কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৪ পিএম
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাষ্ট্রপতি ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্ট হলেও সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না : রিজভী 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি : সংগৃহীত

রাষ্ট্রপতি ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্ট হলেও তাকে পদত্যাগের কথা বলে বড় ধরনের সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে লিফলেট বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আজকে রাষ্ট্রপতির বিষয় নিয়ে কথা উঠেছে। আমরা সবাই জানি, এই রাষ্ট্রপতি ফ্যাসিবাদেরই একটি প্রোডাক্ট। কিন্তু আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন ছোটখাটো যদি গর্ত হয় আপনি সে গর্ত টপকিয়ে পার হয়ে যেতে পারবেন; কিন্তু বড় গর্ত যদি খাল হয় তখন তো সেটা টপকানো সম্ভব নয়, সেটি টপকাতে গেলে পড়ে যেতে পারেন। সুতরাং যাতে কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি না হয় এজন্য অনেক চিন্তা করে আমাদের কাজ করতে হবে। অল্প শূন্যতা হলে সে শূন্যতা ভরাট করে দেয়, কিন্তু বড় শূন্যতা হলে ওটা ভরাট করা মুশকিল হয়। এখানে শেখ হাসিনার পতনে যারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন- বাংলাদেশের ভেতরের কিছু মানুষ এবং বাহিরের লোকজন নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে মেতে উঠবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, একটি পরিস্থিতি, একটি দুনিয়া কাঁপানো বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তারা নিশ্চয়তা দিবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের। সে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা তাদের দরকার; এর মধ্যে সংস্কারের যে কথাগুলো উঠেছে সে সংস্কার তারা করবে, কিন্তু কথা হলো সেটা তারা কত দিনে করবে? এ দেশের জনগণ, রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছে তারা সবাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। নিঃসন্দেহে ড. মোহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের একজন কৃতী মানুষ। বাংলাদেশের জন্য যিনি সুনাম বয়ে নিয়ে এসেছেন। প্রত্যেকেই তাকে শ্রদ্ধা করে। যে গণতন্ত্রের জন্য এত লড়াই, এত সংগ্রাম, অনেক মা তার সন্তানহারা, অনেক স্ত্রী তার স্বামীহারা- এটা তো শুধু গণতন্ত্রের জন্য কথা বলার জন্য এবং নাগরিক স্বাধীনতার জন্য। তাই যদি হয় তাহলে নির্বাচন নিয়ে আপনাদের এত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কেন? নির্বাচনের জন্য আপনারা যে তারিখটা দিবেন সেটা বলে দিন। এর মধ্যে যতটুকু সংস্কার করা দরকার করুন।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জনগণ তো সংস্কার চায়, শেখ হাসিনার বিচার বিভাগ জনগণ চায় না, শেখ হাসিনার প্রশাসন জনগণ চায় না, শেখ হাসিনার পুলিশ জনগণ চায় না। যে পুলিশ মানবদরদী হবে, যে জনপ্রশাসন জনগণের কল্যাণে আসবে জনগণ সেই প্রশাসন চায়, এগুলো সংস্কার করতে কতদিন সময় লাগবে? বিচার বিভাগ হচ্ছে মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল- এটা সংস্কার করতে কতদিন সময় লাগবে? বেশিদিন তো সময় লাগার কথা নয়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গত ১৫ বছর ছিল এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। এক ভয়ঙ্কর দানব শেখ হাসিনাকে তাড়াতে গিয়ে শট গানের গুলিতে কারও পা চলে গেছে, কারও দু চোখের আলো নিভে গেছে, কারও কারও জীবন চলে গেছে। আওয়ামী বাকশালী দুঃশাসনের ভয়ংকর বিষাক্ত বাতাসের মধ্যে সারা বাংলাদেশের মানুষ গত ১৫ বছর ছিল। যারা কথা বলেছে, যারা প্রতিবাদ করেছে তাদের রাতের অন্ধকারে তাদের স্ত্রীর কাছে থেকে, তাদের মায়ের কাছ থেকে, তাদের বাবার কাছ থেকে নিয়ে অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে। এই এলাকার সুমন, জাকির আমাদের মাঝে আর নেই, তারা এখন কোথায় আছে আমরা কেউ বলতে পারি না। তাদের গুম করা হয়েছে, আমি তো মাত্র দুজনের নাম বললাম।

তিনি আরও বলেন, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ সারা বাংলাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে অসংখ্য নেতাকর্মীকে অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ একটা টুঁ শব্দ করবে না, কেউ টুঁ শব্দ করলে তার পরিণতি হবে গুম অথবা জনির মতো ক্রসফায়ারে হত্যা। এই ছিল শেখ হাসিনার আমল।

এ ছাড়া তিনি বলেন, অনেক লড়াই করতে হয়েছে আমাদের। দিনের পর দিন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পুরোনো জরাজীর্ণ কারাগারে রাখা হয়েছে, ৬০ লাখ বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে প্রায় দুই লাখ মামলায়। এ অবস্থার মধ্যে শেখ হাসিনা মনে করেছিল আমার বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ নেই, আমি বাংলাদেশের মানুষের টাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে আমার নিজেদের লোকজনদের দিয়ে লুটপাট করাব। কেউ কোনো আওয়াজ করতে পারবে না। সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জনগণের গচ্ছিত টাকা আমি হরি লুট করব, পাচার করব, কানাডায় বেগমপাড়া বানাব, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানাবো কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারবে না। এই ছিল শেখ হাসিনার ইচ্ছা। এভাবেই গত ১৫ বছর শেখ হাসিনা দেশ চালিয়েছে। বিচার বিভাগ তার আঁচলের মধ্যে ছিল, পুলিশ বিভাগ তার শাড়ির আঁচলের মধ্যে ছিল, জনপ্রশাসন তার শাড়ির আঁচলের মধ্যে বাঁধা ছিল।

এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ফখরুল ইসলাম রবিন, ডা.জাহিদুল কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা, কিস্তির গ্যাঁড়াকলে জেলেরা দিশেহারা

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার

বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করল আরও এক দেশ

দরিয়া-ই-নূর যেভাবে বাংলাদেশে

স্কুলে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড নিয়ে ২ শিক্ষকের মারামারি

টাকা ছাড়া ফেরিতে গাড়ি উঠতে দেয় না বিআইডব্লিউটিসির লস্কররা!

যে সাত ইসরায়েলি মুক্তি পেলেন

জুটি বাঁধছেন বিজয়-কীর্তি

শিক্ষা ভবন অভিমুখে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা

বিপিএলে অংশ নিতে আয়োজকদের যে শর্ত দিল বরিশাল

১০

সাত ইসরায়েলি বন্দি হস্তান্তর, মুক্তির অপেক্ষায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি

১১

রাজধানীতে শ্রমিক লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৫

১২

সফল মানুষ অফিস শেষের ১০ মিনিটে যা করেন

১৩

কেন ভালো মানের বিদেশি ক্রিকেটার পায় না বিপিএল, জানালেন ফারুক

১৪

দেশে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড দামে

১৫

ঢাকার সাবেক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল বরখাস্ত

১৬

এক প্রেমিকা নিয়ে দুই প্রেমিকের সংঘর্ষ

১৭

প্রযোজক রূপে তাসনিয়া ফারিণ

১৮

জুবিনের মৃত্যুরহস্য, ন্যায়বিচার চেয়ে যা বললেন গরিমা

১৯

নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ইসি কর্মকর্তা বরখাস্ত

২০
X