বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ পরিবার ভদ্রতা-শিষ্টাচারের কালচার শেখেনি। তাদের মধ্যে আছে শুধু ধৃষ্টতা, ঔদ্ধত্য আর নিজেদের অহংকার। এসব করতে গিয়ে তাদের পতন হয়েছে অত্যন্ত ভয়াবহভাবে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শনির আখড়ায় আওয়ামী স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে নিহত সৈকত চন্দ্র দে এবং পারভেজের শোকাবহ পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এই আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতেই আমরা বলেছিলাম, তার পতন হবে অত্যন্ত ভয়াবহভাবে। সে কথা উনি (শেখ হাসিনা) কানে তুলেননি, গ্রাহ্য করেননি। করবেন কেন? এটা তিনি ভাবতেই পারেননি, জনগণ ধেয়ে এসে তার সাধের গণভবনের দিকে যাবে, এটা কল্পনাই করতে পারেননি। এ কারণেই তার ময়ূরের সিংহাসন মাটিতে লুটে পড়েছে।
এ ছাড়া তিনি বলেন, দেশটা একেবারেই পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি, তার প্রয়াত বাবা, তার পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যেত না। তার ঘনিষ্ঠ লোকজনরা লুটপাট করবে, এর বিরুদ্ধেও কথা বলা যেত না। জ্বালানি নেই কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কার? শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ লোকজনের, তার আত্মীয়-স্বজনের। জনগণের পকেট কেটে পকেটমার শেখ হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকা, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এই কারণেই তিনি আন্দোলনের কথা শুনলেই আন্দোলনকারীদের ওপর বর্বর আক্রমণ চালিয়েছেন।
তা ছাড়া তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন শেখ হাসিনা। স্কুল-কলেজের কত মাছুম বাচ্চার জীবন কেড়ে নিলেন, তারপরও তার কোনো বিকার নেই। তার প্রতিহিংসা কিন্তু এখনো রয়েছে। দুই-তিন দিন আগে বগুড়ার শিশু শিক্ষার্থী রাতুল মারা গেল ৪৫ দিন ধুঁকতে ধুঁকতে। শেখ হাসিনার বর্বর হিংসা, রক্ত ঝরানোর হিংসা, তার প্রতিফলন এখনো কিন্তু আমরা দেখছি।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা কতই না কথা বলেছেন। তারা বলেছিলেন শেখ হাসিনা না থাকলে কী বীভৎসতা বাংলাদেশে দেখা যাবে। ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, শেখ হাসিনা না থাকলে একদিনে ১ লক্ষ লোক মারা যাবে। তিনি আরেকদিন বলেছিলেন, ১০ লক্ষ লোক মারা যাবে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়ে গেল, তিনি পালিয়ে গেলেন। কিন্তু ওবায়দুল কাদের, তার মন্ত্রীরা, হাসানুল হক ইনুরা যা বলেছিলেন কিছুই তো হলো না। একজন আওয়ামী লীগের উপরও তো হামলা করা হয়নি। এই কথাগুলো বলে তারা শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রেখেছিল। কারণ শেখ হাসিনা টিকে থাকলে টেলিভিশনের মালিক হওয়া যায়, রেডিওর মালিক হওয়া যায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক হওয়া যায় এবং জনগণের টাকা বিদেশে পাচার করা যায়।
তিনি আরও বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় সুদূর আটলান্টিকের পাড় থেকে মাঝে মধ্যে দু-একটা বাণী ছাড়েন। এর আগে কত কথাই তো তিনি বলেছেন। আমি শুধু এখন এই কথাটাই বলবো, শেখ হাসিনা, আপনার তো সন্তান দুজন। একটা ছেলে একটা মেয়ে। আপনি কিন্তু তাদেরকে ভদ্রতা শিষ্টাচারের কালচার শেখাননি। এই সজীব ওয়াজেদ জয় তার কয়েকটি বক্তৃতায় দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তুই বলে সম্বোধন করেছেন। শেখ হাসিনার দ্বারা আমরা যে কত নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছি, মাসের পর মাস আমাদেরকে শুধু রিমান্ডেই থাকতে হয়েছে। শেখ হাসিনার এমন বর্বরোচিত আচরণের পরেও কিন্তু আমরা কখনোই তাকে তুই বলে সম্বোধন করিনি, আপনি বলেই সম্বোধন করেছি সব সময়।
তা ছাড়া তিনি বলেন, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভেতরে ভিনদেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদের ঢুকিয়েছিল। আমরা এই কথাগুলো শুনেছিলাম শেখ হাসিনার আমলেই, কিন্তু অতটা আমলেও নেইনি। কিন্তু এখন জিনিসটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন অনেকেই বলছেন। গতকাল (বুধবার) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেছেন, ভিনদেশি নাগরিকদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ঢুকানো হয়েছে। কারণ, তারা হিন্দিতে কথা বলছেন।
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা এই কাজগুলো করেছেন। এ কারণে যে, নিজের দেশের লোকেরা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। না হলে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হিন্দিতে কথা বলবে কেন? আমাদের আন্দোলন দমন করার জন্য শেখ হাসিনা ভিনদেশি লোকদের ভাড়া করে নিয়ে আসলেন, এটা কি বড় ধরনের অপরাধ নয়? আপনি গদি রক্ষার্থে মাছুম বাচ্চাদেরকে গুলি করেছেন, গুম করেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের ক্রসফায়ার দিয়েছেন। আপনার মতো এত বড় ঘাতক পৃথিবীতে আর কেউ ছিল বলে মনে হয় না।
সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিজভী বলেন, একপর্যায়ে গিয়ে তারা জনগণের পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছেন। এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি, এটা ছাত্র-জনতার আন্দোলন, তাদের আত্মত্যাগের কারণে, তাদের জীবন উৎসর্গের কারণে এবং এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর যে সমর্থন ছিল এটা অনেকটাই কাজে লেগেছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুস্তাফিজুর রহমান মনির, আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ নেতারা।
মন্তব্য করুন