বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ধরন, প্রতীক বা জোট আলাদা হতে পারে; কিন্তু ভারতীয় আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানে কোনো আপসের সুযোগ নেই। ইনসাফভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সব ইসলামী শক্তিকে একটি যৌথ আদর্শিক প্ল্যাটফর্মে একত্র হতে হবে।
শনিবার (২১ জুন) দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মাসিক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন আগামী শুক্রবার (২৭ জুন) ‘মুসলিম ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে’ দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২৯ জুন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিকশা প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের সাক্ষাৎ গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার দিন নির্ধারিত হয়।
এদিন ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদের পরিচালনায় সভায় আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সমসাময়িক পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মামুনুল হক বলেন, ইরান ও অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ কেবল ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত নয়; এটি ইনসাফ বনাম দখলদারিত্বের একটি স্পষ্ট রূপ। ইরান যে সাহসিকতায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি আত্মমর্যাদাময় দৃষ্টান্ত। এটি কেবল ফিলিস্তিন নয়—সারা মুসলিম জাতির অস্তিত্ব ও আত্মরক্ষার লড়াই।
তিনি বলেন, ইসলামী বিশ্বের সব শক্তিকে এখন ঐক্যবদ্ধভাবে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে তাদের আকাশপথ ইসরাইলের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। এ মুহূর্তে দ্বিধাহীন ও আপসহীন ইনসাফের পক্ষে অবস্থান নেওয়া সময়ের জরুরি দাবি। জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ রোধে দেশের ইসলামী ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ন্যূনতম আদর্শিক ঐক্য অপরিহার্য। অতীতে আমরা যেভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থেকেছি, ভবিষ্যতেও সেই ঐক্য অটুট রাখতে হবে।
‘জুলাই সনদ’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘোষিত সম্ভাব্য জাতীয় ঐক্যরূপরেখা একটি জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে। তবে তাতে ইসলামপন্থিদের যথাযথ স্বীকৃতি ও অংশগ্রহণ না থাকলে প্রকৃত জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে না; বরং স্থিতিশীলতা আরও সংকটাপন্ন হবে।
আওয়ামী লীগের বিষয়ে তিনি বলেন, পরাজিত ও জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। এদের শাসনে দেশের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার এবং ইসলামপন্থিদের অস্তিত্ব বারবার লাঞ্ছিত হয়েছে। শাপলা-গণহত্যা, জুলাই-আগস্ট গণহত্যাসহ গুম-খুন, দমন-পীড়ন, সন্ত্রাস ও নির্বাচনী ব্যবস্থার ধ্বংসের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইউসুফ আশরাফ, রেজাউল করীম জালালী, মুফতি সাঈদ নূর, মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী, শাহীনুর পাশা চৌধুরী, কোরবান আলী কাসেমী, আব্দুল আজীজ, মুফতি শরাফত হোসাইন, তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, শরীফ সাইদুর রহমান, আজিজুর রহমান হেলাল, এনামুল হক মূসা, আবুল হাসানাত জালালী, মুহাম্মদ ফয়সাল, আবু সাঈদ নোমান, মুফতি ওজায়ের আমীন, নিয়ামতুল্লাহ, মুহসিনুল হাসান, জহিরুল ইসলাম, ফজলুর রহমান, হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া, রুহুল আমীন খান, শরীফ হোসাইন, হাসান জুনাইদ, জসিম উদ্দীন, হোসাইন আহমদ, আব্দুন নুর, আব্দুস সোবহান, মুহসিন উদ্দীন বেলালী, আব্দুল মুমিন, মামুনুর রশীদ, লিয়াকত হোসাইন, আমজাদ হুসাইন, মঈনুল ইসলাম খন্দকার, মুফতি আজিজুল হক, হাফেজ শহীদুল ইসলাম, ওয়ালিউল্লাহ, আনোয়ার মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী, রেজাউল করিম, ছানাউল্লাহ আমিনী, আনোয়ার হোসাইন রাজী, রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন