নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল করে সকল অংশীজনের সমন্বয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন কমিশন গঠনসহ ১০টি প্রস্তাবনা দিয়েছে নারী অধিকার আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এ সব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাতিলসহ কমিশনের সংস্কারের দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে নারী অধিকার আন্দোলন। মানববন্ধনে সংগঠনটির সভানেত্রী মমতাজ মান্নান বলেন, একপেশে নারী সংস্কার কমিশনের সংস্কার করতে হবে। কমিশন মুসলিম পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন সংস্কারসহ আরও কিছু সুপারিশ করেছে, যা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নারীদের প্রতিনিধিত্ব এই কমিশনে নেই কেনো? এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে পারিবারিক কাঠামো হুমকির মধ্যে পড়বে। এতে রাষ্ট্র ও সমাজ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। নারী-পুরুষের সাংঘর্ষিক সমাজ নয়, নারীর সার্বিক কল্যাণ ও সত্যিকারের ক্ষমতায়ন চাই।
মানববন্ধনে অন্য বক্তারা বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়। কিন্তু ইসলামের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক প্রস্তাবনাগুলো বাদ দিতে হবে। তারা বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইন নিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ এক দেশে দুই ধরনের আইন থাকলে পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন আইনে সমাধান চাওয়া হবে। সবচেয়ে বড় কথা, আল্লাহর আইনের বিপক্ষে যাওয়া যাবে না। এজন্য এই কমিশন বাতিল করতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো সমাজ, ধর্ম, স্বামী, স্ত্রী, শিশুর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাবা, সন্তান, স্বামীর সঙ্গে নারীরা সংঘর্ষ চায় না, শান্তি চায়। এজন্য কোরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারাগুলো বাতিল করতে হবে।
মানববন্ধনে ১০ দফা প্রস্তাব উপস্থাপনা করা হয়। এগুলো হলো- ১. একপেশে নারী সংস্কার কমিশন বাতিল করতে হবে এবং সকল অংশীজনের সমন্বয়ে একটি ইনক্লুসিভ নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। ২. প্রতিবেদনে ধর্মবিদ্বেষী মনোভাব ও পক্ষপাতমূলক চিন্তা-ভাবনা পরিহার করতে হবে। ৩. পতিতাবৃত্তিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ বাতিল করতে হবে। ৪. সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতার সুপারিশ বাতিল করে ইসলামের নীতি বহাল রাখতে হবে। ৫. জাতিসংঘের সিডও সনদের দুটি ধারার [ধারা ২ ও ধারা ১৬.১ (গ)] সংরক্ষণ প্রত্যাহার সংক্রান্ত প্রস্তাবটি বাতিল করতে হবে। ৬. ইসলামের উত্তরাধিকার আইনটি বলবৎ থাকতে হবে। ৭. অভিন্ন পারিবারিক আইনের অধ্যাদেশ জারি করার প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করে কোরআন বিরোধী সকল ধারা বাতিল করতে হবে। ৮. স্ত্রীর অসম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ককে ‘ম্যারিটাল রেপ’ আখ্যা দিয়ে ধর্ষণের আওতায় আনার সুপারিশ বাতিল করতে হবে। ৯. শর্তসাপেক্ষে ইসলাম বহুবিবাহ জায়েজ, তাই বহুবিবাহ বিলোপ করার প্রস্তাব বাতিল করতে হবে। ১০. বিয়ে বিচ্ছেদের সময় স্ত্রীর মোহরানা আদায়ের সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এটি বাতিল করতে হবে।
মানবন্ধনে আরও বক্তব্য দেন নারী অধিকার আন্দোলনের সহ সভানেত্রী ও লালমাটিয়া মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আফিফা মুশতারী, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান (অব.) অধ্যাপক ডা. নাঈমা মোয়াজ্জেম, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টর অব রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন্স দ্য গামবিয়ার অধ্যাপক ড. আফরোজা বুলবুল, নারী অধিকার আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক ও ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শারমিন ইসলাম, হিউম্যান রাইটসের ডেপুটি ডিরেক্টর ও নারী অধিকার আন্দোলনের সহ-সভানেত্রী সুফিয়া খাতুন এবং অ্যাডভোকেট ফাতেমা ইয়াসমিন মহুয়া। মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. সাবিহা সুলতানা।
মন্তব্য করুন