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান কমসূচি পালনে ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হলো না।
মন্তব্য করুন